Mahfuzur Rahman Manik
ব্যাংক খাতে তারল্য নয়, আস্থার সংকট
ডিসেম্বর 21, 2022

সাক্ষাৎকার: মামুন রশীদ

সাক্ষাৎকার গ্রহণ: মাহফুজুর রহমান মানিক

মামুন রশীদ প্রথিতযশা ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্নেষক। তিনি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক ও পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। ২০০১ সাল থেকে প্রায় এক দশক তিনি সিটিব্যাংক এনএতে কাজ করেন; তিনি ছিলেন ব্যাংকটির বাংলাদেশের প্রথম স্থানীয় প্রধান নির্বাহী। এর আগে সাড়ে আট বছর কাজ করেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে। ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত ঢাকায় ও ভারতের মুম্বাইয়ে কাজ করেন এএনজেড গ্রিন্ডলেইস ব্যাংকে। ব্যাংকিংয়ে অভিনবত্ব ও উৎকর্ষের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের 'করপোরেট এক্সিলেন্স' অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত মামুন রশীদ যুক্তরাজ্যের হেনলি বিজনেস স্কুল থেকে এমবিএ ডিগ্রি নিয়েছেন ১৯৯৭ সালে। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও প্রকাশনায় ব্যাংকিং এবং সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে ছাপা হয়েছে তাঁর অনেক লেখা ও সাক্ষাৎকার। তিনি অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

সমকাল: ব্যাংক খাত নিয়ে সাম্প্রতিক খবর মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। অনেকেই তাঁদের আমানত তুলে ফেলছেন। আমানত তুলে ফেলার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে কি?

মামুন রশীদ: অনেকটা লাগামহীন মূল্যস্ম্ফীতি, ডলার সংকটসহ বৈশ্বিক মন্দার আভাস ইত্যাদির সম্মিলিত প্রভাবে ভবিষ্যতে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কা আছে- এমন ভয়ে কেউ কেউ ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে ফেলার ভাবনায় তাড়িত হয়ে থাকতে পারেন। এটি ব্যাংকের তারল্য বা নগদের সংকট নয়, বরং আস্থার সংকট। সেই সঙ্গে অবশ্য রয়েছে ভালো ব্যাংক ও খারাপ ব্যাংকের পার্থক্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংক ব্যবস্থায় অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। ফলে ভালোভাবে পরিচালিত ব্যাংকে আমানতের সমস্যা হচ্ছে না। তবে প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কি চাইলেই বাণিজ্যিক ব্যাংকে নগদ টাকা সরবরাহ করতে পারে? আমানতকারীরা যেসব বাণিজ্যিক ব্যাংকে অর্থ ও সঞ্চয় জমা রেখেছেন, তাঁদের সেবার গ্যারান্টি বাংলাদেশ ব্যাংক আগ বাড়িয়ে কেন দিচ্ছে? কেন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজেরা আমানতের নিরাপত্তার ব্যাপারে গ্রাহক যোগাযোগ বাড়াচ্ছে না?

সমকাল: এ পরিস্থিতিতে করণীয় কী?

মামুন রশীদ: এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত বাণিজ্যিক ব্যাংককে এই বলে সতর্ক করা- তারা যাতে মাঝারিসহ বড় চেক অনার করার সময় গ্রাহক হয়রানি না করে। যে কোনো নগদায়নকে সহজ করে; কোনো ব্যাংক যাতে প্রবেশপথ বা অর্থ উত্তোলন বুথের সামনে লিখে না রাখে- এক লাখ টাকার বেশি উত্তোলনে এক কর্মদিবস আগে জানাতে হবে। পাঁচ লাখ টাকার বেশি নগদায়নে যাতে গড়িমসি করা না হয়, গ্রাহকদের যেন না ঘোরায়। কোনো ব্যাংক বা ব্যাংকের কর্মকর্তার খারাপ আচরণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব আকারে ছড়িয়ে গেলে মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হবে। গ্রাহকরা বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে টাকার বিনিময়ে যে সেবা চান, তাঁকে সেই সেবার নিশ্চয়তা দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত নিজের রেগুলেটরি ক্ষমতা পোক্ত করা, ব্যাংকিং সেবা কিংবা অর্থ উত্তোলনে হয়রানি হচ্ছে কিনা, সেসব যাচাই-বাছাই করে পদক্ষেপ নেওয়া। গ্রাহক যদি বুঝতে পারেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সঠিক সময়ে সঠিক নিয়ন্ত্রণ করছে না, তাহলে তারল্য সংকট না থাকলেও আস্থার সংকট কিছুতেই কমবে না।

