Mahfuzur Rahman Manik
এভারেস্ট জয়ের ৬৫ বছর
এভারেস্ট মহাবিশ্বের বিস্ময়। স্রষ্টার অপার মহিমায় হিমালয় পর্বত দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবীর সব কিছুকে ছাড়িয়ে

বিদ্রোহী কবি নজরুল 'সংকল্প' করেছেন- 'থাকব না কো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জৎগটাকে'। জগৎ দেখার, বিশ্ব জয় করার, বিশ্বকে হাতের মুঠোয় আনার যে নেশা নজরুল মানুষের মাঝে ধরিয়েছেন সে মানুষ সত্যি সত্যিই পৃথিবী জয় করেছে। 'কিসের অভিযানে মানুষ চলছে হিমালয়ের চূড়ে' নজরুলের এ প্রশ্নের উত্তরও সে জয়ের নেশা। তা না হলে সুদূর নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড থেকে এডমান্ড হিলারি কেন আসবেন নেপালে? কেনই বা তার সঙ্গী হয়েছেন নেপালি তেনজিং নরগে? তাদেরও সংকল্প ছিল পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হিমালয় চূড়া এভারেস্ট জয় করা। তারা সেটা পারলেন আজ থেকে ৬৫ বছর আগে, ২৯ মে ১৯৫৩ সালে।

৮ হাজার ৮৪৮ মিটার উচ্চতার এভারেস্ট জয় সাধারণ কোনো বিষয় নয়। এভারেস্ট পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া হিসেবে চূড়ান্তভাবে ১৮৫৬ সালে আবিস্কৃত হয়। তখন থেকেই এর শীর্ষে আরোহণের নেশা মানুষকে পেয়ে বসে। বলাবাহুল্য হিলারি-তেনজিং হয়তো প্রথম সফল কিন্তু এর আগেও মানুষ চেষ্টা করেছে। অনেকে ব্যর্থ হয়েছে, কেউ কেউ তা জয় করতে গিয়ে জীবনও দিয়েছে। এভারেস্ট যে সর্বোচ্চ চূড়া- সে খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অদম্য পর্বতারোহীরা তা জয় করতে নানা দেশ থেকে এসে ভিড় জমায় এভারেস্টের দেশ নেপালে। ব্রিটিশরা ১৯২১ সালের অভিযানে নামে। জর্জ ফিঞ্চ প্রথমবারের মতো অক্সিজেন ব্যবহার করে পর্বতারোহণ করেন। তিনি ৮ হাজার ৩২০ মিটার ওপরে ওঠেন, যা ছিল প্রথম কোনো মানুষের ৮০০০ মিটারের বেশি উঁচুতে আরোহণ। এরপর ম্যালোরি এবং কর্নেল ফেলিক্স দ্বিতীয়বারের মতো ব্যর্থ অভিযান করেন। তাদের দলটি উত্তরের গিরি খাত বেয়ে নামতে গিয়ে ভূমিধসের কবলে পড়ে এবং সাতজন পর্বতারোহী নিহত হন। এভাবে চলতে থাকে আরও ৩২ বছর।

১৯৫৩ সালে হিলারি ও তেনজিংয়ের সফল অভিযানের পর এ পর্যন্ত চার হাজারের অধিক মানুষ এভারেস্টে উঠেছেন। এভারেস্ট জয় করতে গিয়ে দুই শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এভারেস্ট অভিযান চলছে এখনও। বাংলাদেশ অবশ্য এভারেস্ট জয় করে ২০১০ সালে। ৬৭তম এভারেস্টজয়ী দেশ আমরা। প্রথম এমএ মুহিত, নিশাত মজুমদার ও ওয়াসফিয়া নাজরিন এভারেস্ট চূড়ায় বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা ওড়ান।

এখনও যারা এভারেস্ট চূড়ায় ওঠেন তাদের প্রেরণা কিন্তু ওই এডমান্ড হিলারি ও তেনজিং নরগে, আর তাদের আরোহণের দিনটিই তথা ২৯ মে পৃথিবীতে এভারেস্ট দিবস হিসেবে পরিচিত। তেনজিং এবং হিলারি ২৭৩০০ ফুট উচ্চতায় দক্ষিণ পূর্ব দিক দিয়ে উঠেছেন। পর্বতের দক্ষিণ মুখ দিয়ে কঠিন এই পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পা রাখেন এই দুই পর্বতারোহী স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টায়। তারা পর্বত শিখর থেকে ছবি তোলেন কিছু দৃশ্যের। তারা এভারেস্ট চূড়ায় ব্রিটেন, নেপাল, জাতিসংঘ এবং ভারতের পতাকা ওড়ান।

এ দু'জনের মধ্যে কে প্রথম এভারেস্ট চূড়া জয় করেন তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। অনেকে বলেন, এডমন্ড হিলারি আগে চূড়ায় ওঠেন তখন তেনজিং নরগে খুব কাছাকাছিই ছিলেন। তবে বিশ্ববাসী প্রথম হিসেবে এ দু'জনকেই চেনে। একসঙ্গে এ দুঃসাহসিক অভিযান সম্পন্ন করার পর স্বাভাবিকভাবেই তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। নেপালে তাদের অভিযানের স্মারক হিসেবে উভয়ের নামে একটি এয়ারপোর্টের নামকরণ করা হয়- তেনজিং-হিলারি এয়ারপোর্ট।

হিলারি-তেনজিংয়ের সে সময়কার অভিযান আর আজকের অভিযানের ব্যবধান অনেক। তারা দু'জন যখন এভারেস্টে যান, তখন সম্পূর্ণ অচেনা এক জগতের খোঁজে ছিলেন। এখন এভারেস্ট চূড়ায় আরোহণের মানচিত্র সহজলভ্য। জিপিএস আরোহীদের হাতে হাতে। পথপ্রদর্শক হিসেবে সার্বক্ষণিক শেরপা যেমন আছে তেমনি রয়েছে আধুনিক সরঞ্জামও। তারপরও এভারেস্ট মহাবিশ্বের বিস্ময়। স্রষ্টার অপার মহিমায় হিমালয় পর্বত দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবীর সব কিছুকে ছাড়িয়ে। ৬৫ বছর আগের হিলারি-তেনজিং তো বটেই; আজও যারা এটি জয় করেন তারা অদম্য, দুঃসাহসী।

ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।