উত্তর কোরিয়ায় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো রোববার। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বৈঠক মিডিয়ায় যতটা আলোচনায় এসেছে, তার সিকি ভাগও আলোচনায় আসেনি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম পরমাণু ক্ষমতাধর দেশটির নির্বাচন। কারণ দেশটিতে চলছে একনায়কতান্ত্রিক শাসন। তারপরও সেখানে নির্বাচন হয়। পাঁচ বছর অন্তর নির্বাচন হতে হবে, এটাই দেশটির নেতা কিম জং উনের খেয়াল।
স্বাভাবিকভাবেই উত্তর কোরিয়ার নির্বাচনের ফল ভোটের আগে থেকেই সবার জানা। কিম জং উনের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টি যাকেই মনোনয়ন দেবে, সে-ই ভোটে দাঁড়াবে। এখানে প্রার্থী একজন এবং তিনিই নির্বাচিত হবেন। আমাদের দেশে যেমন কোথাও প্রার্থী একজন হলে, তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই নির্বাচিত হয়ে যান। সেখানে এ নিয়ম নেই। নিয়ম হলো- প্রার্থী একজন থাকবেন, তাকেই সবাই ভোট দেবেন। এ জন্য উত্তর কোরিয়ার নির্বাচনকে সবাই বলছেন 'রাবার স্ট্যাম্প' ইলেকশন অর্থাৎ যেখানে ভোটারের কোনো বিচার-বিবেচনা নেই। ফলে দেশটিতে যেভাবে ভোট হয়, তা বিশ্বের জন্য কৌতূহলের বিষয়ই বটে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাই নির্বাচনের দিন রোববার অনলাইনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যার শিরোনাম বাংলায়- উত্তর কোরিয়ায় নির্বাচন মানে আসলে কী। যেখানে বলা হয়েছে, দেশটিতে ১৭ বছরের অধিক বয়স্ক প্রত্যেক নাগরিকের ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক। যদিও ব্যক্তির কিছু নেই, পার্টির মনোনীত ব্যক্তিকেই সবাই ভোট দেবেন।
উত্তর কোরিয়ায় কিম পরিবার রাজতান্ত্রিকভাবে দেশটিতে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। এ রাজপরিবারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন উত্তর কোরীয় প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। এ জন্য নির্বাচনের দিন সকাল সকাল সবাইকে ভোটকেন্দ্রে হাজির হতে হয়। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তারা ব্যালট পেপার নেন। তারপর সেটি খোলা জায়গায় রক্ষিত বাক্সে ফেলতে হয়। তবে গোপন বাক্সেও ব্যালট ফেলা যায়; এমনকি কাগজে-কলমে কেউ দলের মনোনীত প্রার্থীকে পছন্দ না হওয়ায় ক্রস মার্ক দেওয়ার নিয়মও আছে। তবে সে ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই গোপনে তাকে পুলিশ অনুসরণ করবে। জেরা করবে, শেষ পর্যন্ত হয়তো তারা তাকে পাগল বলে ঘোষণা দেবে- বলছে বিবিসি।
ভোট প্রদান পর্ব শেষ করে প্রত্যেককে যোগ দিতে হয় এক আনন্দ উৎসবে। সেখানে দেশের যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট প্রদান করায় আনন্দ প্রকাশ করতে হয় সব নাগরিককে। প্রত্যেক নির্বাচন কেন্দ্রের সঙ্গেই রয়েছে এ আনন্দ উৎসবের স্থান। নানা বাহারি রঙের পোশাক পরে ফুল হাতে সবাই আনন্দযজ্ঞে অংশ নেন। যেন নির্বাচনের দিনটি উত্তর কোরিয়ায় যতটা না নির্বাচন, তার চেয়ে বেশি উৎসব।
উত্তর কোরিয়ার একমাত্র আইনসভা সুপ্রিম পিপল'স অ্যাসেমব্লি বা এসপিএর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও ৭০০ আসনবিশিষ্ট এ সভার নির্বাচিতদের কোনো ক্ষমতাই নেই। তারাও 'রাবার স্ট্যাম্প' বডি। দলের তরফ থেকে যা লেখা হয়, তারা কেবল ফর্মালিটি হিসেবে তারই অনুমোদন দেন। এমনকি এসপিএর সভা নিয়মিত বসে না। প্রয়োজন হলে সভা ডাকা হয়।
মজার ব্যাপার হলো, উত্তর কোরিয়ায় দল রয়েছে তিনটি। দ্য ওয়ার্কার্স পার্টি, যার চেয়ারম্যান কিম জং উন। রয়েছে দ্য সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি আর চন্দইস্ট চংগু পার্টি। তবে ওয়ার্কার্স পার্টিই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ। অন্যদের আসন রয়েছে সামান্যই এবং তিন দলই আসলে একজোট।
২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত উত্তর কোরিয়ার নির্বাচনে দেখানো হয়েছে, ভোটার উপস্থিতির হার ৯৯.৯৭ শতাংশ। আর রোববারের নির্বাচনেও সেখানে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, অল্প কিছু ভোটার যারা বিদেশে বা সাগরে কাজ করে, তারা ছাড়া সব ভোটারই উপস্থিত।
ভোটারের পছন্দ-অপছন্দ নেই, নির্বাচিতদের ক্ষমতা নেই, ভোটার উপস্থিতি প্রায় শতভাগ এবং ভোটের দিনটি কেবল আনন্দ আর আনন্দ। এ এক আজব নির্বাচন!