সমকাল: সমকালে সাম্প্রতিক নিবন্ধে আপনি ব্যাংক খাত নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলেছেন। দুশ্চিন্তার জায়গাটা তৈরি হলো কেন?

মামুন রশীদ: সুশাসনের অভাব, বেপরোয়া দুর্নীতি, ব্যাংক পরিচালনায় রাজনৈতিক ও পরিচালকদের হস্তক্ষেপ এবং খেলাপি ঋণের মাত্রাতিরিক্ত ঊর্ধ্বগতির কারণেই মূলত এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। করোনা ও বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব এই দুর্বলতাকে আরও গভীরে নিয়ে গেছে। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক গতিতে বাড়ায় তা প্রকাশ্যে চলে আসে। এতে মানুষ নতুন করে সঞ্চয় করতে পারছে না। বরং আগের সঞ্চয় ভেঙে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করছে। ঋণ পরিশোধ কমে গেছে। বিশেষ ছাড়ে ঋণকে নিয়মিত রেখে কোনো সুদ আদায় না করেও কাগুজে মুনাফার মাধ্যমে আয় বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ ছাড়ের পরও খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। খেলাপির মধ্যে আদায় অযোগ্য বা কুঋণের পরিমাণই অনেক বেশি। বড় গ্রাহকদের ঋণের বড় অংশই এখন কুঋণে পরিণত হয়েছে। এসব কারণে ব্যাংক খাত নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়ে চলেছে।

সমকাল: ঋণখেলাপি একটি বড় সমস্যা। এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?

মামুন রশীদ: বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্যাংকে মোট খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কোনো ঋণ খেলাপি থাকলে এর সুদ আয় খাতে নেওয়া যায় না। শুধু হিসাব করে আলাদা একটি হিসাবে স্থগিত সুদ হিসেবে রাখতে হয়। খেলাপি ঋণের বিপরীতে এমন স্থগিত সুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের মোট বাজেটের ৩৩ শতাংশ। খেলাপি হওয়ার আগের ধাপে রয়েছে আরও ৪৫ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকার ঋণ। এগুলোর কিস্তি পরিশোধের মেয়াদ শেষ হলেও করা হচ্ছে না। ফলে কিস্তি পরিশোধ না করলে ছয় মাস পরেই এগুলো খেলাপি হয়ে যাবে। তখন এসব ঋণের সুদও আয় খাতে নেওয়া যাবে না। খেলাপি ঋণ ও প্রভিশন ঘাটতি বাড়ার কারণে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ বেড়ে গেছে। একই কারণে কমে গেছে মূলধন।

সমকাল: সুশাসনের অভাব, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের মতো বড় চ্যালেঞ্জ ব্যাংকগুলো কীভাবে মোকাবিলা করতে পারে?

মামুন রশীদ: ব্যাংকের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি, অনিয়ম হলে এর নেতিবাচক প্রভাব রাষ্ট্রকে বিপদের দিকে ধাবিত করে। তবে আজকের সময়ে দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, দেশে ব্যাংক খাতের প্রসার যেমন দ্রুত ঘটেছে, তেমনি বেড়েছে এ খাতে অনিয়ম। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি থেকে শুরু করে বিসমিল্লাহ গ্রুপ, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, ক্রিসেন্ট জালিয়াতি, এটিএম কার্ড জালিয়াতিসহ ছোট-বড় অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে হরহামেশা। ব্যাংক খাতে এসব ঘটনার বড় কারণ হলো, সুশাসনের অভাব। যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার হয় না। আইন তাদের স্পর্শ করতে পারে না, যার কারণে ব্যাংক খাতে একের পর এক কেলেঙ্কারি ঘটে চলেছে। ব্যাংক খাত ও অর্থনীতি বাঁচানোর জন্য সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। দুর্নীতিবাজ, অর্থ পাচারকারী, ব্যাংকের টাকা লুটকারীরা যত বড়ই হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

সমকাল: দেশের রাজনীতির আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা। এটি অর্থনীতিকে কতটা প্রভাবিত করতে পারে?

