মৃতপ্রায় বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে অনেকদিন ধরে আন্দোলন করছেন পরিবেশবাদীরা। শুধু দাবি-দাওয়া পেশ আর মানববন্ধনই নয়, আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে এটি। অবশেষে টনক নড়ে সরকারের। শুধু বুড়িগঙ্গাই নয়, ঢাকার চারপাশে অবস্থিত অন্যান্য নদী তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যাকে বাঁচাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকার প্রাথমিক অবস্থায় নদীকে দখলমুক্ত করতে চেষ্টা করে। সে ধারাবাহিকতায় এ বছরের ৬ জানুয়ারি বুড়িগঙ্গার তলদেশ থেকে বর্জ্য ও পলিথিন অপসারণের কাজ শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর বাদামতলীর দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত চার কিলোমিটার এলাকার বর্জ্য অপসারণের কাজ চলছে।
আদালতের নির্দেশে সরকার নদীর তীরের অবৈধ দখলদারিত্ব উচ্ছেদে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছিল। সে কার্যক্রম কতটা সফল হয়েছে বলা যায় না। সেখানে অবৈধ দখলদারিত্ব তো উচ্ছেদ হয়নিই; বরং নির্মিত হয়েছে স্থায়ী-অস্থায়ী দোকানপাট, গুদামসহ অনেক কিছু। এখনও বুড়িগঙ্গাসহ অন্যান্য নদীর তীর ঘিরে রয়েছে নানা স্থাপনা, শিল্প প্রতিষ্ঠান, কারখানা, দোকান, বসতবাড়ি এমনকি মসজিদ-মাদ্রাসাও। বুড়িগঙ্গার সীমানায় অনেকেই নিজের জমি দাবি করে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে।
বর্জ্য উত্তোলনে পদক্ষেপের মাধ্যমে এর স্থায়ী সমাধান হবে কি? একে তো এ বর্জ্য উত্তোলনের ভালো ড্রেজার আমাদের নেই, তার ওপর আবার উত্তোলিত বর্জ্য কোথায় রাখা হবে তা নিয়ে রয়েছে টানাহেঁচড়া। যেসব কারণে বুড়িগঙ্গার পানির এ দৈন্যদশা, সেগুলো চিহ্নিত করে তার কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা না নিলে এ কার্যক্রম কোনো কাজ দেবে না।
বুড়িগঙ্গা এতদিনে পরিণত হয়েছে বর্জ্য ফেলার ভাগাড়ে। এটি ব্যবহৃত হচ্ছে ঢাকার প্রধান সুয়ারেজ বর্জ্যের আউটলেট হিসেবে। শিল্পকারখানার বর্জ্য, মেডিকেলের বর্জ্য, ট্যানারির বর্জ্য, রাসায়নিক পদার্থ, হাটবাজারের পরিত্যক্ত সামগ্রী ইত্যাদি ফেলার স্থান হিসেবে বুড়িগঙ্গা ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে নাব্য হারিয়েছে বুড়িগঙ্গা, পানি হয়েছে দূষিত। এগুলো শক্ত হয়ে জমাট বেঁধে কয়েক স্তর তৈরি করেছে নদীর তলদেশে। এ অবস্থায় বর্জ্য উত্তোলন আর নদীখননের কাজ সময়ের দাবি। এ বর্জ্য উত্তোলন আর নদীখননের কাজ ফলপ্রসূ করতে, স্রোতস্বিনী বুড়িগঙ্গার আসল চেহারা ফিরিয়ে দিতে কিছু কাজ করা জরুরি। প্রথম কাজটি হবে নদীদখল মুক্তকরণ। শুধু বুড়িগঙ্গার নয়, ঢাকার চারপাশের অন্যান্য নদীর সীমানা নির্ধারণ করে তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদকরণ। বর্জ্য উত্তোলনে, সফলতার জন্য যেসব শিল্পকারখানার কারণে নদী দূষিত হচ্ছে, সেগুলোর প্রত্যেককে বর্জ্য ফেলার জন্য ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট পল্গান্ট তথা ইটিপি স্থাপনের জন্য বাধ্য করতে হবে। আজকের বুড়িগঙ্গা হাজারীবাগের যে চামড়া শিল্পের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, এ শিল্পকে দ্রুত সাভারে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া বর্জ্য ফেলার জন্য ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করা, মহানগরীর মানুষের জন্য বিকল্প পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা জরুরি। এসব বিষয়ের বন্দোবস্ত না করে শুধু বর্জ্য উত্তোলন করে নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনা কতটা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
শুধু ঢাকা শহরের নদীই নয়, গোটা দেশের নদীগুলোর অবস্থা শোচনীয়। দেশে মোট নদীর সংখ্যা ২১০টি। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক নদী ৫৪টি। একদিকে দেশের নদীগুলো আমাদের দ্বারাই দখল আর দূষণে যায় যায় অবস্থা, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক নদীগগুলোর পানিচুক্তি নিয়ে নিয়মিত দরকষাকষি করতে হচ্ছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে।
আজ সীমাহীন সংকটে মেগাসিটি ঢাকা। যানজট, জনসংখ্যা আর গাড়ির চাপে ঢাকা একদিকে যেমন ন্যুব্জ আবার গ্যাস, বিদ্যুৎ আর পানির সংকটে সংকটাপন্ন। নদীগুলো আজ বিলুপ্তির পথে। একশ্রেণীর মানুষের অত্যাচারে নদীগুলোর প্রাণ যায় যায়।
বুড়িগঙ্গার পানিকে আমরা যতই কুচকুচে কালো ও দুর্গন্ধময় কিংবা ব্যবহারের অযোগ্য বলি না কেন, একশ্রেণীর মানুষ এ পানি দিয়ে জীবনধারণ করছে। গোসল, খাওয়া থেকে শুরু করে কাপড় ধোয়াসহ সব কাজ তারা করছে। সারা বছরই তারা নানা রোগে ভুগে থাকে। তাদের বুড়িগঙ্গা ছাড়া কোনো পথ নেই। এ অবস্থায় বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার অন্যান্য নদী বাঁচানো অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বুড়িগঙ্গা সত্যি কি বুড়ি হয়ে মরে যাবে?
আদালতের নির্দেশে সরকার নদীর তীরের অবৈধ দখলদারিত্ব উচ্ছেদে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছিল। সে কার্যক্রম কতটা সফল হয়েছে বলা যায় না। সেখানে অবৈধ দখলদারিত্ব তো উচ্ছেদ হয়নিই; বরং নির্মিত হয়েছে স্থায়ী-অস্থায়ী দোকানপাট, গুদামসহ অনেক কিছু। এখনও বুড়িগঙ্গাসহ অন্যান্য নদীর তীর ঘিরে রয়েছে নানা স্থাপনা, শিল্প প্রতিষ্ঠান, কারখানা, দোকান, বসতবাড়ি এমনকি মসজিদ-মাদ্রাসাও। বুড়িগঙ্গার সীমানায় অনেকেই নিজের জমি দাবি করে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে।
বর্জ্য উত্তোলনে পদক্ষেপের মাধ্যমে এর স্থায়ী সমাধান হবে কি? একে তো এ বর্জ্য উত্তোলনের ভালো ড্রেজার আমাদের নেই, তার ওপর আবার উত্তোলিত বর্জ্য কোথায় রাখা হবে তা নিয়ে রয়েছে টানাহেঁচড়া। যেসব কারণে বুড়িগঙ্গার পানির এ দৈন্যদশা, সেগুলো চিহ্নিত করে তার কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা না নিলে এ কার্যক্রম কোনো কাজ দেবে না।
