আবহাওয়া জানান দিচ্ছে, চৈত্র মাসই চলছে। যদিও এর আগের পরিবেশ ছিল একেবারে ভিন্ন; বৃষ্টি, মেঘলা আকাশে ভর করে পার হয় কয়েকটি দিন। এরপর গত কয়েকদিনের তাপদাহে পুড়ছে মাঠঘাট। পুড়ছে মানুষ। পশুপাখি, প্রাণিকুলও অতিষ্ঠ। নয়তো পানি পেয়ে দুটি বুলবুলির ভিজিয়ে নেওয়ার এমন ছবি শনিবারের সমকালে হয়তো দেখা যেত না। মাহবুব হোসেন নবীন ছবিটি তুলেছেন ঢাকার কোনো এক বাসার ওপর থেকে। ছাদের কার্নিশে জমে থাকা একটু পানির খোঁজ পেয়েছিল দুটি বুলবুলি। গরমের প্রশান্তি হিসেবে নিজেদের সেখানে ভিজিয়ে নিতে দেরি করেনি তারা। সে দুর্লভ চিত্র দেখতে পেয়ে তুলতেও একটুখানি ভুল করেননি ফটোসাংবাদিক। ছবি তোলার দিন শুক্রবার রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি বছরে রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। শনিবারের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৪.৮ ডিগ্রি। রোববারের তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
অবশ্য বাড়াবাড়ি মাত্রার তাপমাত্রা কেবল ঢাকায়ই নয়; দেশের সবখানে। সমকাল যেমন এ ছবি ছেপেছে, তেমনি তাপদাহের চিহ্নস্বরূপ তরমুজ খাওয়ার দৃশ্য, শিশুদের সাঁতারের দৃশ্য, মুখে পানি ছিটানোসহ নানা দৃশ্যও সংবাদপত্রে এসেছে। এগুলো প্রচণ্ড গরমের প্রশান্তি। গরমে মানুষ একটু প্রশান্তি খোঁজে। বাস্তবে দেখা যায়, অনেক সময় প্রশান্তির উপকরণগুলো দুর্লভ হয়ে যায়। যেমন এ সময় ঠিকমতো বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। বিশেষ করে গ্রামের মানুষ বেশি ভোগান্তির শিকার হন। সেখানে বিদ্যুৎ একবার গেলে অনেক সময় সহজে আসে না। শহরেও বিদ্যুৎ-পানির সমস্যা দেখা দেয়। মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। অনেক সময় চাতক পাখির মতো একটু পানির অপেক্ষা করে মানুষ। বিদ্যুৎ আসার প্রতীক্ষা করে। যদিও আজকালকার মানুষ সবক্ষেত্রেই বিকল্প ব্যবস্থা করে রাখে। বিদ্যুতের অনুপস্থিতিতে চার্জার লাইট-ফ্যান রয়েছে। বিকল্প হিসেবে রয়েছে জেনারেটরও। গরমে গ্রামের হাতপাখাও যে গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প।
গরমে হাঁফিয়ে বুলবুলি আজ ছাদের কার্নিশে জমে থাকা পানিতে প্রশান্তি খুঁজছে। প্রখর তাপে যে তারাও দগ্ধ। তাদের এ সুন্দর চিত্র হয়তো ফটোগ্রাফারকে ফাঁকি দিতে পারেনি; কিন্তু প্রকৃতিতে এ রকম কত লীলাই না হচ্ছে। আমাদের অগোচরে এ রকম ঘটনা হয়তো নিরন্তরই ঘটছে। সবই প্রকৃতির খেলা। কয়দিন হয়তো এ রকম তাপদাহ আমরা দেখছি, এরপর যে আবার কালবৈশাখী তুলবে সেও তো সে খেলারই অংশ। প্রকৃতি কখন রুষ্ট হয়, কখন সদয় হয়, তাও কেউ জানে না। এর মধ্যেই আমাদের বেঁচে থাকা। বুলবুলিদের প্রশান্তি একটুখানি পানিতে ভিজিয়ে নেওয়া আর আমাদের প্রশান্তি কয়দিনের তাপদাহের পর বৃষ্টি। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সেটাও হয়তো বেশি দূরে নেই।