মামুন রশীদ: অনেককেই বলতে শুনেছি, বর্তমানে ক্ষমতাসীনদের নীতি হচ্ছে- 'যে আমার সঙ্গে নেই, সে আমার বিরুদ্ধে।' ওদিকে বিরোধী পক্ষও সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নানা পন্থা অবলম্বন করছে। ফলে উদ্বেগ বাড়ছে সাধারণ মানুষের মনে। আমাদের দেশের গণমানুষ কিন্তু এখনও যথেষ্ট সাবধানী। অনেক হিসাব-নিকাশ করেই চলে, সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এত সাবধানী হয়েও তাদের কোনো লাভ হয়েছে বলে মনে হয় না। যখন যারা ক্ষমতায় এসেছে তখন তারাই গোষ্ঠীস্বার্থে অসংযমী ও বেপরোয়া হয়েছে। সরকার আইএমএফসহ অন্য দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করছে। দাতাদের সঙ্গে এ নিয়ে দরকষাকষিও করছে। এটি নিশ্চিত আমাদের সরকার অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কিছু সংস্কার করতে সম্মত হবে। কিন্তু বিরাজমান বাস্তবতায় রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া অর্থনৈতিক সংস্কারের উদ্যোগ খুব একটা কাজে দেবে বলে মনে হয় না।

সমকাল: বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি- সংকটের শঙ্কা আসলে কতটা?

মামুন রশীদ: বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার বড় ঝুঁকি না থাকলেও বিদেশ থেকে সবসময় খাদ্য আমদানি করে দেশের চাহিদা মেটানো বেশ দুরূহ। খাদ্য ও ভোগ্যপণ্য উৎপাদনে বহুল পরিচিত দেশগুলোয়ও খাদ্য উৎপাদন কম হচ্ছে। সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দাম বেড়েছে। পত্রিকান্তরে জানা গিয়েছে. নিজেদের প্রয়োজন মেটানোকে প্রাধান্য দিয়ে এখন পর্যন্ত ২৫টি দেশ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। কিছু দেশ আবার নানা ধরনের বিধিনিষেধও আরোপ করেছে। একদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যের জোগান নেই। অন্যদিকে দেশে ডলারের সংকটের কারণে খাদ্য আমদানির জন্য এলসি বা ঋণপত্র খোলা সম্ভব হচ্ছে না। এতে খাদ্য আমদানি কমে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামীতে খাদ্য আমদানি আরও কঠিন হবে। মোকাবিলা করতে হবে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ। যদিও বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদনের পরিসংখ্যান নিয়ে ইতোমধ্যে আস্থার অভাব দেখা দিয়েছে, তারপরও বলা যায়, বিশ্ব খাদ্য উৎপাদন ঘাটতির প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে।

সমকাল: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এর বাস্তবায়ন কীভাবে সম্ভব?

মামুন রশীদ: আমাদের প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় কৃষিবিদরাও কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য আমদানি কমাতে হবে। তাহলে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট থেকে দেশের স্বল্প আয়ের মানুষকে অনেকটা রক্ষা করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে তাঁরা দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে চলমান কর্মসংস্থান ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এ জন্য কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে চাঙ্গা রাখার পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এখনই যেখানে যে দামে সার, চাল, গম পাওয়া যায়, সেগুলো সংগ্রহ করার সুপারিশ করা হয়েছে। আমাদের অবশ্যই কৃষি উৎপাদনে জোর দিতে হবে। কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে ধরে রাখতে হবে। দরিদ্র মানুষের জন্য খাদ্যের বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীও জোরদার করতে হবে।

সমকাল: রাত থেকে সাধারণ মানুষ ওএমএসের লাইনে। দ্রব্যমূল্যেও সুখবর নেই। এভাবেই কি চলবে?

