রানা ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়টা কোন কাকতালীয় ব্যাপার ছিলো না। তিনি পত্রিকায় লিখতেন, আমিও লিখতাম। দীর্ঘদিন তার নামের সঙ্গে, লেখার সঙ্গে পরিচিত। এমনকি দেখাটাও কাকতাল নয়। রিভারাইন পিপল সূত্রে রোকন ভাই মারফতে আমাদের দেখা। কিন্তু কাকতালটা একসঙ্গে থাকা। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাছাড়া পড়াশোনায়ও এক বছর সিনিয়র। তারপরও দেড় বছরের মত সময় আমরা এক সঙ্গে ছিলাম। আমার অনার্স-মাস্টার্স শেষ। দীর্ঘদিনের প্রিয় সলিমুল্লাহ মুসলিম হল আমি ছেড়ে দিবো। রানা ভাই চট্টগ্রামের পাট চুকিয়ে কয়েকমাস আগেই ঢাকা এসেছেন। ভালো বাসা খুজছেন। তখনি আমি জানতে পারি। আমরা একসঙ্গে বেরিয়ে পড়ি বাসার খোজে।
সেদিনের কথা মনে পড়ছে, প্রথম দিন যখন আমাদের উভয়েরই কর্মস্থলের নিকটবর্তী স্থান ফার্মগেট এলাকায় বাসা খুজি। তখন রানা ভাই কাজ করেন বণিক বার্তায়। আমি সমকালেই। সেদিনের বাসা খোজার তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে সমকালে লিখেছিলাম ‘ভালো বাসা’। যার প্রথম দু’টি বাক্য
ছিলো- ‘ভালো বাসাকে অনেকে ভালোবাসা বলে ভুল করতে পারেন। তবে ঢাকা শহরে কোনো ব্যাচেলর যদি বাসা খুঁজতে যান, ভালো বাসা পাওয়ার চেষ্টা করে থাকেন, তার হয়তো বুঝতে বাকি থাকবে না- এ দুয়ের মাঝে বিশেষ কোনো তফাত নেই।’ যাহোক অবশেষে একটা বাসা মিলল। ওই এলাকায়ই। পূর্ব তেজতুরি বাজার। উঠলাম ২০১৩ সালের মার্চ মাসের ১ তারিখ। খাওয়া-দাওয়ার সমস্যা। কেউই তখন রান্না করতে পারতাম না বলা চলে। অফিস ও আশেপাশের হোটেল-রেস্তোরায় খেতাম। সে বাসায় থাকলাম ৯ মাস। তারপর তার পাশেই আরেক বাসায় উঠলাম। সেখানে অবশ্য খাওয়ার একটা ব্যবস্থা হলো। সময়গুলো আমাদের ভালোই কাটছিলো। এ বাসায় ওঠার পর পরই রানা ভাই জয়েন করলেন প্রথম আলোতে। যদিও সে বাসায় আমি বেশিদিন থাকতে পারালাম না। পরের বছরের আগস্টের ১ তারিখ চলে এলাম মিরপুর। ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার জন্য চলে আসতে হলো।
রানা ভাই এবং আমি উভয়ই সাংবাদিক। লেখালেখির ঝোক দু’জনেরই। তারপরও মানুষে মানুষে ভিন্নতা থাকা স্বাভাবিক। স্বভাবগত দিক থেকে আমার অন্তর্মুখীতা সহ্য করেছেন তিনি। নানা সময়ে নানা বিষয়ে নানা আলোচনা করেছি দু’জন। আমি লাইব্রেরি থেকে বই আনলে তিনি পড়তেন। তার বই আমি পড়েছি। নতুন গল্প লিখলে প্রথমে আমাকেই পড়াতেন এবং মন্তব্য করতে বলতেন। যদিও সাহিত্য নিয়ে আমার ধারণা কম। তারপরও আমার মন্তব্য গুরুত্ব দিতেন। আসলে তিনি ভালো লিখেন। এ বছরের বই মেলায় তার প্রথম গল্পের বই প্রকাশ হয় ‘আঁধারে আলোকরেখা’।
সে বাসা থেকে চলে এলেও আমাদের সম্পর্কে এতটুকু চিড় ধরেনি। যদিও তিনি এখন অনেকের ভাষায় ‘সেলিব্রেটি’ হয়ে গেছে। খেলা কাভার করেন। দুনিয়ার তারকা খেলোয়াড়ের সঙ্গে ফেসবুকে তার ছবি, সেলফি দেখে বুঝতে কষ্ট হয় না। তারপরও তিনি আমাদের রানা ভাই। রানা আব্বাস। কয়েকদিন আগে তিনি যখন সমকালে এসেছিলেন্ যাওয়ার আগে তার আন্তরিকতাপূর্ণ কথা, একসঙ্গে থাকার সেই সব দিনের কথাই আমাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
আজ ভোরে ঘুম থেকে উঠেই যখন ফেসবুকে দেখলাম রানা ভাইয়ের জন্মদিন তখন গত বছরের ডায়েরিটা হাতে নিলাম। উদ্দেশ্য অবশ্য ডায়েরি ছিলো না; ডায়েরিতে সযতনে রাখা একটি চিঠি। যে চিঠিটি তিনি আমি বাসা ছাড়ার আগে, গোপনে লিখে আমার ডায়েরিতে রাখেন। মিরপুরের বাসায় ওঠার অনেকদিন পর যখন ডায়েরিটা ভালো করে নাড়াচাড়ার পর চিঠিটা পাই তখন মনে হয়েছিলো, এতদিন থাকার পরও আসলে তাকে চিনতে পারিনি। অসাধারণ সে চিঠির বিষয়ে না হয় আরেকদিন বলা যাবে। আজ তাকে কেবলই সাধারণ শুভেচ্ছা।
শুভ জন্মদিন, রানা ভাই।
- ১৩ সেপ্টেম্বর রানা (আব্বাস) ভাইয়ের জন্মদিন উপলক্ষে ফেসবুকে প্রকাশিত নোট
ট্যাগঃ জন্মদিন, লেখালেখি, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা