সন্তান আগমনের অনুভূতি মা-বাবা উভয়ের সমান। নবজাতক ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর প্রসূতি মায়ের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি বোঝেন বাবা। সে জন্য সন্তান লালনপালনে মায়ের জন্য যেমন রয়েছে মাতৃত্বকালীন ছুটি, তেমনি বাবার জন্য পিতৃত্বকালীন ছুটি থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু মাতৃত্বকালীন ছুটি সর্বজনীন হয়ে উঠলেও পিতৃত্বকালীন ছুটি সেভাবে গুরুত্ব পায়নি। অন্তত বাংলাদেশে দাপ্তরিকভাবে বিষয়টি ব্রাত্যই রয়ে গেছে। দেশে এর প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অল্প ক’দিন ছুটি কাটান বাবা। প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও কম ছুটি নিয়েই বাবাকে তুষ্ট থাকতে হয়। ঠিক এমন সময়ে এসে সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে আশাজাগানিয়া। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একজন শিক্ষক ১৫ দিনের পিতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন।
এটা সত্য, বেসরকারিভাবে অনেক প্রতিষ্ঠানেই পিতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান এক মাসের পিতৃত্বকালীন ছুটিও দিচ্ছে। তবে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুব কম। এ অবস্থায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত সংবাদমাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে এসেছে। সামাজিক মাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা দেখা গেছে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমাদের মধ্যে এক ধরনের ইতিবাচক মনোভাব গড়ে উঠেছে। উন্নত বিশ্বে মাতৃত্বকালীন এবং পিতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করা হয়। একই সঙ্গে বিশেষ ভাতাসহ সন্তান লালনপালনের জন্য নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্রীয়ভাবে দেওয়া হয়। আমাদের হয়তো সামর্থ্য কম। কিন্তু সেই দৃষ্টিভঙ্গি থাকা দরকার।
এক সময় আমাদের মাতৃত্বকালীন ছুটিও ছিল অপ্রতুল। সরকার সেখানে ছয় মাস পর্যন্ত এ ছুটি বাড়িয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে মায়েরা এ সুবিধা যেভাবে নিতে পারেন, বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানেই সেভাবে সুযোগ নেই। তারপরও আমাদের শ্রম আইন ও সরকারি চাকরি বিধিমালায় মাতৃত্বকালীন ছুটি লিখিত থাকায় নারী তাঁর এ অধিকার নিশ্চিত করতে পারেন। কিন্তু পিতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়কে সেভাবে গুরুত্ব না দেওয়ায় বাবা সম্প্রদায় বঞ্চিত হচ্ছে। সেদিক থেকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় যে পথ দেখিয়েছে, তা অন্যদের জন্যও অনুসরণীয়।
সন্তানের দায়িত্ব পালনে বাবাও সমান অংশীদার। বাবা হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সন্তানের সঙ্গে পিতার যে আত্মিক যোগাযোগ রয়েছে, তা আরও সুদৃঢ় করতে পারে পিতৃত্বকালীন ছুটি। এ ছুটি অন্তত ১৫ দিনের জন্য হওয়া উচিত। এ লক্ষ্যে আইনের কথাও শোনা গিয়েছিল। তা এখনও কেন আলোর মুখ দেখেনি, সে এক বিস্ময়। বলাবাহুল্য, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গসমতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রে নারী যাতে আরও বেশি অবদান রাখতে পারে, তা নিশ্চিতে পিতৃত্বকালীন ছুটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
সন্তান যখন একটু বড় হয়, তার কাছে বাবার ছুটি যেন উৎসবের দিন। ব্যস্ত জীবনে বাবাদের একটু ছুটি পরিবারে কতটা আনন্দ বয়ে আনে, বলার অপেক্ষা রাখে না। এটি শুধু খুশির উপলক্ষই নয় বরং অনেক কাজের কাজি। পিতৃত্বকালীন ছুটি বাবার জন্য তাই জরুরি। নবজাতক বাবার সংস্পর্শ কতটা অনুভব করে, সেটি বোঝা কঠিন হলেও বাবা যে তাঁর সন্তানের সান্নিধ্য উপভোগ করেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সদ্য বাবা হওয়া ব্যক্তির মানসপটে যখন সন্তানের চেহারা ভাসে তখন তিনি কাজে মন দেবেন কীভাবে? বাবার আত্মিক ও মানসিক প্রশান্তির জন্যও তো এ ছুটি জরুরি।