Mahfuzur Rahman Manik
'হাসি'র সংস্কৃতি
সেপ্টেম্বর 20, 2017

দুই ঠোঁট আর চোখের কারসাজিতে প্রকাশ পায় হাসি। সাধারণভাবে হাসি আনন্দের বহিঃপ্রকাশ হলেও নানা কারণে মানুষ হাসতে পারে। অনেকে বলেন, সুস্থতার টনিক হলো হাসি। হাসার পক্ষে বৈজ্ঞানিক যুক্তিরও অভাব নেই। হাসিখুশি থাকলে নাকি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, রক্তপ্রবাহে বেড়ে যায় ভাইরাস-রোধী কোষের সংখ্যা। এতে ভাইরাসজনিত রোগ থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে থাইল্যান্ডের মানুষদের হাসার রহস্য অবশ্য আরেকটু গভীরে। ১৫ সেপ্টেম্বর বিবিসিতে প্রকাশিত 'হোয়াই থাই পিপল লাভ টু লাফ' শিরোনামের প্রতিবেদনে থাইল্যান্ডের মানুষের হাসার রহস্য উঠে আসে। তারা যখন কোনো অনাকাগ্ধিক্ষত পরিস্থিতির সম্মুখীন, তখনও হাসে। যুক্তি হলো, তারা খারাপ পরিস্থিতিকেও ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে।
বিবিসির খবরে প্রতিবেদক থাইল্যান্ডের এক লেখক ও চিত্র পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলছেন, থাইল্যান্ডের মানুষ হাসিখুশি থাকে, পরস্পর কথাবার্তায় তারা নেতিবাচক বিষয় পরিহার করে, কোনো সমস্যার বিষয়ও তারা সচরাচর উল্লেখ করে না। এমনকি নেতিবাচক কোনো বিষয়কে কীভাবে ইতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করবে, সে চেষ্টাই করে। ধরা যাক বন্যা চলছে। এ সময় তারা মানুষের আনন্দের জন্য নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
ইন্টারনেট ঘেঁটে আরও কিছু বিষয় জানা গেল। থাইল্যান্ডের মানুষ দুঃখের যে কোনো বিষয়ই এড়িয়ে থাকতে চায়। একজন উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, তাদের এক ক্লাসমেট মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেল। অথচ সেখানে তেমন কোনো ভিড় নেই। তা নিয়ে তেমন মাতামাতিও নেই। তার প্রচার নেই। একে স্বাভাবিক জীবনের অংশ হিসেবেই তারা দেখছে। তাদের পরামর্শ- কোনো বিষয় নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। অধিক চিন্তা বরং বিরক্তিকর চাপের জন্ম দেয়।
হাসি-ঠাট্টাই যখন থাইল্যান্ডের সংস্কৃতি তখন সে ধরনের চিত্রই তারা টিভির পর্দায় দেখতে চায়। এ নিয়ে পরিচালকরা পড়েন বিড়ম্বনায়। হয়তো কোনো চলচ্চিত্রে দেখা যাচ্ছে দু'জন মারামারি করছে; কিন্তু উভয়েই হাসছে। হয়তো খাচ্ছে কিন্তু মুখে হাসি লেগেই আছে। থাইল্যান্ডের অধিকাংশ ছবির পোস্টারেই দেখা যাবে হাসির চিত্র।
আমরা বাঙালিরা অবশ্য হাসি-কাম্না উভয়েই সিদ্ধহস্ত। 'হাসতে নাকি জানে না কেউ/ কে বলেছে ভাই?' ছড়াটি অন্তত হাসির ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছে। আমরা মুহূর্তে হাসতে পারি আবার কাঁদতেও পারি। হাসি-কাম্না তো জীবনেরই অংশ। সুখের সঙ্গে যেমন দুঃখ রয়েছে, তেমনি হাসির সঙ্গে কাম্না। উভয় পরিস্থিতিই জীবনের স্বাভাবিক প্রকাশ। কেবল হাসি আর শুধু কাম্না অস্বাভাবিক। থাইল্যান্ডের ব্যাপারে চলচ্চিত্র পরিচালক এ উপলব্ধিই করেছেন যে, আসলে তাদের বিষয়টি অতিরঞ্জন। হাসির বিষয়গুলোতে সবাই হাসবে, আবার দুঃখের বিষয়ে কাঁদবে- এটাই তো স্বাভাবিক।
বলা বাহুল্য, হাসির কথাই বেশি বলা হয়। হাসি-খুশি থাকলে মন ভালো থাকে। প্রাণ খুলে হাসলে মন ভালো হয়। মন খারাপ করে থাকা কিংবা সারাক্ষণ গোমড়ামুখে থাকা মানুষ পছন্দ করে না। অনেকে তো বলেন, বিপদে যে হাসতে পারে, সে-ই তো বীর পুরুষ। এখানে যদিও হাসি রূপকার্থে। হাসতে হাসতে ভালো কাজ উত্তম। অন্যদিকে হাসতে হাসতে খারাপ কাজ নিন্দনীয়। কৃত্রিম হাসি কিংবা কৃত্রিম কাম্না, কোনোটাই ভালো নয়। থাইল্যান্ডের মানুষ তাদের সংস্কৃতিগতভাবেই হাসিকে গ্রহণ করেছে। এটা তাদের গুণ। হাসির শিক্ষাটা আমরা তাদের কাছ থেকেই নিতে পারি।

ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।