Mahfuzur Rahman Manik
সাঁতার কেটে অফিসে!
আগস্ট 7, 2017
বৃষ্টিতে ঢাকার সড়ক যখন নদী!

জার্মানির বেঞ্জামিন ডেভিডের সাঁতার কেটে অফিসে যাওয়ার খবর ২৪ জুলাই 'দি ম্যান হু সুইমস টু ওয়ার্ক' শিরোনামে বিবিসিতে প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনের সঙ্গে ৩ মিনিট ৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে তার সাঁতরে অফিসে যাওয়ার বিস্তারিত রয়েছে। বেঞ্জামিন ব্যস্ত সড়কপথে গাড়ির জ্যামে অতিষ্ঠ। তিনি অফিসে যাওয়ার বিকল্প মাধ্যম খুঁজছিলেন। জার্মানির মিউনিখের ইসার নদীতে সাঁতার কাটতে কাটতে তিনি পেঁৗছে যান কর্মস্থলে। নদীতে দুই কিলোমিটার সাঁতার কেটে তিনি সড়কপথের চেয়ে কম সময়ে গন্তব্যে পেঁৗছতে পারেন। সাঁতারের পোশাক পরে ল্যাপটপ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগে ঢুকিয়ে তিনি নেমে পড়েন নদীতে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, আল্পস পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন ইসার নদীর স্বচ্ছ পানি। নদীর দুই পাড় যেন সবুজের মেলা। পরিবেশ দেখে যে কারও সাঁতার কাটতে ইচ্ছা হবে। জার্মানির মিউনিখের ইসার নদী সাঁতরে অফিসে যাওয়া যায়। আমাদের ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে কি তা সম্ভব? উত্তরটা বলার অপেক্ষা রাখে না। দখল-দূষণে বুড়িগঙ্গা মৃতপ্র্রায়। নানা উদ্যোগ নিয়েও বুড়িগঙ্গাকে বাঁচানো যাচ্ছে না। বুড়িগঙ্গার কোনো কোনো অংশ যেন ময়লার ভাগাড়। সেখানে সাঁতার কাটা দূরে থাক, তীরে দাঁড়ানোও দায়। পানিতে উৎকট দুর্গন্ধ। অতিরিক্ত দূষণের ফলে বুড়িগঙ্গা জীববৈচিত্র্য ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এটা ঠিক যে, বুড়িগঙ্গাকে কেন্দ্র করে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে নিয়ে বৃত্তাকার নৌপথ তৈরি করে চালুও করা হয়েছিল। কিন্তু দিন দিন তা অকার্যকর হয়ে পড়ে। কয়েক মাস আগে (৩ মার্চ ২০১৭) সমকালের এক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল 'বৃত্তাকার নৌপথ অকার্যকর :কোটি টাকার পন্টুনে খাবারের ব্যবসা!' ২০০৪ সাল থেকে তিন দফা উদ্যোগ নিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ হওয়ার পরও ঢাকার বৃত্তাকার নৌপথ সফলতার মুখ দেখেনি। অথচ ঢাকার নদী ও খালগুলো দিয়ে নৌপথ থাকলে মানুষের যাতায়াত কত সহজ হতো! এখন খালের অস্তিত্ব সঙ্গিন, আর নদীর দুর্দশা তো আমরা দেখছিই। অবশ্য হাতিরঝিলে নৌপথ চালু হয়েছে। রামপুরা থেকে কারওয়ান বাজার যোগাযোগের সুবিধা হয়েছে।
বলা বাহুল্য, রাজধানী ঢাকার মধ্যে গণপরিবহন ব্যবস্থা নাজুক। এখানে পদে পদে ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের। যানজটের কথা বলে কী লাভ! আসলে ঢাকার মতো প্রায় সব মেগাসিটির সড়কপথের বাইরে বিকল্প চলাচল মাধ্যম রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সড়কের নিচ দিয়ে সাবওয়ে ট্রেন খুব জনপ্রিয়। ঢাকায় যদিও মেট্রোরেলের কাজ চলছে। তারপরও আমাদের জন্য নৌপথ খুব ভালো বিকল্প ছিল।
তবে বেঞ্জামিনের সাঁতারের উদ্যোগ অভিনব। তিনি ঠিক সাঁতারকেই কেন বেছে নিলেন? তার মনে সাঁতারের আইডিয়া কীভাবে এলো? উত্তরটা ইন্টারেস্টিং, সেটি ভিডিওতেও দেখা যাচ্ছে। বেঞ্জামিন বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, দেড়শ' বছর আগে এই ইসার নদী ছিল যাতায়াতের মাধ্যম। এ নদী দিয়ে জার্মানি, রোম, ভিয়েনার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হয়। কিন্তু ১০০ বছর ধরে তা বন্ধ হয়ে আছে। বেঞ্জামিন সে নদীকে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছেন। তবে তা কোনো জাহাজ, লঞ্চ কিংবা নৌকা দিয়ে নয়, বরং ব্যক্তিগত উদ্যোগে; সাঁতরে। আহা! আমাদের যে এমন কত নদীপথ বন্ধ হয়ে গেছে! কত নদী বিলীন হয়ে গেছে! নদীগুলো এখন দখল-দূষণে মৃতপ্রায়। কোথাও সাঁতারের পরিবেশও নেই। বেঞ্জামিনের সাঁতার কেটে অফিসে যাওয়া কেবল যানজটের সমাধান নয়, বরং একটি আন্দোলনও বটে।
তবে আমরাও একটি বিকল্প পেতে পারি ডেভিডের মতো। রাজধানী ঢাকার সড়কে যেভাবে নিয়মিত পানি জমছে, তাতে দ্রুত অফিসে পেঁৗছাতে সাঁতার ভালো উপায় হতে পারে বৈকি!

ট্যাগঃ , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।