মামুন রশীদ: হতদরিদ্র পরিবারকে সহায়তা করার জন্য চাল ও আটা খোলাবাজারে বিক্রির (ওএমএস) কর্মসূচি চালু করেছে সরকার। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এখন ওএমএসের পরিবেশকের বিক্রয়কেন্দ্রে ভিড় করছেন মধ্যবিত্তরাও। তবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় অনেককে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। সুখবর নেই কোথাও। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রভাব সব জায়গায় বিরাজমান। গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ম্ফীতি বিরাজ করছে। অবশ্য সরকারের কর্তাব্যক্তিদের মতে, মূল্যস্ম্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে নীতিমালাগত সহায়তার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজার তদারকি এবং পণ্য চলাচল বাধাহীন করা হচ্ছে।

সমকাল: বাজার নিয়ন্ত্রণে কী করা যেতে পারে?

মামুন রশীদ: আগেই বলেছি, আমরা যদি খাদ্য সংকট মোকাবিলা করতে চাই, তাহলে অবশ্যই স্থানীয় উৎপাদনে নজর দিতে হবে। উৎপাদকদের প্রণোদনা দিতে হবে। ঠিক সময়ে সার-বীজ সরবরাহ ও সেচের ব্যবস্থা করতে হবে; স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খল বজায় রাখায় সব উদ্যোগ চালিয়ে যেতে হবে। সত্যিকারের উৎপাদকরা যাতে পণ্যের সঠিক মূল্য পান, তা নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির ক্ষেত্রে বন্ধুরাষ্ট্র চিহ্নিত করে কিংবা ব্যক্তি খাতের পরিচিত বৃহৎ আমদানিকারকদের সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনে ত্বরিত আমদানির ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্ভরশীল ও আধুনিক শস্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাও গড়ে তুলতে হবে।

সমকাল: ডলার সংকট থেকে উত্তরণের উপায় কী?

মামুন রশীদ: বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা তাদের পরামর্শে ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন- বাফেদা এই অবস্থা ঠেকানোর জন্য তিন স্তরের ডলারের বিনিময় হার ঠিক করে দিয়েছে। বেশ কিছুদিন আগে থেকেই রেমিট্যান্সে অধিক সুবিধা আর প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক মাসে খোলাবাজারে ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় মানুষ আবার হুন্ডির দিকে নজর দিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিদেশে যাওয়ার হার কমছে। এমনকি বেশ কিছু মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসী ফেরতও চলে আসছেন। আরেকটি সমস্যা হলো, আমদানি-রপ্তানির ডলার বিনিময় হারে বিশাল পার্থক্য। আমদানি নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা কিছুটা কাজ করলেও এটি অন্য অনেক খাতকে বিপদে ফেলেছে। তবে ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় আমরা বেশ কিছুটা রপ্তানি বৃদ্ধিও দেখাতে পারছি। অদূর ভবিষ্যতে আমরা হয়তো বড় রকমের আগের আমদানি দায় নিষ্পন্নের চ্যালেঞ্জও দেখব।

সমকাল: রিজার্ভ কমেই চলছে, স্থিতিশীলতার জন্য কী করতে হবে?

মামুন রশীদ : আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সেপ্টেম্বরের হিসাবে ৩৬ বিলিয়ন ডলার হলেও আইএমএফের হিসাবে তা সাড়ে ২৮ বিলিয়ন ডলার। তার মানে আমাদের সরকারের যা লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা পূরণ হচ্ছে না। সরকার আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এডিবি থেকে সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে। সংস্থাগুলো তা দিতে রাজিও হয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তুএই স্বল্প পরিমাণ ঋণ আসলে দেশের দুই মাসের খরচ জোগানোর জন্যও যথেষ্ট নয়। আমাদের তাই বৈদেশিক মুদ্রায় এমনকি স্থানীয় মুদ্রায়ও আয় বাড়াতেই হবে।

সমকালে প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২

ট্যাগঃ , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।