Mahfuzur Rahman Manik
অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন পুলিশ!
এপ্রিল 18, 2018
মানুষ পুলিশ মানে বোঝে অন্যরকম ক্ষমতার অধিকারী। সেটা পুলিশের যে পর্যায়ের চাকরিই হোক না কেন।

লেখাটি যখন লিখছি (মঙ্গলবার বিকেল, ১৭ এপ্রিল ২০১৮) টাইমস অব ইন্ডিয়ার অনলাইন সংস্করণের প্রধান শিরোনাম- 'কনস্টেবলস ইন গুজরাট আর ইঞ্জিনিয়ারস, এমবিএস অ্যান্ড টেকিস!' অর্থাৎ গুজরাটের পুলিশ কনস্টেবলরা ইঞ্জিনিয়ার, এমবিএ পাস ও প্রযুক্তিবিদ! প্রতিবেদনটি গুজরাটের বরোদা রেঞ্জের আইজিপি, ২০১৭ সালের এলআরডি বা লোক রক্ষক দল এ নিয়োগ বোর্ডের প্রধান জিএস মল্লিকের তরফে বলছে- নিয়োগ পাওয়া ১৭,৫৩২ জন কনস্টেবলের মধ্যে অর্ধেকের বেশিই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। যেখানে আবেদনের যোগ্যতা ১২ শ্রেণি পাস, যেটি আমাদের এইচএসসি। এলআরডি বা লোক রক্ষক দল নামে এ চাকরিতে প্রথম পাঁচ বছর একটি নির্ধারিত টাকা বেতনে নিয়োগ দেওয়া হয়। পাঁচ বছর পর তাদেরকে নিয়মিত কনস্টেবল হিসেবে অভিষিক্ত করা হয়। প্রতিবেদনের শুরুতে আহমেদাবাদের নবরংপুরা পুলিশ স্টেশনের চিত্র উঠে এসেছে, সেখানে দু'জন এলআরডি জওয়ান রয়েছেন এমবিএ ডিগ্রিধারী, একই স্টেশনে এ রকম আরও পাঁচজন আছেন, যারা বিসিএ, বিএ, বিএড পিজিডিসিএ ও এমএসসির মতো প্রফেশনাল ডিগ্রিধারী।

আমাদের অবস্থাও যে খুব একটা ভালো, তা নয়। এখানে কনস্টেবল পদে চাকরির যোগ্যতা এসএসসি পাস হলেও এইচএসসি পাস করা কিংবা ডিগ্রি বা তদূর্ধ্ব স্নাতকরাও যে আবেদন করেন, তা বলা বাহুল্য। অধিক শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াও এ পদের জন্য ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দিতেও প্রস্তুত অনেকে। এমনকি হয়তো টাকা দিয়েও অনেকে স্বপ্নের কনস্টেবল হতে পারেন না! বাংলাদেশে পুলিশের চাকরি সম্পর্কে এটাই যেন ওপেন সিক্রেট।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে গুজরাট ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষকের মন্তব্য উঠে এসেছে। তিনি বলছেন, বেসরকারি খাতে নিরাপদ চাকরির অভাবে চাকরি ও শিক্ষার মধ্যে এ বৈষম্য। ফলে নিরাপদ চাকরিতে অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন তরুণও আকৃষ্ট হচ্ছে, হোক না সেটা ছোট পদ কিংবা কম বেতন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এটি সত্যি। সরকারি চাকরিতে এইচএসসি পাস চাওয়া হলেও স্নাতকধারীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। দু-একটা পদের জন্য হাজার হাজার শিক্ষার্থী আবেদন করেন। তারপরও অনেকের কাছে চাকরি নামের সোনার হরিণ সেভাবে ধরা দেয় না।

পুলিশের চাকরির ব্যাপারে গুজরাট ইউনিভার্সিটির সে শিক্ষক আরও বলেছেন, সমাজের মানুষ পুলিশ মানে বোঝে অন্যরকম ক্ষমতার অধিকারী। সেটা পুলিশের যে পর্যায়ের চাকরিই হোক না কেন। তাই মানুষ সেখানে আকৃষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি বাংলাদেশের জন্যও প্রযোজ্য। একে তো পুলিশ, তার ওপর সরকারি চাকরি; ফলে শিক্ষাগত যোগ্যতা এখানে গৌণ।

তারপরও শিক্ষার গুরুত্ব যে কম, তা নয়। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ের যারা কম যোগ্যতার চাকরিতে আবেদন করেন, সেখানে নিশ্চয়ই নানা বিষয় রয়েছে। অনেকের হয়তো চাকরির বয়স শেষ পর্যায়ে, নানা জায়গায় পরীক্ষা দিয়ে, আবেদন করেও চাকরি জোটাতে পারেননি- শেষ পর্যায়ে তাই বাধ্য হয়েছেন। কারও হয়তো চাকরিটা খুব দরকার, অনেক কষ্টে পড়াশোনা শেষ করেছেন। আপাতত একটাতে ঢুকে জীবন নির্বাহ করে ভালো কোনো চাকরির চেষ্টা করছেন। এভাবে নানা সমীকরণ থাকলেও মোটের ওপর এটা ঠিক, যে পরিমাণ গ্র্যাজুয়েট প্রতিবছর বেরোচ্ছে, সে পরিমাণ চাকরি নেই। আমাদের এখানে যেমন নেই, সোয়াশ' কোটি জনসংখ্যার ভারতের অবস্থাও তথৈবচ। টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, নরেন্দ্র মোদি দুই কোটি চাকরির ব্যবস্থা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন; কিন্তু দুঃখজনকভাবে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।

এখানে আরেকটি বিষয়ও বলা প্রয়োজন। আমরা যতটা না চাকরি খুঁজছি, তার চেয়ে কম উদ্যোক্তা হতে চাইছি। নিজে কিছু করার যেমন ইচ্ছার অভাব রয়েছে, তেমনি পারিপার্শ্বিক অবস্থাও কম দায়ী নয়। ফলে অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন পুলিশই আমাদের নিয়তি!

ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।