Mahfuzur Rahman Manik
পঞ্চব্রীহি সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে সবার সহযোগিতা জরুরি
মার্চ 13, 2023

সাক্ষাৎকার: ড. আবেদ চৌধুরী

সাক্ষাৎকার গ্রহণ: শেখ রোকন ও মাহফুজুর রহমান মানিক

জিনবিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান লোয়ামবায়ো- তে কর্মরত। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ও ফ্রান্সের ইকোল নরমাল সুপিরিয়রে শিক্ষকতা ও গবেষণার কাজ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অরিগন স্টেট ইনস্টিটিউট অব মলিকুলার বায়োলজি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী আবেদ চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযেগ্য ‘মানুষের জিন, জিনের মানুষ’, ‘অনুভবের নীলনকশা’, ‘শৈবাল ও অন্তরীক্ষ’, ‘দূর্বাশিশির ও পর্বতমালা’। তিনি ১৯৫৬ সালে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কানিহাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

সমকাল: দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকলেও আপনার গবেষণার বড় অংশ দেশের কৃষি ও প্রকৃতি নিয়ে। দূরত্ব কি নিবিড় গবেষণায় কোনো প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়?

আবেদ চৌধুরী: আমি প্রতিবছর দেশে আসি। ফলে কোনো প্রতিবন্ধকতা দেখি না। আর প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই সময়ে আপনি কোথায় অবস্থান করছেন, সেটা খুব বেশি পার্থক্য তৈরি করে না।

সমকাল: দেশের মধ্যেও মৌলভীবাজারকে বেছে নেওয়ার নেপথ্যে বিশেষ কোনো কারণ রয়েছে? দেশপ্রেম বলতে পারি?

আবেদ চৌধুরী: এটি শুধু দেশপ্রেমের মধ্যে আবদ্ধ নয়। আমার শৈশব কেটেছে মৌলভীবাজারের কানিহাটিতে। সে জন্য জন্মস্থানের সঙ্গে আমার একটা গভীর সংযোগ রয়েছে। এটাকে ঠিক রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে চিন্তা করা যাবে না। কারণ নিজ ভূমি, নিজস্ব সমাজ– এগুলো অনেক গোড়ার বিষয়। দেশ বা দেশপ্রেম এগুলো তো পরে এসেছে। বলতে পারেন, জন্মস্থানের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই গবেষণাকর্মের ক্ষেত্রে জন্মভূমিকেই প্রাধান্য দিয়েছি।

সমকাল: আপনি জন্মস্থানের কথা বলার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রচিন্তার আগের ভাবনার কথা বললেন। কিন্তু রাষ্ট্রব্যবস্থার কারণে কিন্তু আপনার জন্মস্থান যে ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক অঞ্চলে, সেটা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ভাগ হয়ে গেছে। এখন তার একটি অংশ ভারতে। এ ধরনের বিভক্তি গবেষণায় প্রভাব ফেলে?

আবেদ চৌধুরী: ঠিকই বলেছেন। বাংলা যেমন ভাগ হয়েছে, ভারত যেমন ভাগ হয়েছে; তেমনি অনেকেই হয়তো জানে না– সিলেটও ভাগ হয়েছে। সিলেটকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনার যে জায়গা, সেটি আর একত্রিত নেই। বরাক ভ্যালি, শিলচর, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি– এগুলোর মেধাসম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদ আর আমাদের নেই। যদিও তাদের সঙ্গে আমাদের আত্মীয়তা রয়েছে। কিন্তু এটা বেদনাদায়ক যে, যৌথ অনেক মেধাসম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারছি না। অনেক সময় বিরোধ দেখা দিচ্ছে।

সমকাল: আপনার কাজের ক্ষেত্রেও তো এ রকম ঘটনা আছে। কাসালত ধান যেটা, সেটার ভৌগোলিক নির্দেশিকা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল এবং আপনি ওই ধানে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন।

আবেদ চৌধুরী: হ্যাঁ, কাসালত ভারতীয় ধান হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্র বা ইরির প্রধান একটি প্রকাশনায় যখন একে ভারতীয় ধান হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া তখন আমি তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করি এবং এ বিষয়ে একটি আর্টিকেল প্রকাশের জন্য আমি নেচার ম্যাগাজিনের সঙ্গে কথা বলি। বিষয়টি জেনে তারা আমাকে একটি প্রস্তাবনা পাঠায় যে, এটি বাংলাদেশের ধান হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। পরে ইরি থেকে একটি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে। সেখানে আমার কথা, বাংলাদেশের কথাও উল্লেখ রয়েছে। বস্তুত আমার প্রতিবাদ এবং তাদের যথাযথ প্রমাণ দিয়ে স্বীকৃতি আদায় করেছি– কাসালত বাংলাদেশের ধান; এটি ভারতের নয়।

সমকাল: আপনার উদ্ভাবিত আরেকটি বিস্ময়কর ও বিখ্যাত ধান পঞ্চব্রীহি। আপনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ১৪ বছরব্যাপী এর উদ্ভাবনে কাজ করেছেন। প্রথম তাগিদ অনুভব করেছেন কীভাবে?

