Mahfuzur Rahman Manik
চুইংগাম এবং ঢাকা
এপ্রিল 29, 2015

Dhaka-skyscrapersসমস্যাসংকুল ঢাকার মডেল শহর কোনটি? এবারের সিটি নির্বাচনে প্রত্যাশিত শহর হিসেবে কোনো কোনো প্রার্থী সিঙ্গাপুরের কথা বলেছেন। যদিও আমাদের বাস্তবতায় সিঙ্গাপুর হওয়া কতটা সম্ভব, সে প্রশ্ন থাকাই স্বাভাবিক। কথা হলো, বিশ্বের এত এত উন্নত শহর থাকতে সিঙ্গাপুর কেন? সত্যিকার অর্থে, কিছু বৈশিষ্ট্য বিশ্বের অন্য অনেক শহরের তুলনায় সিঙ্গাপুরকে বিশেষ স্থান দিয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সৌন্দর্য, নাগরিক সুবিধা হয়তো অনেক শহরেই রয়েছে। সিঙ্গাপুরে এর চেয়ে বেশি কিছু রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম বিষয়, সেখানে চুইংগাম নিষিদ্ধ। গত ২৩ মার্চ আধুনিক সিঙ্গাপুরের রূপকার লি কুয়ান ইউর মৃত্যুর পর ২৮ মার্চ বিবিসি ম্যাগাজিনে হোয়াই সিঙ্গাপুর ব্যানড চুইংগাম শিরোনামের প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে আসে। আমাদের কাছে চুইংগাম খুবই সাধারণ বিষয় হলেও এটি নিষিদ্ধ হওয়ার নিগূঢ় কারণটা লি কুয়ানের তরফে এনেছে বিবিসি। ১৯৯২ সালে চুইংগাম নিষিদ্ধ হওয়ার পর অনেকদিন পর্যন্ত এ নিয়ে মুখ খোলেননি লি। তিনি মুখ খুললেন মার্কিন লেখক টম প্লেটের কাছে। লি কুয়ান ব্যাখ্যা করেন, সিঙ্গাপুরে ১৯৯২ সালের দিকে চুইংগামের দৌরাত্ম্য এত বেশি বেড়ে যায় যে, মানুষ এটি চিবিয়ে যত্রতত্র ফেলে রাখত। এমনকি মজা করে অনেকে লাগিয়ে দিত অফিসের চেয়ার, টেবিল ও দরজায়। চাবির ফুটোও রেহাই পায়নি তাদের হাত থেকে। লিফটের বোতাম, সাবওয়ে ট্রেনের দরজাসহ বিভিন্ন দেয়ালেও চুইংগামের আঠা লাগিয়ে রাখত। যেটা সত্যিকারার্থে দৃষ্টিকটু। পরিবেশের জন্য খারাপ। এসব পরিষ্কার করতে যখন গলদঘর্ম কর্মীরা, তখন চুইংগামের প্রতি দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও লি কুয়ান এটি নিষিদ্ধ করেন।
টম প্লেটের সূত্রে বিবিসি আবিষ্কৃত এই কারণের বাইরেও গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয় বের করেছেন এক অগ্রজ। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, সিঙ্গাপুর এক সময়ের জেলেপল্লী। জেলেপল্লী থেকে আজকের সিঙ্গাপুর হয়ে ওঠার পেছনে এই চুইংগাম অন্যতম ফ্যাক্টর। আসলে বিষয়টা চুইংগাম নয়। তার মতে, তারা শুরুটা করেছিলেন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে পরিবর্তন এনে। চুইংগাম তো আছেই, এর বাইরে রাস্তায় পানের পিক ফেলা নিষিদ্ধকরণ, শর্টকাট পথে না হেঁটে সঠিক রাস্তায় চলা ইত্যাদি।
চুইংগাম নিষিদ্ধ সিঙ্গাপুরের অধিবাসী লন্ডনে আসা এক শিক্ষার্থীর কথাও এসেছে বিবিসি প্রতিবেদনে। ইউজেন টেন নামে ওই শিক্ষার্থী বলছে, আমাদের রাস্তাঘাট এর চেয়েও সুন্দর। টেন আসলে হাঁটছিলেন লন্ডনের অক্সফোর্ড সার্কাসের রাস্তায়, যেটি চুইংগামের আঠায় ভরা। চুইংগামের গল্প ঢাকার জন্য কতটা মানানসই বলার অপেক্ষা রাখে না। ঢাকাকে যেখানে বসবাসের অযোগ্য বিশ্বের দ্বিতীয় শহর হিসেবে দেখানো হয়, যেখানে ঢাকাবাসী নাগরিক সুবিধার অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত, যেখানে বর্তমান Dhaka-slumজনসংখ্যার চাপে ঢাকায় প্রতিদিনই নতুন নতুন মানুষ যোগ হয়, যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকা নগরবাসীর নিত্য অভিজ্ঞতা, যেখানে ঢাকার অনেক রাস্তাই মনে হয় ডাস্টবিন; সেখানে ঢাকাকে সিঙ্গাপুর করার স্বপ্ন কতটা বড়, তা বুঝতে কারও কষ্ট হওয়ার কথা নয়। তারপরও আমাদের ঢাকা আসলে ঢাকা নয়, একটি বিশাল উন্মুক্ত জায়গা। সব শ্রেণী-পেশার মানুষ এসে এখানে একটুখানি আশ্রয় পায়। রোজগারের অবলম্বন পায়। এর মধ্যেও আমরা স্বপ্ন দেখি যতটা ভালো নগর গড়া যায়। সব নিয়েই তো আমাদের বাঁচতে হবে। নগর অধিপতিরাও নিশ্চয়ই সেভাবে পরিকল্পনা করবেন। আর সিঙ্গাপুরের চুইংগাম আমাদের জন্য রূপকথা মনে হলেও স্বপ্ন দেখার নিঃসন্দেহে বড় অবলম্বন।

ট্যাগঃ , , , , , ,

One comment on “চুইংগাম এবং ঢাকা”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।