Mahfuzur Rahman Manik
মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক

মাতৃদুগ্ধ যে শিশুর সর্বোত্তম খাদ্য তাতে কারও দ্বিমত নেই। জন্মের পর প্রয়োজনীয় সব পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এ খাবার প্রতিটি শিশুর জন্য নিশ্চিত করার তাগিদ স্বাভাবিক। হয়তো সেদিক থেকেই মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ। যেসব শিশু নানা কারণে মায়ের দুগ্ধ থেকে বঞ্চিত তাদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির যথাযথ জোগান নিশ্চিত করার জন্য এ ব্যাংক। ভারতের দিলি্লতে এটি চালু হওয়ার খবর দিয়েছে বুধবারের আনন্দবাজার পত্রিকা। 'মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক চালু দিলি্লতে' শিরোনামের প্রতিবেদনটি বলছে, মঙ্গলবার দিলি্লতে 'আমারা' নামের মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক চালু করেছে দুটি বেসরকারি সংস্থা। প্রতিবেদনটি আরও জানাচ্ছে, ভারতে এ রকম ১৪টি ব্যাংক চালু রয়েছে। তাদের যুক্তি হলো, 'অনেক সময়ই শারীরিক পরিস্থিতির জন্য দুগ্ধ উৎপাদনে মায়েরা অক্ষম হয়ে থাকেন। এ ছাড়াও রাস্তাঘাটে এমন অনেক শিশুর খোঁজ মেলে, যাদের মায়ের পরিচয় জানা যায় না। অপুষ্টিতে ভোগা এসব শিশুর জন্যই মাতৃদুগ্ধ ব্যাংকের সূচনা'। উন্নত বিশ্বে মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক অবশ্য সাধারণ ব্যাপার। মাদার্স মিল্ক ব্যাংক, দ্য মিল্ক ব্যাংক, মাদার্স মিল্ক ইত্যাদি নানা নামে বিভিন্ন দেশে এটি চালু আছে। একে হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক বা ব্রেস্ট মিল্ক ব্যাংকও বলা হয়।
মাতৃদুগ্ধ ব্যাংকে সাধারণ মায়েদেরই দান করা দুগ্ধ পাস্তুরিত করে রাখা হয়। যারা দান করে তাদের সুস্থতা ও পারিপাশর্ি্বক বিষয় দেখা হয়। বিশেষ কিছু রোগ আছে কি-না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েই ডোনেশন সম্পন্ন করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাতৃদুগ্ধ ব্যাংকগুলো স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত হয়। উইকিপিডিয়া বলছে, আন্তর্জাতিকভাবে এ কার্যক্রম পরিচালনা করতে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল মিল্ক ব্যাংকিং ইনিশিয়েটিভ। ৩৩ দেশে রয়েছে মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক। ব্রাজিলে রয়েছে ২১০টি, ইউরোপে ২০৩টি, লাতিন আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকায়ও মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক চালু রয়েছে। যার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশু উপকৃত হয়ে আসছে। এখন মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক প্রতিবেশী ভারতেও দেখছি। যদিও ভারতে আগে থেকেই মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক চালু ছিল।
শিশুকে মাতৃদুগ্ধ প্রদানের ব্যাপারে সবসময়ই গুরুত্বারোপ করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাতৃদুগ্ধ মায়েদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এটি সন্তানের সঙ্গে মায়ের আত্মিক সম্পর্ক আরও বাড়ায়। বিভিন্ন দেশে তো বটেই, এমনকি বাংলাদেশেও মায়েদের বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে উৎসাহিত করতে সরকারিভাবে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। গ্রামের মায়েরা সাধারণত বুকের দুধের বিকল্প চিন্তাও করেন না। অনেকে অবশ্য বিকল্প খাওয়ান। গত মার্চ মাসে প্রকাশিত বেসরকারি এক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে চার বছরে মাতৃদুগ্ধ পানের হার হ্রাস পেয়েছে ৯ শতাংশ এবং বৃদ্ধি পাচ্ছে গুঁড়াদুধ খাওয়ানোর পরিমাণ। তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশে শিশুদের মাতৃদুগ্ধ পানের হার কমে যাওয়ার ঘটনাকে দুঃখজনক বলেছিলেন।
মাতৃদুগ্ধের ব্যাপারে যেমন মায়েদের উৎসাহিত করা হয়েছে তেমনি অন্যদেরও উৎসাহিত করা হয়েছে। কোনো শিশু অন্য মায়ের দুগ্ধ পান করলে তাকে দুধ মা বলা হয়, তার সন্তানরাও দুধ ভাই-বোন হিসেবে চিহ্নিত হন। সেদিক থেকে বিশেষ করে অসহায় শিশুদের উপকারার্থে মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। নিজের সন্তানের সুস্থতার জন্য মায়েদের যেমন বুকের দুধ খাওয়াতে আগ্রহী হওয়া উচিত তেমনি সুযোগ থাকলে অন্য শিশুর উপকারার্থে মাতৃদুগ্ধ প্রদানেও সচেষ্ট হওয়া সমাজেরই কল্যাণ।

 

 

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।


Warning: First parameter must either be an object or the name of an existing class in /home/mahfuzma/public_html/wp-content/plugins/bit-form/includes/Admin/Form/Helpers.php on line 119

Warning: First parameter must either be an object or the name of an existing class in /home/mahfuzma/public_html/wp-content/plugins/bit-form/includes/Admin/Form/Helpers.php on line 119

Warning: First parameter must either be an object or the name of an existing class in /home/mahfuzma/public_html/wp-content/plugins/bit-form/includes/Admin/Form/Helpers.php on line 119