সাক্ষাৎকার: আবেদ চৌধুরী
জিনবিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী বৈশ্বিক বায়োটেকনোলজি কোম্পানি জেনােফ্যাক্সের কো-ফাউন্ডার ও প্রধান বিজ্ঞানী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং ফ্রান্সের ইকোল নরমাল সুপিরিয়রে শিক্ষকতা ও গবেষণা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অরিগন স্টেট ইনস্টিটিউট অব মলিকুলার বায়োলজি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী আবেদ চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘মানুষের জিন, জিনের মানুষ’, ‘অনুভবের নীলনকশা’, ‘শৈবাল ও অন্তরীক্ষ’, ‘দূর্বাশিশির ও পর্বতমালা’। তিনি ১৯৫৬ সালে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কানিহাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন সমকালের জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মানিক।
সমকাল: কৃষি ও কৃষক নিয়ে আপনার কাজ। বাংলাদেশের নতুন বাস্তবতায় তাদের জন্য আপনার ভাবনা কী?
আবেদ চৌধুরী: আমাদের কৃষি ৮৭ হাজার গ্রামকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়। কিন্তু সেই গ্রাম ঐতিহাসিকভাবেই তেমন গুরুত্ব পায়নি। বাংলা সাহিত্যেও অজপাড়াগাঁ তথা অবহেলিত হিসেবেই দেখানো হয়েছে। আমাদের গ্রামের ছবি ড্রয়িংরুমে শোভা পেলেও হৃদয়ে আসেনি। দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। অথচ রাজনীতির দায়িত্বশীল পর্যায়ে তাদের স্থান নেই। এ জন্য রাজনীতিতে কৃষকদের গুরুত্ব নেই। বিদেশি রেমিট্যান্সে আমাদের এত গুরুত্ব। প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠায় বছরে ২৪ বিলিয়ন ডলার। অথচ কৃষক খাদ্য উৎপাদন করে ৪০ বিলিয়ন ডলারের। বিদেশিদের থেকে ১-২ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার জন্য আমরা কত ধরনা ধরি! অথচ কৃষক উপেক্ষিত। কৃষকদের নিয়ে রাজধানীতে আলোচনা হলেও তাদের প্রতিনিধিত্ব থাকে না। কৃষিকেন্দ্রিক মানুষদের পরিবর্তন দরকার।
সমকাল: পরিবর্তনের জন্য কী করণীয়?
আবেদ চৌধুরী: কৃষকদের নিয়ে আলাদা রাজনৈতিক দল গঠন হওয়া উচিত। শেরেবাংলার কৃষক প্রজা পার্টির মতো।
সমকাল: কে গঠন করবে সে পার্টি?
আবেদ চৌধুরী: যে কেউ করতে পারে। আমিও করতে পারি। ছাত্র ও কৃষকদের সম্মিলনে একটি কৃষকবান্ধব দল গঠিত হতে পারে। ইউরোপীয় গ্রিন পার্টির আদলে ‘ফারমার্স গ্রিন পার্টি’ হবে। মূল কথা, বাংলাদেশে এ রকম একটা দলের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।
সমকাল: কৃষকদের নিয়ে আলাদা দল করতে হবে কেন? প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোরই তো কৃষক সংগঠন আছে।
আবেদ চৌধুরী: দেখুন, কৃষকরা দীর্ঘ অবহেলার শিকার। তাদের হৃদয়ে গ্রহণ করা জরুরি। তাদের অগ্রাধিকার না দেওয়ার কারণে অনেকেই অসচেতন হয়ে থাকতে পারে। সে জন্য তাদের সামনে নিয়ে আসা দরকার। মওলানা ভাসানী ছাড়া কেউই কৃষককে তেমন গুরুত্ব দেননি। আওয়ামী লীগ বা বিএনপির কৃষক লীগ বা কৃষক দল আছে বটে, সেখানে নেতৃত্ব দেয় স্যুটেড-বুটেড লোক। কৃষি ও কৃষকের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। দেখুন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসও ক্ষমতায় এসে কৃষকের সঙ্গে বসেননি।
সমকাল: আপনিও তো এক অর্থে স্যুটেড-বুটেড লোক।
আবেদ চৌধুরী: আমি কৃষকের একেবারে কাছাকাছি থাকি। তাদের সঙ্গে কাজ করি। কৃষকের উঠান-বারান্দায় বসি। আমাদের পরিবারও কৃষি নিয়ে আছে। পঞ্চাশের দশকে সবাই শহরে চলে এলেও আমার পরিবার আসেনি। তবে হ্যাঁ, এক নিমেষেই কৃষকরা এসে হয়তো জনসমাবেশে বক্তৃতা করতে পারবে না। কিন্তু আমরা সবাই তো কৃষকের সন্তান বা কৃষকের নাতি। ইংরেজিতে একটা কথা আছে–এলিফ্যান্ট ইন দ্য রুম। অর্থাৎ সমস্যা আমাদের সামনেই, অথচ সেটা নিয়ে কথা বলছি না। যেন আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আমাদের ৫৬ হাজার বর্গমাইল ভূমির বেশির ভাগই তারা চাষ করে। ভোটারের কথা চিন্তা করেন, তারাই মেজরিটি। তারা যদি বলে– কৃষককেই কেবল ভোট দেব, তবে কী করবেন? মওলানা ভাসানীকে আমরা দেখেছি, লুঙ্গি ও ফতুয়া পরে থাকতে সব সময়।
সমকাল: আপনি বিদেশে থাকেন। বিদেশে থেকে কি কৃষকের রাজনীতি সম্ভব?
