Mahfuzur Rahman Manik
স্বাক্ষর বনাম প্রযুক্তি?

signস্বাক্ষর মানুষের সম্পদের মতো। ব্যক্তির স্বাতন্ত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে এটি। সব ধরনের পরিচয়পত্রে ব্যক্তির যেমন ছবি থাকে, একই সঙ্গে তার স্বাক্ষরও থাকে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও স্বাক্ষরই তার পরিচয় বহন করে। অফিসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর ব্যক্তির উপস্থিতির প্রমাণ। এর উপস্থিতির বড় প্রমাণ অটোগ্রাফে; অনেকে বিখ্যাত কিংবা পছন্দের মানুষের অটোগ্রাফ বা স্বাক্ষর নেন আগ্রহভরে। সেটা দেখে মানুষ তার উপস্থিতি অনুভব করেন। কর্তাব্যক্তিরা স্বাক্ষর দিয়ে সম্মতি দেন। আইনপ্রণেতারা স্বাক্ষরে আইন পাস করেন। স্বাক্ষরে অনেকে পদোন্নতি পান আবার অনেকের চাকরিও যায়। তবে স্বাক্ষরের বড় উপস্থিতি মনে হয় ব্যাংকের চেকে। যে স্বাক্ষর গ্রাহককে তার প্রয়োজন অনুযায়ী হাজার হাজার কিংবা লাখ লাখ টাকা এনে দেয়। ব্যক্তি স্বয়ং না গিয়েও অন্যকে কেবল ওই স্বাক্ষর সংবলিত একটি চেক দিয়ে পাঠালে ব্যাংক টাকা দিয়ে দিতে বাধ্য হয়। স্বাক্ষরই এখানে ব্যক্তির প্রতিনিধিত্বের বড় প্রমাণ। অনেক সময় তো স্বাক্ষরও ব্যক্তির তুলনায় বড় হয়ে যায়! ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সময় ব্যক্তি যে স্বাক্ষর দেন, তার সঙ্গে চেকের স্বাক্ষরে একটু ব্যতিক্রম হলেও ব্যাংক নোটিশ করে, টাকা দেয় না। এটি ঠিক করে টাকা নিতে হয়। কিন্তু ব্যাংকে আজকাল এ স্বাক্ষর কতটা কার্যকর।
সম্প্রতি বিবিসি ম্যাগাজিনে 'ইজ অ্যা সিগনেচার স্টিল ইউজফুল?' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন সে কথাই বলছে। প্রতিবেদনটি যে প্রশ্ন তুলছে ব্যাংকের ক্ষেত্রে তার উত্তর অনেকের জানা। টাকা উঠানোর জন্য যখন ব্যাংকে গিয়ে চেক নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা লাগে না; যখন আমরা (অন্তত শহরের মানুষ) পথের ধারে অসংখ্য ব্যাংকের বুথ থেকে যে কোনো টাকা উঠাতে পারি; যখন ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথ থেকে টাকা উঠাতে সেই স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয় না, তখনই বোঝা যায় এখানে স্বাক্ষর কতটা কার্যকর। বিবিসির প্রতিবেদনের শিরোনামে সামগ্রিকভাবে প্রশ্নটি করলেও আসলে ব্যাংকের আলোচনাই এসেছে। আর আমরাও দেখছি স্বাক্ষরের বদলে কমবেশি চার অক্ষরের একটি পাসওয়ার্ডই স্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তাকে নাকচ করে দিচ্ছে।
দেশে এখন অধিকাংশ ব্যাংকেরই এটিএম বুথ রয়েছে। যাদের এখনও নেই তারা নতুন বুথ খুলছে। আবার যাদের বুথের সংখ্যা কম তারা গ্রাহকদের কথা চিন্তা করে অন্য ব্যাংকের বুথ ব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছে। মানুষও ঝামেলাহীন এ সেবায় আকৃষ্ট হচ্ছে। এখানে অবশ্য স্বাক্ষরের প্রয়োজন না থাকলেও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে তো স্বাক্ষর লাগেই। তবে একে কেবল স্বাক্ষরের কার্যকারিতা কিংবা প্রয়োজনীয়তা দিয়ে ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই। বরং দিন দিন প্রযুক্তি যে উন্নতি করছে তার অংশই বলতে হবে।atm
স্বাভাবিক দৃষ্টিতে স্বাক্ষর একটা অ্যানালগ পদ্ধতি এবং এর ডিজিটালাইজেশনই বলা চলে এই এটিএম বুথ, ডেবিট কার্ড। আর বিবিসির প্রতিবেদন যেটি বলছে, তা আরও গুরুত্বপূর্ণ। হাতের স্বাক্ষর সহজেই আরেকজন নকল করতে পারে কিন্তু অন্যের টিপ এবং পিনের মাধ্যমে টাকা নেওয়া অতটা সহজ নয়। ফলে ব্যাংকের টাকা ওঠাতে ও অন্য অনেক লেনদেনে যেমন স্বাক্ষরের প্রয়োজন নেই, তেমনি অন্য জায়গায়ও স্বাক্ষরের প্রচলন কতদিন থাকবে_ সে প্রশ্নও এসেছে প্রতিবেদনটিতে।
যত প্রশ্নই উঠুক স্বাক্ষরের আবেদন অনস্বীকার্য। যে স্বাক্ষর ব্যক্তির পরিচয় বহন করে, যেটি মানুষের প্রতিনিধি, অনেকের কাছে যেটি স্বপ্নের মতো এবং ব্যক্তি অনেক চর্চা করে নিজের স্বাক্ষরটি প্রতিষ্ঠা করেন- তা এত সহজে হারিয়ে যাবে? মনে হয় না।

  • ছবি- ইন্টারনেট
ট্যাগঃ , , , , , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।