Mahfuzur Rahman Manik
আনন্দ কেনা যায়!
অক্টোবর 23, 2016

চাকার গল্পের শেষ নেই। শেষ নেই মানুষের জীবনের গল্পও। চাকা বিচিত্র, মানুষও। রিকশা আর গাড়ির চাকা এক না হলেও উভয়টিই চাকা। মানুষ জীবনের প্রয়োজনে নানা কাজ করে। কেউ হয়তো বিরাট করপোরেট কর্মকর্তা আর কেউ রাস্তার পাশের দোকানদার। গুরুত্বের দিক থেকে কেউই কম নয়। যদিও সমাজে মানুষ একে অপরকে নানাভাবে মূল্যায়ন করে। সামাজিক বেড়াজালে আবদ্ধ হয়েই অনেককে অনেক কিছু মেনে নিতে হয়। কেউ কেউ আবার অনেক কিছুরই ধার ধারেন না। তবে চাকা নিজে যে মানুষের জীবনেরও গল্প তৈরি করে তার উদাহরণ এক রিকশাচালকই। যার চাকা টাকা আনে। চাকা ঘুরলেই তো তার বাড়িতে চাল আসে, পরিবার নিয়ে জীবন কাটাতে পারেন। শুক্রবার ২১ অক্টোবর ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া এমনই এক গল্প জানিয়েছে আমাদের। যে গল্পের নায়ক যেমন ব্যক্তি তেমনি বলা চলে তার চাকা। পত্রিকাটির ব্লগ সেকশনে ব্লগার 'টিম সোশ্যাল' সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে মুম্বাইয়ের এক অটোরিকশা চালকের ঘটনা শেয়ার করেছে, যিনি হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের চাকরি ছেড়ে দিয়ে অটোরিকশা চালাচ্ছেন! ইউনিলিভারের মতো করপোরেট প্রতিষ্ঠানে মাস্টার্স পাস এ ব্যক্তির কাজ করতে কোনো সমস্যাই হচ্ছিল না। সমস্যা একটাই, ৫-৯টায় অফিস করা তার একঘেয়ে লাগছিল। একদিন সিদ্ধান্ত নিয়ে চাকরিই ছেড়ে দেন। তার শখ নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, ফটোগ্রাফি করা। তাই অটোরিকশা কিনেছেন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য। অটোরিকশা চালান, মানুষের সঙ্গে কথা বলেন আর তাদের ছবি তোলেন- এ কাজ করেই তিনি কি-না ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করলেন।
ফটোগ্রাফির সুবাদে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার সুযোগ পান। পুরস্কারও পান। কিন্তু যখনই মানুষ তার পেশা জিজ্ঞেস করে তিনি গর্বভরে মুম্বাইয়ে অটোরিকশা চালানোর কথা বলেন। তার এমএসসি ডিগ্রি আর সাবলীল ইংরেজি কথা শুনে সবাই যখন বিস্মিত তখন বলেন, এতেই তিনি আনন্দিত। আসলে আনন্দ তো টাকায় কেনা যায় না!
বলা বাহুল্য, ফেসবুকে এ ঘটনা দুই হাজারের ওপর শেয়ার হয়েছে। লাইক পড়েছে পনেরো হাজারের মতো। আসলে প্রত্যেক মানুষই ভিন্ন। একেকজনের শখও একেকরকম। ব্যক্তি তার পছন্দের কাজটি স্বাধীনভাবে করতে পারলে তা সুন্দর হওয়াই স্বাভাবিক। সেখানে হয়তো তিনি সাফল্যও সহজে পেতে পারেন।
যথাস্থানে যথাযোগ্য ব্যক্তিকে বসানোর প্রয়োজন এ কারণেই। কিন্তু অনেক জায়গায়ই তার ব্যত্যয় ঘটে। অনেকেই হয়তো তার পছন্দের বিষয়ে পড়তে পারছেন না। পছন্দের কাজ করতে পারছেন না। তার পরও যখন তা করে যান সেখানে ঝামেলা তৈরি হয়। এটা ঠিক, শিক্ষাসহ অনেক বিষয়েই আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। যেমন মাস্টার্স পাস করে আলোচ্য ব্যক্তির মতো অটোরিকশা চালানোটা সমাজ এখানে স্বাভাবিকভাবে দেখে না। কিন্তু তিনি তার পছন্দের জন্য, আনন্দের জন্য বড় চাকরি ছেড়েছেন।
এ ব্যক্তির উদাহরণ হয়তো অনেকের জন্য প্রেরণাদায়ক হতে পারে। অবশ্য সবাই আবার চাইলেই সব করতে পারবেন এমন বাস্তবতা ও অবস্থা আমাদের নেই। এটাও মাথায় রাখা দরকার। এ জন্য যে যেখানে আছে সেখানেই সর্বোচ্চটা দেওয়া প্রয়োজন। আর সুযোগমতো পছন্দের কাজ করতে পারলে তো সোনায় সোহাগা।

 

 

ট্যাগঃ , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।