এবারের শিক্ষানীতিতে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাটি দেখানো হয়েছে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার মানসিক ও দৈহিক প্রস্তুতি হিসেবে। যেখানে ৫+ বয়সী শিশুরা ভর্তি হবে। থাকবে আকর্ষণীয় উপকরণ আর শিশুর মনের বিকাশের যাবতীয় ব্যবস্থা। সঙ্গে সঙ্গে স্বধর্মের ধর্মীয় উপসনালয়ে ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়টিও এসেছে। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা শহরে চালু করা যতো সহজ হবে গ্রামের ক্ষেত্রে ততোটা সহজ হবে না। শহরে বিদ্যমান প্রাইভেট স্কুলগুলোতে প্রথম শ্রেণীর পুর্বেই তিনটি শ্রেণী রয়েছে। শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক শিক্ষাকে বলা হয়েছে সকল শিক্ষার ভিত্তি। জাতীয় জীবনে এর গুরুত্ব অত্যধিক। এটি হবে সার্বজনীন বাধ্যতামুলক এবং অবৈতনিক। সংবিধানের আলোকে প্রাথমিক শিক্ষাকে এ শিক্ষানীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে। বিদ্যমান বিভিন্ন ধারার মধ্যে একটি সুসমন্বয়ের চেষ্টা করা হয়। শিক্ষানীতি প্রবর্তনের সময় বা এর পূর্বে একমুখী শিক্ষার যে তোড়জোড় শোনা গিয়েছিল, সে গর্জনের বর্ষণটা সেভাবে হয়নি। শিক্ষানীতিতে মাদরাসার কথা আসলে ও ইরেজী মাধ্যমের প্রতিষ্ঠানের কথা আসেনি। শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে এইচএসসি/মাধ্যমিক পাস। শিক্ষানীতিতে উল্লিখিত শব্দ এইচএসসি দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে? যদি শব্দটি এসএসসি ধরি তাহলে তার সঙ্গে যুক্ত মাধ্যমিক কথাটি বিদ্যমান শিক্ষা স্তর অনুযায়ী ঠিক আছে। তবে এ যোগ্যতা কিছুটা কম বলেই আমার কাছে মনে হয়। অবশ্য যদি এইচএসসি ধরি তার সঙ্গের মাধ্যমিক কথাটি প্রস্তাবিত শিক্ষাস্তর অনুযায়ী ঠিক আছে। এতে অনেকের বক্তব্য এ নীতি বাস্তবায়ন হলে প্রাথমিক শিক্ষকরা চাকরী হারাবেন তা ঠিক নয়। কারণ তারা শুধু আগের মতোই ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াবেন। ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।
প্রাথমিক শিক্ষার যা কিছু প্রয়োজন সব সুপারিশ এ নীতিতে রয়েছে। নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরীর সম্ভাব্য খরচও দেখানো হয়েছে। এখন বাকি এটি চুড়ান্ত করা আর বাস্তবায়ন। এক্ষেত্রে জনগণ বা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের মতামতকে গ্রহণ করে এটি চুড়ান্ত করা দরকার। বাস্তবায়নের রোডম্যাপ ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। এতো লম্বা সময়ের কোনো অবকাশ নেই। যতো দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়নের কাজে হাত দেয়া উচিত। বিগত প্রতিবেদনগুলোর মতো হিমাগারে এটি যাবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। প্রাথমিক শিক্ষা সরকারের চ্যালেঞ্জ। দেশের সার্বিক শিক্ষা এ সত্যের উপরই নির্ভর করে। এ চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করে সামনে পথে এগিয়ে যেতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন এ শিক্ষার দ্বারাই বাস্তবায়ন হবে।
(ভোরের কাগজ ১৬ অক্টোবর ২০১০)