Mahfuzur Rahman Manik
ঊর্ধ্বমুখী খরচের বিপরীতে মুরগির দাম কেন নিম্নমুখী?
জানুয়ারী 2, 2023

বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় অধিকাংশ পণ্যের দাম যখন ঊর্ধ্বমুখী তখন সাম্প্রতিক মুরগির দাম কমার বিষয়টি আমাকে স্বস্তি দিলেও বিস্মিত হই। এত কমে কীভাবে মুরগি বিক্রি হচ্ছে? ১৮০ টাকার ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকায় কেনা ক্রেতা হিসেবে অনেকের জন্যই ভালো খবর। কিন্তু ইতিবাচক এ বিষয়টির পেছনে যে নেতিবাচক দিকও রয়েছে সেটি বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন স্পষ্ট করল। 'পোলট্রি খামারে লোকসানের ধাক্কা' শিরোনামের খবরটি একটি উপজেলার হলেও দেশের প্রায় সর্বত্রই খামারিরা- বিশেষত ছোট ও মাঝারি খামারিরা- যে লোকসান গুনছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। লোকসান গুনছেন, কারণ মুরগি পালনে খরচ বাড়ছে। মুরগির খাবারের দাম ও ওষুধের মূল্য না কমলেও যখন মুরগির দাম কমছে স্বাভাবিকভাবেই সেটি খামারির জন্য লোকসানের বিষয়। মুরগি দাম তাহলে কেন কমলো? তা প্রতিবেদনে না এলেও ব্যক্তিগতভাবে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলে সম্ভাব্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ বের করা গেল।

সে বিষয়ে বলার আগে বলে নেওয়া ভালো, পোলট্রি শিল্পের ওপর আমরা অনেকেই নির্ভরশীল। রাজধানী হতে প্রত্যন্ত অঞ্চল ধনী কিংবা দরিদ্র প্রায় সবারই খাদ্য তালিকায় মুরগি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে পোলট্রি শিল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। যে কারণে আমরা দেখেছি, একসময় ব্রয়লার মুরগির রমরমা ব্যবসা ছিল। যদিও কয়েক বছরে পোলট্রি খামারিদের সংকট বড় ঘটনা হিসেবে সামনে আসছে। বিশেষ করে কভিড-১৯ এর প্রভাব পোলট্রি শিল্পকে বেশ ভুগিয়েছে। নতুন করে খাবারের দামের কারণে পোলট্রি শিল্প আবার দুরবস্থায় পতিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সংকটের কারণ প্যাকেটজাত পোলট্রি খাবার, ওষুধসহ আনুষঙ্গিক জিনিসের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া। একজন খামারির প্রতি কেজি মুরগির মাংস উৎপাদনে যে খরচ হচ্ছে এবং পাইকারি বাজারে সেই মাংস যে দামে তিনি বিক্রি করছেন তাতে তিনি লাভের মুখ দেখছেন না। প্রতিবেদন অনুসারে, লোকসানের মুখে চলনবিল এলাকার অনেক খামারিই তাঁদের ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন।

তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ও খামারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। অথচ ছয় মাস আগেও সেখানে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি এ মুরগি বিক্রি হয়েছে। সোনালি মুরগির ক্ষেত্রে একই অবস্থা; বর্তমান মূল্য কেজি প্রতি ১৮০ টাকা হলেও ছয় মাস আগের মূল্য ছিল ২৮০ টাকা। এ সংকট ত্বরান্বিত হয়েছে দফায় দফায় ভিটামিন ও নানা রোগের প্রতিষেধকসহ সব ধরনের ওষুধের দাম বৃদ্ধির কারণেও।
মুরগির দাম কমার কারণ কী? সমকালের প্রতিবেদক বলেছেন- মানুষের নিম্নমুখী ক্রয়ক্ষমতা। সংকটের এ সময়ে অনেকেরই ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। এ সময় চাইলেও অনেকেই ১৮০ টাকা কেজি দরে মুরগি খেতে পারছেন না। ফলে চাহিদার সংকটের কারণে মুরগি বিক্রি কমে যাচ্ছে; অন্যদিকে মুরগি কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর খামারে রাখা যায় না; তাই যত তাড়াতাড়ি বিক্রি হবে ততই খামারির জন্য মঙ্গল। আর এর প্রভাব পড়ছে মুরগির দামে। অর্থাৎ যেহেতু বিশেষ করে ব্রয়লার মুরগি সব শ্রেণির মানুষ খায় সেজন্য বিশেষত দরিদ্র মানুষ, মেসে থাকা শিক্ষার্থী তথা সবার স্বল্প ক্রয়ক্ষমতার কারণেই দাম কম। এখন হয়তো তারা বেশি কিনবে। বেশি বিক্রির মাধ্যমেও পোলট্রি খাতের যারা আছে অনেকে হয়তো লাভ করতে পারবে। তাছাড়া বৃহস্পতিবার সমকালেরই প্রধান প্রতিবেদন বলছে, মানুষের সঞ্চয় ভাঙার প্রবণতা কিছুটা কমছে। সেজন্যই মানুষ কম দামে পণ্য পেতে চাইছে। ব্রয়লার মুরগির কম দাম হয়তো তাদের জন্যই।

আমার ধারণা, ক্রয়ক্ষমতা একটা কারণ বটে। সাধারণ মানুষের জন্য ব্রয়লারের দাম কমতেই পারে। তবে যেসব পণ্যের দাম বাড়তি সেখানে এই বিবেচনা নেই কেন? এটা বড় প্রশ্ন। পোলট্রি শিল্প নিয়ে যারা কাজ করেন, নিশ্চয়ই ভালো বলতে পারেন। এ খাতের একটা সমস্যা যে আছে, তা আগেও দৃশ্যমান হয়েছে। যেখানে খামারিরা দিন দিন এ শিল্প থেকে বেরিয়ে আসছেন। আবার বড় বিনিয়োগকারীও এখানে আছেন। তবে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যদি এখানে কিছুটা হলেও বিবেচনার বিষয় হয়, তবে সব পণ্যের দামই কমুক এবং মানুষ কিনুক।

শেষ করি প্রশ্ন দিয়ে- ব্রয়লার মুরগি পালন খরচ বেশি হলেও বাজারে দাম কমার কারণ 'ক্রয়ক্ষমতা' যদি না হয়, অন্য কী কারণ থাকতে পারে? সমকালের সামাজিক মাধ্যমে আপনার উত্তরও শেয়ার করতে পারেন।

সমকালে প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২২

ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।