Mahfuzur Rahman Manik
ভালো বাসা
ফেব্রুয়ারী 28, 2013

bachelorভালো বাসাকে অনেকে ভালোবাসা বলে ভুল করতে পারেন। তবে ঢাকা শহরে কোনো ব্যাচেলর যদি বাসা খুঁজতে যান, ভালো বাসা পাওয়ার চেষ্টা করে থাকেন, তার হয়তো বুঝতে বাকি থাকবে না_ এ দুয়ের মাঝে বিশেষ কোনো তফাত নেই। তাই অনেকে বলেন, 'ব্যাচেলরদের ভালো বাসা পাওয়া ভালোবাসা পাওয়ার মতোই কঠিন।' তাদের বাসা পাওয়ার বিড়ম্বনা অবশ্য নতুন কোনো বিষয় নয়। এ নিয়ে নাটক হয়েছে, আরও কত কী হয়েছে। এরপরও বাড়িওয়ালারা ব্যাচেলরদের ভাড়া দিতে চান না। বিশেষ করে ভালো বাসা বলতে যা বোঝায়, সেগুলো যেন ব্যাচেলরদের জন্য নয়।
ঢাকা শহরে যারা পড়াশোনা করতে আসেন কিংবা পড়াশোনা শেষ করে চাকরিজীবনেও ব্যাচেলর হিসেবে ঢাকায় থাকতে চান, তারা যে কত কষ্টে থাকেন, বলাই বাহুল্য। ঢাকায় পড়াশোনার সূত্রে হোস্টেল, ইউনিভার্সিটি হলের পাট চুকিয়ে যখন বাসা খুঁজতে বের হলাম তখনই সেটা টের পেলাম। ঢাকার বাসা বিষয় একরকম অনভিজ্ঞ হিসেবে প্রথম ভরসা রাস্তায় লেখা 'টু-লেট' কিংবা 'বাসা ভাড়া দেওয়া হবে' সংক্রান্ত লিফলেট। ঢাকার ফার্মগেটের মতো এলাকা থেকে এ রকম কয়েকটি নম্বর জোগাড় করে বাসাপ্রার্থী এক বড় ভাই মিলে বাসা দেখতে গেলাম। প্রথমটি দেখেই তার স্বগতোক্তি_ 'এটা তো শরণার্থী শিবির।' একটি রুমকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কয়েকটি ছোট ছোট উপরুম। হার্ডবোর্ড দিয়ে ঘেরা এসব রুম কোনোটা এক বেডের, আবার কোনোটা দুই-তিন বেডের। আলো-বাতাস আসা তো দূরে থাক, নিঃশ্বাস নেওয়াটাও দুষ্কর। বাথরুমের কথা না বলাই ভালো। এরপরও সেখানে থাকছেন অনেকেই। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ভাড়া দিয়েই থাকছেন। নম্র, ভদ্র, অধূমপায়ী ব্যাচেলরদের অ্যাপার্টমেন্টে রুম ভাড়া দেওয়া হবে_ বিজ্ঞপিত এ রকম এক বাসায় গিয়ে যা দেখা গেল, সেটা আগেরটার চেয়েও ভয়াবহ। এটা আসলে বাসা নয়, বিশাল হোটেলের উপরের একতলা। পুরোটায় সেই হার্ডবোর্ডের অসংখ্য খুপরি। থাকা-খাওয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, গোসল, বাথরুম এসবের বলার মতো কোনো অবস্থা নেই। নিরাপত্তার কথা বলে আর কী লাভ! এখানেও আছেন অনেকে। ভাড়াটা মোটেও কম নয়।
ভাবলাম পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বুঝি আসল ভালো বাসার চেহারা দেখতে পাব। টু-লেট বিজ্ঞপিত কয়েকটায় ফোন দিলেই প্রথম প্রশ্ন_ ব্যাচেলর কি-না। উত্তর হ্যাঁ হলে, সরাসরি_ না। এগুলোতেও স্বাভাবিক পরিবেশের বাইরে বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্ন রুমগুলোতে ব্যাচেলরদের থাকার ব্যবস্থা আছে বটে। সেখানে এক রুমে গাদাগাদি করে থাকছেন অনেকে। তার ভাড়াটাও কম নয়। এ রকম অনেক বাসায় এসব রুমকে কেন্দ্র করে ব্যবসা গড়ে তুলেছেন অনেকে। একজন রুমমেট চলে গেলে 'টু-লেট' দিলে আরেকজন আসে।
এভাবেই ঢাকায় থাকছেন ব্যাচেলররা। এভাবেই তাদের থাকতে হচ্ছে। এর বাইরের চিত্র ব্যতিক্রম। অনেকে যে বলেন, ব্যাচেলর বিড়ম্বনার কিছুটা অবসান ঘটেছে; সেটা হয়তো সত্য। হলেও সেটা কম। তার ওপর ভাড়া দিলেও ব্যাচেলরদের গুনতে হয় স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে অনেক বেশি টাকা। কিন্তু মোটের ওপর এই সময়ে এসেও ঢাকার বাড়ির মালিকদের এই মানসিকতা দুঃখজনক।
ব্যাচেলরদের নিয়ে অনেক অভিযোগ আছে সত্য, তবে সবাই তো এক রকম নয়। অনেকের পরিবার গ্রামে থাকতে পারে, অনেকে প্রতিষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেন। তাদের স্বাভাবিক বাসায় ভাড়া থাকার অধিকার থাকা উচিত নয় কি। ব্যাচেলর থাকা তো অপরাধ নয়। ঢাকায় প্রতিনিয়ত যেমন মানুষ বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে ব্যাচেলর সংখ্যাও। ভালো বাসা পাওয়া কঠিন হলে তারা থাকবেন কীভাবে!

ট্যাগঃ , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।