লেখার আবশ্যকীয় উপাদান হিসেবে কলম মূল্যবান হলেও বলা চলে, এটি এত দিন সহজলভ্যই ছিল। দুর্মূল্যের এই বাজারে ৫ টাকায় একটা বল পয়েন্ট পেন বা কলম পাওয়া নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যের বিষয়। কিন্তু সেই সুখ বুঝি কপালে সইল না। কলম উৎপাদনে এতদিন ভ্যাট অব্যাহতি থাকলেও নতুন বাজেটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সে জন্য কলমের দাম যে বাড়ছে, তা সংবাদমাধ্যমে ইতোমধ্যে বলা হয়েছে। সরকার যেভাবে ভ্যাট বসাচ্ছে; ব্যবসায়ীরা এই সুযোগে কতটা দাম বাড়িয়ে নেন, সেটাই দেখার বিষয়।
কলমের ওপর এমন সময়ে ভ্যাট বসছে যখন প্রায় সব শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়তি। এক বছর আগে হঠাৎ প্রায় সব উপকরণের দাম বেড়ে যায়। গত বছর ২২ মে প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদনেও বিষয়টি এসেছে। তখন কাগজ, খাতা, পেন্সিল, ব্যবহারিক খাতা, মার্কার, স্কুল ফাইল, অফিস ফাইল, বাচ্চাদের লেখার স্লেট, ক্যালকুলেটর, সাদা বোর্ড, জ্যামিতি বক্স, টালি খাতা, কলম বক্স, স্কেল, পরীক্ষায় ব্যবহৃত ক্লিপবোর্ড, কালিসহ সব পণ্যের দাম বেড়েছিল। ভ্যাট বিষয়ক বাজেট প্রস্তাব সংশোধিত না হলে এ তালিকায় এবার যুক্ত হবে বল পেন। এর মধ্যে শিক্ষা উপকরণের দাম না কমলেও হঠাৎ বাজেটে ভ্যাট বসানোর কারণে কলমের ওপর তার প্রভাব পড়বে।
বল পেন উৎপাদনে আমরা প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। অভ্যন্তরীণ চাহিদার অধিকাংশ কলমই দেশে উৎপাদিত হয়। এই উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভ্যাট আরোপ না করার বিষয়টি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে থাকতে পারে। এখন নতুন করে ভ্যাট বসানো হলে তা দেশীয় কোম্পানিগুলোর জন্য নিরুৎসাহের কারণ হতে পারে। বলাবাহুল্য, কলমের মধ্যে ওয়াটার জেল পেনই বিশেষত বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ইতোমধ্যে দেশীয় কোম্পানিগুলো সে ধরনের জেল পেনও উৎপাদন করছিল। সে ক্ষেত্রে তাদের উৎসাহ দিতে সরকারের যথাযথ সহায়তা যেখানে প্রয়োজন ছিল, সেখানে উল্টো ভ্যাটের বোঝা তাদের ওপর চাপানো হচ্ছে কেন?
কাগজসহ অধিকাংশ শিক্ষা উপকরণই আমদানিনির্ভর। এর মধ্যে বলা চলে ব্যতিক্রম হলো কলম। সে জন্যই বলা চলে, কলমের দাম এখন পর্যন্ত নাগালের মধ্যেই রয়েছে। কিন্তু বাজেটে যেভাবে ১৫ শতাংশ ভ্যাটের বোঝা চাপানো হচ্ছে, তাতে ৫ টাকার কলম হয়তো দ্বিগুণ দামেই আমাদের কিনতে হবে। একবারে না হলেও হয়তো ধাপে ধাপে সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীরা এ থেকে পূর্ণ ফায়দা লোটার চেষ্টা করবেন।
উল্লখ্য, গোটা শিক্ষা খাত নিয়েও বাজেটে তেমন সুসংবাদ নেই। গতানুগতিকভাবে যেমনটা আমরা দেখে আসছি, প্রতি বছর আগের বছরের তুলনায় মোট বাজেটের আকার যেমন বাড়ে, তেমনি শিক্ষা খাতেও কিছু বরাদ্দ বাড়ানো হয়। এবারও শিক্ষায় বরাদ্দ কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু শিক্ষা-সংশ্লিষ্টরা যেভাবে বাজেটে জিডিপির ৬ শতাংশ অথবা মোট বাজেটের ২০ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন, তার প্রতিফলন নেই। এবার ১৩ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হলেও প্রযুক্তি খাতের বরাদ্দ বাদ দিলে তা ১২ শতাংশের নিচে নামবে। অথচ এই বরাদ্দ দিয়েই আমরা শিক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার ঢোল পেটাই।
বাজেটের দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি অর্থাৎ ভালো, মন্দ ও খুব খারাপ পর্যালোচনা করেছে একটি পত্রিকা। সেখানে কলমের দাম বৃদ্ধির বিষয়টিকে খুব খারাপ বলেছেন একজন বিশ্লেষক। চলমান ঊর্ধ্বগতির বাজারে মানুষের খরচ যখন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে, তখন সন্তানের পড়াশোনার ব্যয় মেটানো নিয়েই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকরা। গত বছর থেকে শিক্ষা উপকরণের দাম মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় সন্তানের পড়াশোনার বাড়তি ব্যয় সীমিত আয়ের মানুষ অনেকের জন্যই বড় বোঝা। কলমের দাম বৃদ্ধি সেই বোঝা আরও ভারী করবে নিঃসন্দেহে। সে জন্য বাজেট চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে সরকারকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। কলমের ওপর এখনই ভ্যাট বসানো ঠিক হবে না।