Mahfuzur Rahman Manik
রঙিন রিকশা
জানুয়ারী 29, 2015

Rickshaw-1রঙিন বিশেষণযোগে 'রঙিন স্বপ্ন' স্বপ্নের চেয়ে বিশেষ কিছু কিনা জানা নেই। তবে রঙিনে রাঙায়িত যে কোনো জিনিস যে তার চেয়েও বেশি কিছু তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রঙিন ঘুড়ি বললে হয়তো একটা চকচকে ঘুড়ির কথা চিন্তা করা যায়, যেটি তৈরি করতে কয়েকটি রঙ ব্যবহার করা হয়েছে। তবে রঙিন সময় বললে সেখানে সত্যিকার রঙ পাওয়া যাবে না সত্য, কিন্তু এটা যে সময়ের চেয়ে মধুর কিছু তাও ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়ে না। ১৯ জানুয়ারি বিবিসিতে প্রকাশিত 'পেইন্টিং বালাদেশ'জ কালারফুল রিকশজ' নামক প্রতিবেদনটিতে যে রঙিন রিকশার কথা বলা হয়েছে তা আমাদেরই তিন চাকার প্রিয় বাহন। যেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিন চলতে-ফিরতে রিকশা ব্যবহার করে। আর ঢাকা হলো বিশ্বের রিকশার রাজধানী শহর।
প্রতিবেদনটির সঙ্গে ২ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও রয়েছে। যেটি আসলে প্রতিবেদনের প্রধান অংশ। প্রতিনিয়ত আমরা রিকশায় যে নানা ধরনের নকশা দেখি তা-ই এর প্রতিপাদ্য। রিকশাওয়ালা কিংবা রিকশার মালিক যত্ন করে যানবাহনটিতে রঙ করেন, আর্ট করেন। নানা বিষয় দিয়ে একে সাজান। কেউ প্রাকৃতিক পরিবেশের গাছগাছালি, পাখি ইত্যাদি ছবি অঙ্কন করেন। কেউ আবার বিখ্যাত মানুষদের ছবি আঁকেন। এভাবে হয়তো তিনি তার স্বপ্নকেই রাঙান। একদিকে তার প্রিয় জীবিকার অবলম্বন রিকশাকে সাজিয়ে হয়তো কিছুটা মানসিক তৃপ্তি পান। আবার একই সঙ্গে রঙিন চকচকে রিকশা হয়তো গ্রাহক জোগাড়েও সহায়ক। আসলে মানুষ তো সৌন্দর্যের পূজারি। সুন্দর যে কোনো কিছু সবাইকে আকৃষ্ট করে।
রিকশার এই আর্ট কেবল সৌন্দর্যই ফুটিয়ে তোলে না, একই সঙ্গে সময়কেও প্রতিনিধিত্ব করে। সেখানে আমাদের চারদিকের অবস্থাই তুলির আঁচড়ে উঠে আসে। সেদিক থেকে আগে রিকশায় কেমন আর্ট ছিল সে চিন্তা করতে পারি। মুক্তিযোদ্ধা এক অগ্রজ ১৯৭২ সালের কথা বলছিলেন, তখন রিকশার নকশায় নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন বিষয় উঠে আসত। আমাদের বিজয়ের সাক্ষ্য যেমন ছিল, তেমনি গণহত্যাসহ নানা অবিচারের অলঙ্করণও ছিল।
কেবল বিবিসির এই প্রতিবেদন নয়, রিকশার আর্ট নিয়ে নানা প্রতিবেদন ও গবেষণা রয়েছে। ইন্টারনেটে খোঁজ করে এ বিষয়ে উইকিপিডিয়ার পেজই নয়, বিভিন্ন ওয়েবসাইট-উদ্যোগও দেখা গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান রিকশায় আর্টের কাজ করে দেয়। এই আর্টিস্টের কাতারে প্রফেশনাল ডিগ্রিধারী যেমন রয়েছেন, তেমনি শখের বশে শিল্পীও আছেন।
Rickshaw-artsশিল্প যখন জীবনের কথা বলে, সেখানে রিকশায় শিল্প থাকবে না_ তা তো হতে পারে না। রিকশা যে আমাদের জীবনেরই অংশ। এর মাধ্যমে কেবল লাখো মানুষের জীবিকা আহরণই হচ্ছে না। লাখো পরিবারের স্বপ্নই কেবল এর মধ্যে জড়িয়ে নেই। একই সঙ্গে আরামপ্রিয় বাঙালির আহ্লাদি বাহনও যে রিকশা। রিকশায় চড়ে যে স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া যায়, অন্য বাহনে তা আছে কি-না জানা নেই। এই রিকশা তাই মানুষেরই প্রয়োজনে সেজেছে আপন সাজে। সেখানে সমাজের কথা আছে। উপদেশের বাণী আছে। সৃষ্টিকর্তার স্মরণ আছে। আছে আরও কত কি। চলতে-ফিরতে এ রিকশা যে এত কথা বলছে, তা হয়তো অনেকেই খেয়াল করি না। তবে চাক্ষুষ্মানদের চোখ নিশ্চয়ই এড়ায় না।

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।