আবেদ চৌধুরী: আমার একটা চিন্তা এলো, আমাদের শস্যগুলো কাটার পর শেষ হয়ে যায়। চাষাবাদ করে আবার লাগাতে হয়। আমার কাছে মনে হলো, এতে সময়, শ্রম ও সম্পদের অপচয় হয়। যদিও বাস্তবতা হিসেবে এটাই আমরা ধরে নিয়েছি। আমাদের ধানগুলো বার্ষিক না হয়ে ঋতুকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। আমাদের আউশ ধান কেটে জমি চাষ করে আমন ধান লাগাতে হয়। আবার আমন কেটে চাষ দিয়ে বোরো লাগাতে হয়। আমি চিন্তা করলাম, এইভাবে কেন কৃষক বারবার কাটবে-লাগাবে। একই ধান থেকে কেন তিন বা ততোধিকবার ফসল তোলা যাবে না? আমাদের সিলেটে নাড়া ধান বলে একটা ধান আছে। ইংরেজিতে যাকে বলে রাটুন। এই ধান গাছের পুনরায় বৃদ্ধির ক্ষমতা থাকায় এটি কেটে ফেলার পরও নাড়া থেকে আবার নতুন করে জন্ম নিতে পারে। নাড়া ধানের এই বিষয়কে কীভাবে আরও প্রবলভাবে কাজে লাগানো যায়, সেই থেকেই এ গবেষণার কাজ শুরু।

সমকাল: তারপর তো পঞ্চব্রীহি সম্ভব হলো।

আবেদ চৌধুরী: আমার জিনতত্ত্বের সব বিদ্যা কাজে লাগিয়ে এবং অসংখ্য ধানকে ক্রস করেই পঞ্চব্রীহি প্রাপ্তি। প্রথমে দ্বিফসল, এর পর ত্রিফসল ও চতুর্থ ফসল হওয়ার সফলতার পরই আসে পঞ্চব্রীহি। মানে, বছরে একবার ধান লাগিয়ে পাঁচ মৌসুমে ফসল তোলা। এটা হয়েছে ২০২০ সালে। তিন বছর ধরে পঞ্চব্রীহির উৎপাদন হচ্ছে।

সমকাল: এটা কি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে?

আবেদ চৌধুরী: হ্যাঁ। এটা শুধু গবেষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। মাঠ পর্যায়ে এর বাস্তবায়ন হচ্ছে তিন বছর ধরে। আমাদের ৩০০ বিঘা জমিতে এর উৎপাদন হচ্ছে। ধান হওয়ার পর গ্রামের মানুষকে একত্রিত করে দেখানো হলো। কাটার পর তারাই সিদ্ধান্ত দিয়েছে, কোন ধান বেশি হয়েছে। বিদেশ থেকে বারবার এসে আমি নিজের তত্ত্বাবধানে এটা করেছি; এখনও করছি।

সমকাল: পঞ্চব্রীহি উদ্ভাবনের খবরটি ২০২১ সালের ২০ নভেম্বর সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদন ছিল। কিন্তু ধানটি সেভাবে সারাদেশে জনপ্রিয়তা না পাওয়ার কারণ কী?

আবেদ চৌধুরী: এটা সারাদেশে জনপ্রিয় হবে কীভাবে? এটা যেহেতু আমার মাঠে হয়েছে; বীজ তো আমাকেই দিতে হবে। আমাদের ৮৭ হাজার যে গ্রাম রয়েছে, সেখানে বীজ সরবরাহ করা গেলে সারাদেশে উৎপাদন সম্ভব হতে পারে। আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে ধীরে ধীরে বীজের পরিমাণ বাড়াচ্ছি। এবার আরও বেড়ে গেছে।

সমকাল: এবার কী পরিমাণ জমিতে পঞ্চব্রীহি উৎপাদন হচ্ছে?

আবেদ চৌধুরী: এ বছর ৫৩ বিঘা জমিতে উৎপাদন হচ্ছে। আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে করছি। কিন্তু সারাদেশে বীজ দেওয়া আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতে হবে। ধনী ব্যক্তিরাও চাইলে এগিয়ে আসতে পারেন।

সমকাল: বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের কথা বলছেন?