আবেদ চৌধুরী: আমি বিদেশে থাকলেও প্রায় প্রতি মাসেই দেশে আসি। দেশে আমার কাজের জন্য আসতেই হয়। আমি যদি কৃষকদের নিয়ে রাজনীতি করি, সেই পরিবেশ পাই, তবে একেবারে দেশে চলে আসব। আমি সবাইকে অনুপ্রাণিত করছি– কৃষকদের জন্য একটা দল হওয়া জরুরি। আমি কতটা পারব জানি না, কারণ আমি বিজ্ঞানের লোক। আমি দেখছি, রাজনীতির বাইরে থেকে মিনমিন করে এসব বলে আসলে লাভ হয় না। এতদিন রাজনীতির কথা বলতে পারিনি। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান আমাকে সেই প্রেরণা দিয়েছে। এর আগে ব্যক্তিগতভাবে যখন বলেছি, গ্রাম থেকে আমাকে ই-মেইল করে বলা হয়েছে, রাজনীতি করতে চাইলে দেশের গারদে ঢুকতে হবে। আমরা দেখেছি, ড. ইউনূসের সঙ্গে কী আচরণ করা হয়েছে। দৃকের শহিদুল আলমকে জেলে ঢোকানো হয়েছে। সে জন্য বলিনি। আমি বিদেশে থাকি, তাহলে কেন আমি এ ঝামেলায় জড়াব? এখন আমি সেই পরিবেশ দেখতে পাচ্ছি।
সমকাল: মূল বিষয় তো কৃষের সুফলপ্রাপ্তি। রাজনেতিক দল গঠন হলে মধ্যস্বত্বভোগী দূর হবে?
আবেদ চৌধুরী: হ্যাঁ। এটা কৃষকের বড় সমস্যা। যেই ফর্মুলায় কৃষক চলছে, তাতে কৃষক আরও দরিদ্র হচ্ছে। অথচ লাভ নিয়ে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। আমরা কৃষক থেকে সরাসরি পণ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করব। কৃষক থেকে সরাসরি পণ্য বাজারে না আসার কারণে কৃষকের পাশাপাশি ভোক্তাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষিপণ্য বাজারীকরণের এই সংকট থেকে বর্তমান সরকার কৃষকদের উদ্ধার করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।
সমকাল: কৃষি নিয়ে আপনার কাজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। আপনার পঞ্চব্রীহি ধানে পাঁচবার ফলন সাড়া জাগিয়েছে। এ ধান সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যাশা আপনার অনেক দিনের। এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা কী?
আবেদ চৌধুরী: আগের সরকারের সময়ে ব্রি তথা বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমাকে বাধা দিয়েছে। তারা বলেছে, আমার ভ্যারাইটি হয়নি। তারা ভুয়া তথ্য দিয়ে সেটা অনুমোদন দেয়নি। এখন আমি মনে করি, এ বাধা দূর হয়েছে।
সমকাল: যতদূর জানি, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে আপনার পরিচয় রয়েছে। এখন কি প্রত্যাশা পূরণ হতে পারে?
আবেদ চৌধুরী: ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমার কাজ সম্পর্কে জানেন এবং ২০২২ সালে তিনি একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারের জন্য আমাকে রিকমেন্ড করেছিলেন। এখন সরকার চাইলে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। পঞ্চব্রীহি ধানে বছরে পাঁচবার ফলন এটা বাস্তবতা, যেটা আমি করে দেখিয়েছি। ছড়িয়ে দিতে গিয়ে এই ধান নিয়ে আমি ব্যবসা করতে চাই না। এমন নয়, আমরা অনেক টাকা পাব কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বীজের দাম বাড়িয়ে দেব। এই মুহূর্তে হাইব্রিড বীজের দাম ৫০০ টাকা প্রতি কিলো, অথচ ভালো বীজের দাম ৫০ টাকা কিলো। অর্থাৎ ১০ গুণ দামে বীজ বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হাইব্রিড বীজ যদি বিক্রি করতে হয়, তবে কৃষকরা করুক। আমি সেটা করে দিতে পারি। এই মুহূর্তে হাইব্রিড বীজ সম্পূর্ণ আমদানি করতে হচ্ছে।
সমকাল: বর্তমান সরকার এ ক্ষেত্রে কী করতে পারে?
