Mahfuzur Rahman Manik
বাংলোর আন্তর্জাতিকতা
সেপ্টেম্বর 19, 2018

বাংলো শুনলে আমাদের মানসপটে সেই বিশেষ ঘর বা বাড়ির চিত্র উঠে আসে, যেটি উচ্চপদস্থদের বাসগৃহ। বাংলা একাডেমির অভিধানে বাংলো শব্দের অর্থ দেওয়া আছে- চওড়া বারান্দাযুক্ত একতলা বাড়িবিশেষ; বিশেষ আদলে তৈরি বাড়ি; গ্রামবাংলার সম্পন্ন গৃহস্থের বাইরের বৈঠকখানা; পদস্থ চাকুরেদের সরকারি বাসগৃহ ইত্যাদি। বাস্তবে নানা জায়গায় আমরা দেখি, সরকারি জেলা-উপজেলার ডাকবাংলো। বিশিষ্ট কারও বাংলো। এই যে বাংলো, যাকে বাংলা হিসেবেও অভিহিত করা হয়; অনেকে ভাবতে পারেন, এই অভিধাটি বুঝি কেবল বাংলাদেশ কিংবা ভারতীয় উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ। বিষয়টি তা নয়। ৯ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের প্রভাবশালী দৈনিক গার্ডিয়ান তাদের লাইফ অ্যান্ড স্টাইল বিভাগে ফিচারধর্মী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে; শিরোনাম- দ্য রাইজ অব দ্য বাংলো: 'পিপল ক্যান বি স্নোবিশ, বাট এটিটুডস আর চেঞ্জিং'। বোঝাই যাচ্ছে, প্রতিবেদনটি ইংল্যান্ডে বাংলোর সংখ্যা বৃদ্ধির কথা বলছে। প্রতিবেদনটির সূচনা বেশ চমকপ্রদ। যেটি বলছে, বাংলো শব্দটি এসেছে হিন্দি 'বাংলা' হতে। যার অর্থ বাংলা সংশ্নিষ্ট। ঔপনিবেশিক শাসনামলে এর প্রচলন হয়। ব্রিটিশদের রাজত্বের সময় প্রশাসকদের বাংলোতে এসে করদাতারা বড় বারান্দায় বসত। বারান্দা চা-চাষি কিংবা তাদের ভৃত্যদেরও বসার স্থান ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলের সেই বাংলোই ইংল্যান্ডে বাংলো প্রচলনের মূল কারণ।

বাংলাদেশের বাইরে বাংলো আজ কেবল ইংল্যান্ডেই সীমাবদ্ধ নয়; অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকারও বাংলোর কথা বলছে উইকিপিডিয়া। এদের অধিকাংশের গঠনই বাংলাদেশের বাংলোর আকৃতির। এটি সাধারণত একটি বড় কটেজের মতো। যেটি একতলা কিংবা দোতলাবিশিষ্ট। সামনে থাকছে লম্বা করিডোর।

ইংল্যান্ডে অবশ্য বাংলো জনপ্রিয়তা পায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। বিশেষ করে ষাটের দশকে এটি অবসরপ্রাপ্তরা লুফে নেয়। অনেক সিঁড়ি বেয়ে যাদের ওপরে উঠতে কষ্ট হয়। তবে গার্ডিয়ানের শিরোনামে স্নোবিশ তথা উন্নাসিক শব্দটি আলোচনার দাবি রাখে। এটা স্পষ্ট যে, সেখানে বাংলোর ব্যাপারে নাক সিটকানোর একটা ব্যাপার রয়েছে। কেন এমনটা হতে পারে- একতলা কিংবা দোতলার কারণে? মানে বহুতল ভবনের ভিড়ে একতলা-দোতলা ভবন খটকা লাগাতে পারে। তারপরও সেখানে বাংলো সংখ্যা বাড়ছে। এমনকি গার্ডিয়ান প্রতিবেদনটির সঙ্গে একটি শিল্পীর স্টুডিওর ছবি প্রকাশ করেছে। যিনি তার বাংলোকে নান্দনিক ইন্টেরিয়র সাজে সাজিয়েছেন। ফলে সেখানে মানুষের ধারণায়ও পরিবর্তন আসছে। বাংলো বাড়ছে।

আমাদের এখানে ধারণা উল্টা বলা যায়। যেখানে আমরা বাংলো মানেই বুঝি পদস্থ কারও বাসগৃহ; সেখানে সাধারণ মানুষের মাঝে বাংলো নিয়ে নেতিবাচক ধারণা থাকা অস্বাভাবিক নয়। এখানে নেতিবাচকতার কারণ হতে পারে; একসময় এগুলো ছিল শাসকশ্রেণির বাসগৃহ। ক্ষমতাবানরা হয়তো এগুলোতে থেকে সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার করত। এটা হিংসা কিংবা বিদ্বেষার্থে উন্নাসিকতা হতে পারে। এখানেও গার্ডিয়ানের শিরোনামের সঙ্গে মিলিয়ে বলা যায়, মানুষের ধারণার পরিবর্তন ঘটছে।

ক্যালিফোর্নিয়া বাংলো নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী যে বাংলা রয়েছে, তারও উৎপত্তি আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশেই। যারা আসলে ব্রিটেন থেকে এটি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে এটি বিশেষ জনপ্রিয়তা পায়।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া বাংলো আকৃতির দিক থেকে একেবারে মিল না থাকলেও নাম যে আমাদের কাছ থেকেই ধার করা, তা বলা বাহুল্য। উঁচু ভবনের ভিড়ে কারও নিজস্ব কিংবা কোনো পদস্থের জন্য পুরো এক বাংলো ব্যাপারটাই অন্যরকম। আমাদের বাংলোর অধিবাসীরা তা নিয়ে গর্ব করতেই পারেন- সেটা ইতিবাচক, নেতিবাচক যে যেভাবেই নিক।

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।