Mahfuzur Rahman Manik
টয়লেট বিপ্লব!
California_winner_700
সোলার পাওয়ারড এই টয়লেট নির্মাণ করে প্রথম হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি

টয়লেট নিয়ে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনীর বিশেষ আগ্রহ কীভাবে উড়িয়ে দেওয়া যায়? যদিও ফোর্বসের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী ধনীদের তালিকায় বিল গেটসের স্থান দ্বিতীয়। তবে ধনীদের কথা বললে এক সময় এক নম্বরে থাকা এই বিল গেটসকে মানুষ যতটা চেনেন, অন্যদের ততজন চেনেন বলে মনে হয় না। এই পরিচিতির পেছনে তার ফাউন্ডেশনের একটা বড় অবদান আছে নিশ্চয়ই। টুইটারে ফলোয়ার হিসেবে তার সাম্প্রতিক এক টুইটের সূত্র ধরেই টয়লেটের অবতারণা। ২৯ এপ্রিল তিনি টুইট করেছেন_ 'হাউ কেন সায়েন্স বেনিফিট দ্য পুওর? হিয়ার'স দ্য কেস মেলিন্ডা গেটস অ্যান্ড আই মেড টু টপ সাইন্টিস্টস ওন সানডে।' এ টুইট সংশ্লিষ্ট লিংকে ঢু মারতেই তার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট দ্য গেটস নোটস ডট কম দেখা গেল। সে পাতায় নোটের শিরোনাম_ হোয়াই উই আর টকিং টু সায়েন্টিস্টস অ্যাবাউট টয়লেটস (কেন আমরা বিজ্ঞানীদের টয়লেট সম্পর্কে বলছি)। তার বিশাল নোটের মোদ্দা কথা হলো, সেদিন তারা যুক্তরাষ্ট্রের 'ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্সেস'-এর সভায় বক্তব্য দিয়েছেন। বিল গেটস সেখানে টয়লেটের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন আবিষ্কারের কথা বলেছেন। কারণ বিষয়টা দরিদ্রদের জন্য বড় সমস্যা। তার আগের কথা হলো, গত বছর বিল অ্যান্ড মেলেন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন টয়লেট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন আবিষ্কার নামে একটা মেলার আয়োজন করে। যেখানে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রথম পুরস্কার লাভ করেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, দ্বিতীয় হয় যুক্তরাজ্যের লাফবার্গ ইউনিভার্সিটি আর তৃতীয় পুরস্কার পায় কানাডার ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টো। বিল গেটসের ভাষায় আমাদের একটি টয়লেট বিপ্লব দরকার। কারণ, বিশ্বের দশজনের ছয়জনেরই নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। রোগব্যাধি কমাতে সাহায্য করার জন্য আমাদের নতুন আইডিয়া বের করা প্রয়োজন।
ধারণা করা যেতে পারে, বিল গেটসের ফাউন্ডেশন দরিদ্রদের জন্য কাজ করে বলে তার এ টয়লেট বিপ্লব কেবল তাদের জন্যই। কারণ ইউএনওয়াটার ডট অর্গ থেকে সহজেই কিছু তথ্য দেওয়া যায়_ অপ্রতুল পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে বিশ্বে প্রতি ২০ সেকেন্ডে একটি শিশু মারা যায়। বিশ্বে ৬৩ ভাগ মানুষের উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা রয়েছে। দুইশ' ষাট কোটির মানুষের মৌলিক স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই। যাদের অধিকাংশই উন্নয়নশীল কিংবা দরিদ্র বিশ্বের। ফলে দরিদ্ররা তার এ টয়লেট বিপ্লবের অন্যতম বিষয় ঠিকই একই সঙ্গে যাদের উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা রয়েছে তারাও এর অন্তর্ভুক্ত। কারণ এর মাধ্যমে তারা যে পরিমাণ পানি অপচয় করে তা রোধও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হিসাব বলছে, উন্নত বিশ্বে টয়লেট ফ্লাশের মাধ্যমে দিনে যত পানি খরচ হয়, সবাই খরচ করলে দিনে তার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৫শ' কোটি গ্যালন। এ পরিমাণ পানি প্রতিদিন খরচ হলে এভাবে কত পানি অপচয় হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে আমরা দেখছি, এ নিয়ে বিল গেটস প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছেন। নতুন আইডিয়ার কথা বলছেন। সহজে, কম খরচে, নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশনের কথাই তিনি বলেছেন।

Longborough_prototype_700
যুক্তরাজ্যের লাফবার্গ ইউনিভার্সিটি কর্তৃক আবিস্কৃত টয়লেট

বাংলাদেশের অবস্থা বলার অপেক্ষা রাখে না, এখানে দুই অবস্থাই আছে_ একদিকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই মানুষের, শহরের বস্তিতেও সেটা দৃশ্যমান। আর অভিজাত পাড়ায় ফ্লাশ টয়লেট ব্যবহারের মাধ্যমে কত পানির অপচয় হয় সে হিসাব নেই। এ দুই অবস্থার মাঝামাঝি কোনো সমাধানই হয়তো আবিষ্কারের চেষ্টা করেছেন বিল গেটস। জানি না সেটা কবে আমাদের কাছে পেঁৗছবে।

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।