আবেদ চৌধুরী: হাইব্রিডকে বিদেশনির্ভরতামুক্ত করতে হবে। কিন্তু সেটা কে করবে? বর্তমান সরকার কৃষিকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, জানি না। কৃষি আলাদা উপদেষ্টা পাওয়ার দাবিদার হলেও একে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত করেছে। সেখানে আলাদা বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা নিয়োগ করা দরকার। আমি বিষয়টি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকেও পাবলিকলি লিখেছি।
সমকাল: হাইব্রিড আমদানি বন্ধ করে যদি আপনার পঞ্চব্রীহির প্রচলন সারাদেশে করা হয়, তাতে খরচ কেমন পড়বে?
আবেদ চৌধুরী: পঞ্চব্রীহি আমি আমাদের এলাকায় উৎপাদন করছি। সারাদেশে তথা ৮৭ হাজার গ্রামে পৌঁছাতে খুব বেশি খরচ পড়বে না। নীতিগত সিদ্ধান্ত এ ক্ষেত্রে জরুরি। খুব বেশি না, ৩ কোটি টাকা দিলেই এটা ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। ফলে আমাদের কৃষির উৎপাদনও অনেক বেড়ে যাবে। এমনিতেই আমাদের কৃষির উৎপাদন যা, তার চেয়ে আরও বেশি দেখানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। একদিকে বলা হতো, আমরা উৎপাদনে বিশ্বের বিস্ময়। আরেকদিকে আমদানিও করতে হয়। এটা হবে কেন?
সমকাল: পঞ্চব্রীহি আপনার গ্রামের বাইরে কতদূর ছড়িয়েছে?
আবেদ চৌধুরী: পঞ্চব্রীহির কয়েকটি ধরন আমার গ্রামে হচ্ছে। এটি এখনও গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে। তবে আগামী বছর আরও ছড়িয়ে যাবে। আমি এ বীজ ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এতদিন দেশে কৃষি বিভাগ থেকে তেমন সহযোগিতা না পেলেও বিদেশে তহবিল সংগ্রহ করে এ লক্ষ্যে কাজ করছি। বীজটি কৃষকের দ্বারে দ্বারে পৌঁছানোর চ্যালেঞ্জ আমি গ্রহণ করতে চাই। এ বীজটি ছড়িয়ে দেওয়ার একটা মেকানিজম আছে। শুধু বীজ দিলেই হবে না। এখানে সার প্রয়োজন, বিশেষ স্প্রে করা প্রয়োজন। ইরিগেশন আছে। সব মিলিয়ে পঞ্চব্রীহির একটা ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।
সমকাল: পঞ্চব্রীহি সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলছেন। পুরো দেশে কি সেই পরিবেশ-পরিস্থিতি আছে?
আবেদ চৌধুরী: পরিবেশ-পরিস্থিতি আছে। কিন্তু সরকারের কৃষি বিভাগ এগিয়ে এলে এটা খুব সহজ। অথচ কৃষি বিভাগকেই আমি বোঝাতে পারিনি।
সমকাল: কেন?
আবেদ চৌধুরী: আমার ধারণা, হয়তো বীজ কোম্পানির সঙ্গে সরকারের কৃষি বিভাগের কোনো যুক্ততা আছে। তাদের ব্যবসার দিকে নজর বেশি। তাদের আমার কৃষিবান্ধব মনে হয়নি। অথচ আমার ব্যবসা করার কোনো ইচ্ছা নেই। চ্যারিটি মডেলে অলাভজনকভাবে পঞ্চব্রীহি ছড়িয়ে পড়ুক। সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই আমি এটা চাই। আমার মা আমাকে বলেছিলেন, গরিবের জন্য কিছু করো। সে জন্যই আমি কৃষকদের কল্যাণে রাজনীতি করতে চাই।
সমকাল: আপনার কৃষিকাজ কি অন্যভাবেও আমাদের লাভবান করতে পারে?