বুড়িগঙ্গা এতদিনে পরিণত হয়েছে বর্জ্য ফেলার ভাগাড়ে। এটি ব্যবহৃত হচ্ছে ঢাকার প্রধান সুয়ারেজ বর্জ্যের আউটলেট হিসেবে। শিল্পকারখানার বর্জ্য, মেডিকেলের বর্জ্য, ট্যানারির বর্জ্য, রাসায়নিক পদার্থ, হাটবাজারের পরিত্যক্ত সামগ্রী ইত্যাদি ফেলার স্থান হিসেবে বুড়িগঙ্গা ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে নাব্য হারিয়েছে বুড়িগঙ্গা, পানি হয়েছে দূষিত। এগুলো শক্ত হয়ে জমাট বেঁধে কয়েক স্তর তৈরি করেছে নদীর তলদেশে। এ অবস্থায় বর্জ্য উত্তোলন আর নদীখননের কাজ সময়ের দাবি। এ বর্জ্য উত্তোলন আর নদীখননের কাজ ফলপ্রসূ করতে, স্রোতস্বিনী বুড়িগঙ্গার আসল চেহারা ফিরিয়ে দিতে কিছু কাজ করা জরুরি। প্রথম কাজটি হবে নদীদখল মুক্তকরণ। শুধু বুড়িগঙ্গার নয়, ঢাকার চারপাশের অন্যান্য নদীর সীমানা নির্ধারণ করে তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদকরণ। বর্জ্য উত্তোলনে, সফলতার জন্য যেসব শিল্পকারখানার কারণে নদী দূষিত হচ্ছে, সেগুলোর প্রত্যেককে বর্জ্য ফেলার জন্য ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট পল্গান্ট তথা ইটিপি স্থাপনের জন্য বাধ্য করতে হবে। আজকের বুড়িগঙ্গা হাজারীবাগের যে চামড়া শিল্পের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, এ শিল্পকে দ্রুত সাভারে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া বর্জ্য ফেলার জন্য ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করা, মহানগরীর মানুষের জন্য বিকল্প পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা জরুরি। এসব বিষয়ের বন্দোবস্ত না করে শুধু বর্জ্য উত্তোলন করে নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনা কতটা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
শুধু ঢাকা শহরের নদীই নয়, গোটা দেশের নদীগুলোর অবস্থা শোচনীয়। দেশে মোট নদীর সংখ্যা ২১০টি। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক নদী ৫৪টি। একদিকে দেশের নদীগুলো আমাদের দ্বারাই দখল আর দূষণে যায় যায় অবস্থা, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক নদীগগুলোর পানিচুক্তি নিয়ে নিয়মিত দরকষাকষি করতে হচ্ছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে।
আজ সীমাহীন সংকটে মেগাসিটি ঢাকা। যানজট, জনসংখ্যা আর গাড়ির চাপে ঢাকা একদিকে যেমন ন্যুব্জ আবার গ্যাস, বিদ্যুৎ আর পানির সংকটে সংকটাপন্ন। নদীগুলো আজ বিলুপ্তির পথে। একশ্রেণীর মানুষের অত্যাচারে নদীগুলোর প্রাণ যায় যায়।
বুড়িগঙ্গার পানিকে আমরা যতই কুচকুচে কালো ও দুর্গন্ধময় কিংবা ব্যবহারের অযোগ্য বলি না কেন, একশ্রেণীর মানুষ এ পানি দিয়ে জীবনধারণ করছে। গোসল, খাওয়া থেকে শুরু করে কাপড় ধোয়াসহ সব কাজ তারা করছে। সারা বছরই তারা নানা রোগে ভুগে থাকে। তাদের বুড়িগঙ্গা ছাড়া কোনো পথ নেই। এ অবস্থায় বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার অন্যান্য নদী বাঁচানো অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বুড়িগঙ্গা সত্যি কি বুড়ি হয়ে মরে যাবে?
16 january 2010
ট্যাগঃ