আবেদ চৌধুরী: এটা নিয়ে আমি ব্যবসা করতে চাচ্ছি না। কিন্তু ৮৭ হাজার গ্রামে পৌঁছাতে খুব বেশি অর্থেরও প্রয়োজন হবে না। ৮৭ হাজার গ্রামে ১০ কেজি করে হয় ৮ লাখ ৭০ হাজার কেজি। প্রতি কেজি ধানের দাম একদম কম দামে দিলে, ধরেন ২০ টাকা করে দুই কোটি টাকার মতো লাগতে পারে। দুই কোটি টাকা দিলে এ ধান ৮৭ হাজার গ্রামে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।

সমকাল: এটা তো খুব বেশি অর্থ নয়। সরকার কেন এগোচ্ছে না?

আবেদ চৌধুরী: সরকার চাইলে এটি নিতে পারে, কিন্তু সরকারি কর্মকর্তারা সম্ভবত এখনও বিষয়টি নিয়ে কনভিন্সড নন। অনেকে বলছেন, এ পদ্ধতিতে নাকি উৎপাদন কমে যায়। আমি মনে করি, উৎপাদন কমে যাওয়ার কোনো কারণ নাই। আমি ১৪ বছর এটা নিয়ে কাজ করছি। প্রথমবার কাটার পর এর পরের ধাপে কমার কোনো কারণ নেই। আমি নিজে এটা পরীক্ষা করে দেখেছি। কৃষকরাও উৎপাদনের বিষয়টি মানছেন।

সমকাল: বিদেশে কি এর চাহিদা আছে?

আবেদ চৌধুরী: হ্যাঁ, বিদেশে এর অনেক চাহিদা। কিন্তু আমি তো চাইছি এটা আগে দেশে সম্প্রসারিত হোক। সবার আগে আমাদের কৃষকরা এর দ্বারা উপকৃত হোক।

সমকাল: দেশের কৃষকদের কাছে যদি এটা ছড়িয়ে দেওয়া যায়, আপনি যেমন ৮৭ হাজার গ্রামের কথা বলছেন। সর্বত্র তো আপনি তখন বর্তমানের মতো এতটা নজরদারি করতে পারবেন না।

আবেদ চৌধুরী: ধানটি সবার কাছে পৌঁছানোর পর তার নজরদারি কীভাবে হবে, কোন পদ্ধতিতে কৃষক এটি চাষ করবে, তার একটা মেকানিজম লাগবে। কীভাবে সার দেবে, কীভাবে বিশেষ স্প্রে করবে, সেটা লাগবে। সে জন্য হয়তো আরও খরচ লাগবে?

সমকাল: এ ধান ছাড়া আর কোন কোন বিষয়ে গবেষণা করেছেন?

আবেদ চৌধুরী: ধান ছাড়া আমি ভুট্টা নিয়ে কাজ করেছি। রঙিন ভুট্টা, যা ক্যান্সারনিরোধী এবং স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো। সেটা অনেক বছর ধরে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করছি। তা ছাড়া মিলেট বা কাউনের বেশ কিছু ধরন আমি এনেছি। টমেটো নিয়ে কাজ করেছি। এসব আমার গ্রামকে কেন্দ্র করে করেছি। বিদেশে আমি যা উপার্জন করি, তা একটি বড় অংশ দেশে এসব কাজে ব্যয় করি।

সমকাল: আপনি স্নাতক পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নে পড়েছেন। কিন্তু পরে আপনি জিন বিষয়ে গবেষণা করেছেন। জিনতত্ত্বে বিশেষ আগ্রহের কারণ কী?

আবেদ চৌধুরী: আমেরিকায় আমি এমন একটি ল্যাবে কাজ করেছি, সেখানে জিনতত্ত্বের মূল ব্যক্তি যাঁরা, তাঁরা আমাকে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। আমাদের দেশে শিক্ষকরা ছাত্রদের যেভাবে গ্রহণ করেন। তো তাঁদের সেই ব্যবহারের কারণে ওই বিষয়ে আমার এক ধরনের অনুরাগ জন্মে। আমিও সেই ২৩-২৪ বছর বয়সে জিন গবেষণা ও উদ্ভাবনে এতটা আত্মনিয়োগ করলাম যে, তাঁদের একজন হয়ে গেলাম। সেখানে আমার গবেষণা প্রকাশ হলো। আমি সেখান থেকে জিনতত্ত্ব চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত করি।

সমকাল: বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে ভুক্তভোগী দেশ। এখানে কৃষিক্ষেত্রে অভিযোজনে আপনার ধান কতটা অবদান রাখতে পারে?