আবেদ চৌধুরী: জ্বালানি আমাদের একটা বড় সমস্যা। আমাদের ধান থেকে যে খড় হয়, সেটা দিয়েও এক ধরনের ‘বায়োএনার্জি’ তৈরি হতে পারে। কোটি কোটি টন খড় দেশে উৎপাদিত হয়। এর কিছুটা গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহার হয়। বাকিটা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা যেতে পারে। বিদেশে দ্রুত বাড়ে এমন ঘাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। এমন বিকল্প বায়োএনার্জি কৃষির মাধ্যমে পাওয়া যেতে পারে। তাতে দেশের জ্বালানি সংকটের কিছুটা হলেও সমাধান হতে পারে। গ্রামে গ্রামে যারা উদ্যোগ নিয়ে স্টার্টআপের মাধ্যমে এ কাজ করতে চায়, তাতে অর্থায়নের ব্যবস্থা করা উচিত।
সমকাল: জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের বড় সমস্যা। আপনার আবিষ্কার জলবায়ু অভিযোজনে কতটা সহায়ক?
আবেদ চৌধুরী: পঞ্চব্রীহি ধানের শিকড় অনেক বড় থাকে। এটি কার্বন নিঃসরণ কমাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি মিথেন কমে যাওয়ার বিষয়টিও আমাদের মাথায় আছে। জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজনের জন্য আমরা বিশ্বের কাছে তহবিল চাইছি। কিন্তু মিটিগেশনের জন্য আমরা নিজেদের বিজ্ঞানীদের নিয়েও চমৎকার কাজ করতে পারি। এখানে ফান্ডিং জরুরি। এ ব্যাপারে আমি নিজেও ব্যাংকসহ বিভিন্ন জায়গায় চেষ্টা করেছি, কিন্তু তেমন সাড়া পাইনি। ব্যাংকের সিএসআরের অর্থ নামে প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে চলে যায়। অথচ ৫০ লাখ টাকা হলেই অনেক কাজ করা সম্ভব হতো।
সমকাল: এক সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছিলেন, কবি হলে আপনি আরও বেশি সমাদৃত হতেন।
আবেদ চৌধুরী: এটাই আসলে বাস্তবতা। হ্যাঁ, এখানে বিজ্ঞানীদের চেয়ে কবি, বুদ্ধিজীবীদের সমাদর বেশি। যে ধানের হিল্লোল দেখে কবিরা কবিতা লেখেন, সেই কবির মূল্য আছে। অথচ ধান উৎপাদনকারীদের মূল্য নেই। ছোটবেলায় যখন কবিতা লিখতাম অনেক বাহবা পেয়েছি। সেই তুলনায় আমার কৃষি আবিষ্কার নিয়ে আরও আলোচনা হতে পারত।
সমকাল: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কৃষি ও পরিবেশের অগ্রাধিকার কী হওয়া উচিত?
আবেদ চৌধুরী: ইতোমধ্যে আমি যথাযথ কৃষি উপদেষ্টা নিয়োগের কথা বলেছি। আমাদের পরিবেশের নানা সংকট। নদীগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশকেন্দ্রিক সংকট চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। তা ছাড়া আমি মনে করি, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ দরকার। কৃষককে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। প্রথমেই কৃষকের জাগরণ দরকার। কৃষকরা গ্রামে থাকে অথচ সবকিছু শহরকেন্দ্রিক। গ্রাম-শহরের এই ব্যবধান ঘোচাতে হবে। কৃষকের ভোটের ভ্যালু আছে। এটা সবাইকে বুঝতে হবে। কৃষক যখন জাগ্রত হয়ে যাবে, তখন তারা ভোটের অস্ত্র বুঝতে পারবে; আমাদের সমাজের বৈষম্য দূর করতে হবে। জনগণের কথা আমরা সবাই বলি। জনগণ কিন্তু এই কৃষক। তাদের গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। ক্ষমতা ও অর্থের প্রতি আমার আগ্রহ নেই। তবে কৃষকের জাগরণটা আমি চাই।
সমকাল: সর্বশেষ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আপনার প্রত্যাশার কথা যদি বলেন।
আবেদ চৌধুরী: অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীকে বলব, একটি জাতীয় সরকার গঠন করুন। মানুষ এটি চাইছে। বিএনপি-জামায়াত আওয়াজ দিচ্ছে। এভাবে সবার ইচ্ছার প্রতিফলন যাতে ওই জাতীয় সরকারে থাকে। তিন থেকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে হলে জনগণের ম্যান্ডেট নিতে হবে। ম্যান্ডেট না নিলে সংকট বাড়বে। দক্ষিণ আফ্রিকায় নেলসন ম্যান্ডেলা ‘ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন’ করেছিলেন। এমন একটি কমিশন গঠন করলে ভিন্নমতসহ সবাই সেখানে এসে সত্য কথা বলবে এবং রাজনৈতিক সমঝোতা হবে। এমন রাজনৈতিক সমঝোতা এখন দ্রুত দরকার।
সমকাল: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আবেদ চৌধুরী: আপনাকেও ধন্যবাদ। সমকালের জন্য শুভকামনা।