Mahfuzur Rahman Manik
সংখ্যালঘুর সুরক্ষা সবার কর্তব্য
আগস্ট 18, 2024

শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবি যেভাবে পূরণ হয়েছে, সেটা অভাবনীয়। ছাত্র-জনতা, তাই তাদের বিজয় এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান উদযাপন করছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সোমবার সন্ধ্যা থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিশেষত হিন্দুদের ওপর আক্রমণের খবর আসছে। অবশ্য একই সঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানও দেখা গেছে। সম্ভবত এরই পরিপ্রেক্ষিতে কিছু স্থানে সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, ধর্মীয় উপাসনালয় সুরক্ষায় শিক্ষার্থীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের পাহারাও দেখা গেছে।

মঙ্গলবার অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুসারে, দেশের ২৯টি জেলায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। এর মধ্যে চার জেলায় ৯টি মন্দিরে হামলার কথা তারা বলেছে। দুঃখজনকভাবে, দেশে যে কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা বা পট পরিবর্তনে বিভিন্ন ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু মানুষের ওপর, বিশেষত হিন্দুদের ওপর হামলা যেন প্রায় নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক ধ্যান-ধারণাপুষ্ট জনগোষ্ঠীর দায় যেমন আছে, তেমনি রাষ্ট্রেরও দায় কম নয়। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত দেশে এ ধরনের যত হামলা হয়েছে, তার একটিরও বিচার হয়নি। ফলে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির আস্ফালন দিন দিন বেড়েছে। আমরা জানি, আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত একটা হিন্দুপ্রধান দেশ; এখানে হিন্দুদের ওপর যে কোনো হামলার প্রতিক্রিয়া দিল্লি এমনকি ভারতের জনসমাজে হয়। তাই হতে পারে, সুযোগ সন্ধানীরা সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। সংখ্যালঘুর সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয় উদাসীনতার কারণেই যে ওই অপশক্তি এমন দুর্বৃত্তপনার সুযোগ পায়, তা বলা বাহুল্য।
দেশটা যেমন মুসলমানদের, তেমনি অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ও নৃগোষ্ঠীরও। সংবিধান অনুসারে, নাগরিক হিসেবে সবাই সমান। শুধু ধর্ম পালন নয়, জীবনের সর্বক্ষেত্রে সংবিধান সব ধর্মের মানুষকে সমান অধিকার দিয়েছে। এ অধিকার থেকে নিছক তার ধর্মীয়, নৃতাত্ত্বিক, লৈঙ্গিক বা জন্মস্থানের কারণে কাউকে বঞ্চিত করা অপরাধ। সমস্যা হলো, এ বিষয়ে আমরা রাষ্ট্রকে যেমন যথেষ্ট দায়িত্বশীল করে গড়ে তুলতে পরিনি, তেমনি প্রয়োজনীয় জনসচেতনতাও তৈরি করতে পারিনি। এ কারণেই আমরা বারবার ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যলঘুর ওপর হামলার ঘটনা ঘটতে দেখি।

দীর্ঘদিনের দুঃশাসন মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে বলেই  সব শ্রেণি-পেশা-ধর্মের মানুষ ছাত্রদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে রাস্তায় নেমে এসেছিল। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের শক্তি বলে যে কথা আমরা শুনে এসেছিলাম, গণঅভ্যুত্থানের যেই গল্প আমরা পড়ে এসেছি, সেটাই দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছে। এ বিজয় এত সহজে আসেনি, যেখানে অল্প সময়ের ব্যবধানে চার শতাধিক প্রাণহানি হয়েছে। এমন অর্জন যেসব কারণে কালিমালিপ্ত হতে পারে, তার মধ্যে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন অন্যতম। তাদের ওপর সারাদেশে একটা হামলা হলেও তার পরিণাম অনেক ভারী হতে পারে।
অসাম্প্রদায়িক চেতনা, সাম্য মৈত্রী ও ঐক্য সুন্দর সমাজ গঠনের জন্য অপরিহার্য। দেশের অধিকাংশ মানুষই শান্তির সেই সমাজ গঠনের প্রত্যাশী। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীরা যেন কোনো অবস্থায়ই সুযোগ না পায়– তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সবার। এই সময়টায় দেশ একটি রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এবারের ছাত্রদের জাগরণ আগামী প্রজন্মের প্রতি উজ্জ্বল বাংলাদেশের বার্তা দিচ্ছে। কেবল এই সময়েই নয়; সংখ্যালঘু ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর অধিকার যেন সুরক্ষিত থাকে, সে জন্য সবসময় সোচ্চার হতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রতিবেশীদের দায়িত্ব সর্বাগ্রে। পাশাপাশি আমরা এমন সরকার চাই, যারা সংখ্যালঘুদের অধিকার ও সুরক্ষায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সমকালে প্রকাশ: ৭ আগস্ট ২০২৪

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।