Mahfuzur Rahman Manik
টাইপরাইটারের আসা যাওয়া
আগস্ট 13, 2017
রাশিয়া তথ্য ফাঁস ঠেকাতে কম্পিউটারের পরিবর্তে টাইপরাইটার ব্যবহার করছে!

সময়ের পরিবর্তনে কত কিছুই না হারিয়ে যায়। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় নতুনের আগমন পুরাতনকে বিদায় জানায়। ডিজিটাল দুনিয়ায় আজ অ্যানালগ প্রায় অচল। টাইপরাইটার যার অন্যতম উদাহরণ। কম্পিউটারের আগমনে এক সময়ের জনপ্রিয় টাইপরাইটার আজ বিলুপ্তির পথে। ৯ আগস্ট বুধবার বিবিসির প্রতিবেদনে ভারতের অবস্থা উঠে আসে। 'দ্য স্যাড ডিক্লাইন অব দি ইন্ডিয়ান টাইপরাইটার' শিরোনামে ভারতীয় টাইপরাইটারের দুঃখজনক হারিয়ে যাওয়ার গল্প ফুটে ওঠে। তাতে দেখানো হয়, টাইপরাইটাইরের সঙ্গে জড়িত টাইপিস্ট বা মুদ্রাক্ষরিকরা তাদের পেশা নিয়ে শঙ্কিত। প্রতিবেদনে ভারতে ৮৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এক টাইপরাইটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কথা উঠে এসেছে। শুরুতে তাদের ১০০টি টাইপরাইটার ছিল, এখন সেখানে ৪৫টি রাইপরাইটারে ১০০ জনের মতো প্রশিক্ষণার্থী কাজ শিখছেন। দিন দিন সংখ্যাটি আরও কমছে। কারণ, সব অফিসে এখন টাইপরাইটারের জায়গা দখল করে নিয়েছে কম্পিউটার। টাইপরাইটার যাও আছে তাদের অধিকাংশই কাজ করে আদালতের বাইরে, মানুষ কোনো আইনি ডকুমেন্ট টাইপ করায়। সেখানেও তাদের কাজ অনেক কমে গেছে। অথচ ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন, টাইপরাইটার তাদের শিল্পায়নের প্রতীক। সে ভারতে ২০০৯ সালে টাইপরাইটার প্রতিষ্ঠান গোদরেজ বন্ধ হয়ে যায়। যন্ত্রটির প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে শেষ পর্যন্ত বিশ্বে টিকে ছিল নাকি এই 'গোদরেজ অ্যান্ড বয়েস'।
আমাদের দেশেও টাইপরাইটারের অবস্থা বলা চলে ভারতের মতোই। আদালতপাড়া এক সময় টাইপরাইটারের খটখট শব্দে ছিল মুখর, এখন সেটা কমে গেছে। অনেকেই পেশা বদল করেছেন। যারা এখনও টাইপরাইটার নিয়ে আছেন, তারা বেশি কাজ পাচ্ছেন না। অলস বসে সময় পার করেন অনেকেই। কোনোদিন কাজ হয়, আবার কখনও সারাদিন বসেও কাজ পান না। অবশ্য সরকারি অফিসে এখনও সাঁটলিপি ও মুদ্রাক্ষরিকের পদ রয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এ যন্ত্র এখন আর নেই।
নতুন প্রজন্ম টাইপরাইটারের দাপট দেখেনি। দেখেছে কম্পিউটার, ল্যাপটপ। টাইপরাইটার ইতিহাস হিসেবে পড়ছে বা পড়বে। জাদুঘরেও তা দেখা যাবে। ব্রিটেন ২০১২ সালে শেষ টাইপরাইটার তৈরি করে লন্ডনের বিজ্ঞান জাদুঘরকে দেয়। তবে এটি অনেকের জন্য নস্টালজিয়া হবে। আজ আমরা সংবাদপত্রে কম্পিউটার-ল্যাপটপ দেখছি। এক সময় টাইপরাইটারের মাধ্যমেই সংবাদপত্র ছাপা হতো। এ যন্ত্রটির কাজে যারা অভিজ্ঞ তারা বলছেন, কম্পিউটারের টাইপ থেকে টাইপ মেশিনের ছাপা অনেক টেকসই। দুইশ' বছর পরেও নাকি টাইপ মেশিনের টাইপ অবিকল থাকবে; কিন্তু কম্পিউটারে করা টাইপ ঠিক থাকবে না।
টাইপরাইটার ১৮৬০ সালে আবিষ্কৃত হয়, তখন থেকেই পৃথিবীর লিখন ও দলিল-পদ্ধতি সংরক্ষণে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। এখন একে অধুনালুপ্ত বলা হলেও আসলেই কি টাইপরাইটার হারিয়ে গেছে? আসলে, না। বরং বলা যায় তার উন্নততর সংস্করণই আমরা পেয়েছি। কারণ আজকের কম্পিউটারের কি-বোর্ডের নকশা কিন্তু টাইপরাইটার থেকেই নেওয়া। টাইপরাইটার হচ্ছে কম্পিউটার চালানোর প্রথম ধাপ।
বলা বাহুল্য, টাইপরাইটার বরং কোথাও কোথাও ফিরে আসছে! ২০১৩ সালের একটি খবর হলো, রাশিয়া তথ্য ফাঁস ঠেকাতে কম্পিউটারের পরিবর্তে টাইপরাইটার ব্যবহার করছে। তখন উইকিলিকস ও সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেন মার্কিন সরকারের গোপন তথ্য ফাঁস করে, তারই প্রেক্ষিতে তথ্য ফাঁস ঠেকাতে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রাসাদ ক্রেমলিনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সংস্থা এফএসও টাইপরাইটার কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়। খবরটি চমকপ্রদ। কম্পিউটার থেকে যেখানে তথ্য চুরি হওয়া সহজ সেখানে টাইপরাইটারের হার্ড কপি কিছুটা নিরাপদ বটে। তবে তা যে কাগজের স্তূপ বাড়াবে তাতে সন্দেহ নেই। যন্ত্রটির সীমাবদ্ধতা এখানেও।
তারপরও টাইপরাইটার থাকবে কম্পিউটারের মাঝেই। আর শত বছরের বই, সাময়িকী, পত্রপত্রিকাও যে যন্ত্রটির জীবন্ত সাক্ষী।

 

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।