দেশে মোবাইল ফোনের উত্থান রীতিমতো এক বিপ্লব। অনেকের চোখের সামনে দিয়ে নীরবে এ বিপ্লব সংঘটিত হয়ে গেছে। নতুন প্রজন্ম তো বটেই, এক যুগ আগে মোবাইল ফোন ছাড়া যাদের দিব্যি সময় কাটত, এখন এটি ছাড়া যেন তারাও অচল। মোবাইল সহজলভ্য হয়েছে। ১১ ডিজিটের নম্বর মানুষের হাতে হাতে এসেছে। এখানে গরিব-ধনীর পার্থক্য নেই। নম্বরে না হলেও পার্থক্য বোধহয় এক জায়গায় আছে_ মোবাইল সেটে। দামের তারতম্যের কারণে বেশি দামের মোবাইল সেট কেনার সামর্থ্য হয়তো সবার নেই। যাদের টাকা আছে বেশি তারা দামি সেট ব্যবহার করতে পারেন। আজকাল বেশি দামের মোবাইল সেট মানে অবধারিতভাবেই স্মার্টফোন। তবে আমাদের ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ঘোষণায় বোঝা যাচ্ছে, সে পার্থক্যও তেমন থাকছে না। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে তিনি ২৫ থেকে ৩০ টাকার মাসিক কিস্তিতে স্মার্টফোন দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে টেলিকম সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
মন্ত্রী মহোদয় তার বক্তব্যে বলেছেন, সবার জন্য হ্যান্ডসেট সহজলভ্য করতে এ উদ্যোগ। হ্যান্ডসেট বললেও তিনি সাধারণ কোনো সেটের কথা বলেননি, একেবারে স্মার্টফোনের কথাই বলেছেন। স্মার্টফোন দিয়ে কথা বলা বা মেসেজ পাঠানোর পাশাপাশি ছবি তোলা, অডিও-ভিডিও করা, বই পড়া, এফএম রেডিও শোনা, বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনসহ নানা ধরনের কাজ করা যায়। তবে এর সবচেয়ে কার্যকর কাজ সম্ভবত ইন্টারনেট চালানো। ডেস্কটপ কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপে ইন্টারনেটে যেভাবে কাজ করা যায়, তার প্রায় সবই স্মার্টফোনে সম্ভব। ২৫-৩০ টাকার কিস্তিতে স্মার্টফোন পাওয়া অনেকের জন্যই হয়তো স্বপ্নের মতো। কিন্তু এ পদক্ষেপ কতটা বাস্তবসম্মত সে প্রশ্নই থেকেই যাচ্ছে। এর আগে সরকারি উদ্যোগে ১০-১৫ হাজার টাকায় দোয়েল ল্যাপটপ সরবরাহের উদ্যোগের কথা আমাদের জানা। সে অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। এমনকি বিটিসিএলের এ ল্যাপটপ পরে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে বলে মনে হয় না।
এখন দেড়-দুই হাজার টাকায় কৃষক-মজুর সাধারণ মানুষের জন্য তৈরি স্মার্টফোন কতটা মানসম্পন্ন হবে, সে প্রশ্নের সঙ্গে সমান্তরালভাবে নানা প্রশ্ন চলে আসে। সত্যিকার অর্থেই স্মার্টফোন সাধারণ মানুষ পেলে তারা এর কতটা ব্যবহার করতে পারবেন। যেখানে অনেক শিক্ষিত মানুষও এর ব্যবহার ভালোভাবে জানেন না। স্মার্টফোনের যুক্তি হিসেবে ইন্টারনেটের কথা সর্বাগ্রে আসে। সাধারণ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে তথ্য পেলে, সচেতন হলে, যোগাযোগের কাজে ব্যবহার করতে পারলে নিঃসন্দেহে এটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, অনেকেরই সাধারণ ফোন ব্যবহার করার মতো সক্ষমতা নেই। সরকারের তথ্যমতে, এখনও ৩০ ভাগ মানুষ নিরক্ষর। আবার যারা ইন্টারনেট চালাতে পারেন, তাদের অধিকাংশই কেবল সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট চালাতে তা ব্যবহার করেন। এভাবে মোবাইলে অনেকে হয়তো অযথা সময়ও নষ্ট করেন। বলাই বাহুল্য, মোবাইল ফোন এখন এমন পর্যায়ে এসেছে একে আলাদাভাবে প্রমোট করা কতটা দরকার সে প্রশ্নও সঙ্গত। যেখানে সাম্প্রতিক হিসাব বলছে, দেশে ১৩ কোটির অধিক মোবাইল গ্রাহক রয়েছে। অনেকের হয়তো নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক জিনিসই নেই, অথচ তার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ মোবাইল ব্যবহার করতে ছাড়েন না।
এরপরও সবার স্মার্টফোন ব্যবহার করতে হবে? স্মার্ট হওয়ার জন্য স্মার্টফোন চাই-ই!