Mahfuzur Rahman Manik
সিঙ্গাপুর পারছে, কিন্তু ঢাকা?
অক্টোবর 30, 2017
সিঙ্গাপুরে ব্যক্তিগত গাড়ির নিবন্ধন বন্ধ হচ্ছে

সিঙ্গাপুরে ব্যক্তিগত গাড়ির নিবন্ধন বন্ধ হচ্ছে ফেব্রুয়ারি থেকে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছোট দেশটির এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ সড়কের সীমাবদ্ধতা। কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, সিঙ্গাপুরের ১২ শতাংশ জায়গা সড়ক হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। তবে সিঙ্গাপুর উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঢাকার দ্বিগুণের চেয়ে বড় আয়তনের দেশ সিঙ্গাপুরে এমনিতেই ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবস্থাপনা খুব ব্যয়বহুল। সেখানে গাড়িচালককে সরকার থেকে একটি বিশেষ সনদ কিনতে হয়, যার মূল্য ৩০ লাখ টাকার মতো, তাও ১০ বছরের জন্য। দেশটিতে চলতি বছর শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ গাড়ি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়, ফেব্রুয়ারি থেকে তা শূন্যে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেওয়া হয়। ২৩ অক্টোবর সেখানকার যানবাহন কর্তৃপক্ষ (ল্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি) কর্তৃক ইস্যুকৃত এ সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০২০ সালে তারা আবার যানবাহনের প্রবৃদ্ধি পর্যালোচনা করবে। অবশ্য সেখানে ব্যবসায়িক যানবাহনের নিবন্ধন শূন্য দশমিক ২৫ হারে চলবে।

সিঙ্গাপুর যখন এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তখন ঢাকার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাম্প্রতিক এক হিসাবে দেখা গেছে, ঢাকার রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ির সুবিধা ভোগ করে মাত্র ৬ শতাংশ মানুষ, অথচ এই গাড়িগুলো ৭৬ শতাংশ সড়ক দখল করে রাখে। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যানুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে ৫৩টি নতুন ব্যক্তিগত গাড়ি ঢাকার রাস্তায় নামে। যানজট ঢাকার নিত্যকার চিত্র। অনেকে এর জন্য ব্যক্তিগত গাড়িকে দায়ী করেন। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে এখানে কার্যকর ব্যবস্থা নেই। একই সঙ্গে ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থাও যাচ্ছেতাই। অবশ্য নানা সময়ে সরকারের তরফ থেকে উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়ন হয় না কিংবা সুফলও সেভাবে আসে না। দেশে ২০০৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ২০ বছর মেয়াদি কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) প্রণয়ন করা হয়েছিল। ২০০৬ সালে এসটিপি অনুমোদন হয়। এর পর তিন বছর এসটিপির সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে বড় কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। এসটিপির পরিকল্পনায় ছোট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে বড় গাড়ি বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। বাস্তবে বড় গাড়ির বদলে ছোট ছোট গাড়ি নামা উৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ চলাচলের জন্য সেভাবে গণপরিবহন পাচ্ছে না। উল্টো অনেকেই ঋণ করে কিস্তিতে শোধ করার শর্তে ব্যক্তিগত গাড়ি কিনতে বাধ্য হচ্ছে। কঠোর নিয়ম নেই বলে কোনো কোনো ধনী পরিবারে একাধিক ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে।

সরকার ২০১৫ সাল থেকে সড়ক পরিবহন আইন করে। এখনও তা চূড়ান্ত হয়নি। অবশ্য এ বছর মার্চ মাসে মন্ত্রিসভার বৈঠকে 'সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭' নীতিগতভাবে পাস হয়। তাতে পরিবারপ্রতি গাড়ির সংখ্যা নির্ধারণের বিধান রাখার কথা সংসদে বলেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আমরা জানি না, সে আইনটি কবে চূড়ান্ত হবে। এর বাইরে কিছু উদ্যোগ দেখা গেছে, সড়ক পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ), ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ সরকারি-বেসরকারি ৫৯টি সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগে রাষ্ট্রীয়ভাবে এ বছর প্রথম ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালিত হয়। এসবের মাধ্যমে হয়তো কিছুটা সুফল পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু প্রকৃত অর্থেই ঢাকাকে বাঁচাতে সিঙ্গাপুরের মতো কঠোর ব্যবস্থার বিকল্প নেই। অন্যথায় দিন দিন ঢাকার যানজট বাড়বে, সড়ক দুর্ঘটনা বাড়বে, বসবাসের অযোগ্য হবে ঢাকা।

ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।