আবেদ চৌধুরী: দেখুন, পঞ্চব্রীহি ধানটা কিন্তু একবার মাত্র লাগাতে হয়। মানে, বছরে একবার চাষ করতে হয়। যতবার চাষ হয় তত গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হয়। এ ধানের কারণে তিনবার চাষ না হয়ে একবার চাষ হয়। জমিকে বারবার চাষ দিলে কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড ও মিথেন নিঃসরণ হয়। যদি আপনি একবার চাষ করেন এবং চাষবাস ছাড়াই পাঁচবার ফলন পান, তাহলে আপনাকে আর চাষ দিতে হবে না। সুতরাং কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড ও মিথেন নিঃসরণ কমবে। এতে চাষজনিত কারণে হওয়া ৮০ শতাংশ দূষণ কমবে।

সমকাল: পঞ্চব্রীহির কি প্যাটেন্ট করা আছে?

আবেদ চৌধুরী: পঞ্চব্রীহির প্যাটেন্টের কাজ চলছে। বিদেশিদের জন্য প্যাটেন্ট থাকবে; দেশে আমি এটি উন্মুক্ত করে দেব। দেশের সবাইকে আমি এই ধান ও এর চাষাবাদ পদ্ধতি বিনামূল্যে শিখিয়ে দিতে চাই।

সমকাল: পঞ্চব্রীহি কি হাইব্রিড ধান?

আবেদ চৌধুরী: পঞ্চব্রীহি হাইব্রিড না, জিএমও না। এর বীজ কৃষক বাঁচিয়ে রাখতে পারে। হাইব্রিড আমি করতে পারি, কিন্তু হাইব্রিড তো একটা ব্যবসা। সেটা আমি করতে চাই না।

সমকাল: পঞ্চব্রীহি একবার চাষ করতে হয় এবং ধান লাগাতে হয়। তারপর সেচ ও সার কীভাবে দিতে হয়?

আবেদ চৌধুরী: চাষ করে একবার এ ধান লাগিয়ে দিলে প্রতি মৌসুমে সেচ ও সার দিতে হয়। তবে প্রথমবার সার বেশি দিতে হয়, পরে কম দিলে চলে। বারবার বেড়ে ওঠার জন্য আমরা জৈবিক কিছু সার উদ্ভাবন করেছি। আদর্শিক অবস্থায় এ ধান হেক্টরপ্রতি ২০ টন উৎপাদন হয়। আমাদের জাতীয় গড় হলো ৫ টন। পরিস্থিতির কারণে এর উৎপাদন কমলেও অন্তত এর দুই থেকে তিন গুণ হবে পঞ্চব্রীহি।

সমকাল: আপনার পরিবারের লোকজন কাজের ক্ষেত্রে আপনাকে উৎসাহ দেন, না নিরুৎসাহিত করেন?

আবেদ চৌধুরী: এ ব্যাপারে তাঁরা নির্বিকার। কেউ কেউ ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। তবে পরিবার ও তার বাইরে আমার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছেন, যাঁরা আমাকে ব্যাপক উৎসাহ দেন।

সমকাল: খাদ্য নিয়ে এক ধরনের ঝুঁকি রয়েছে বিশ্বব্যাপী। খাদ্য নিরাপত্তায় আপনার পঞ্চব্রীহি কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে?

আবেদ চৌধুরী: খাদ্য নিরাপত্তায় পঞ্চব্রীহি ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এই ধানে উৎপাদন তিন গুণ বেড়ে যাবে এবং কৃষকও বারবার খরচ থেকে বেঁচে যাবে। তবে প্রথমেই এটাকে স্বীকার করে নিতে হবে। এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে পঞ্চব্রীহিকে ৮৭ হাজার গ্রামে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি করতে হবে। আমি এ ব্যাপারে আশাবাদী। প্রতি বছর নিজের প্রচেষ্টায় এ ধান যেভাবে বাড়ছে, সেটা আমাকে আশান্বিত করছে।

সমকাল: অস্ট্রেলীয় সরকার কি আপনার এ আবিষ্কারের কথা জানে?

আবেদ চৌধুরী: হ্যাঁ, অবশ্যই তারা জানে। তারা এ বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনা করছে আমার সঙ্গে। আস্ট্রেলিয়াতে করলে এটি আমি নতুনভাবে করব। এখানকার সম্পদ তো আমি অস্ট্রেলিয়ায় নেব না।

সমকাল: পঞ্চব্রীহি নিয়ে আপনার স্বপ্ন সফল হোক এবং সেটা দেশের অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে যাক। এত ব্যস্ততার মধ্যেও সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

আবেদ চৌধুরী: আপনাদেরও ধন্যবাদ। সমকাল আমার প্রিয় পত্রিকা। আপনারা পঞ্চব্রীহি ধান নিয়ে অনেক সমর্থন দিয়েছেন।

সমকালে প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৩

ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।