Mahfuzur Rahman Manik
মেধাসম্পদ ও মেধার মূল্যায়ন
এপ্রিল 26, 2014

intellectual-property-e1266844349931মানুষের সৃষ্টির সবকিছুর মূলে রয়েছে মেধা। লেখকরা মেধা দিয়ে লেখেন। বিজ্ঞানী-গবেষকরা তা দিয়ে নতুন নতুন আবিষ্কার করেন। শিল্পীরা শিল্পকর্ম রচনা করেন এর মাধ্যমে। ব্যবসায়ী মেধা খাটিয়ে ব্যবসা করেন। কার্টুনিস্ট, ফটোগ্রাফার থেকে শুরু করে মুচি পর্যন্ত প্রত্যেক শ্রেণী-পেশার মানুষ স্ব-স্ব মেধা দিয়েই কাজ করেন। এমনকি শারীরিক শক্তি দিয়ে মানুষ যে কাজ করে, সেখানেও মেধা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি কাজের আলাদা কৌশল রয়েছে। যিনি মাটি কাটেন তিনি এর কৌশল জানেন। মেধা খাটিয়েই তিনি এ কৌশল ব্যবহার করেন।
সব কাজের মধ্যেও বিশেষ কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলো মানুষ সরাসরি মেধার সাহায্যে করে থাকে। যার মাধ্যমে মানুষের সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তির প্রমাণ পাওয়া যায়। আজকের বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস আসলে এই সৃজনশীলতা ও সৃষ্টিশীলতাকে উৎসাহিত করার জন্যই পালন করা হয়। মেধাসম্পদ বা ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি বলার কারণ হলো, অন্য সম্পদের মতো মেধাসম্পদেরও মালিকানা আছে। একে বিক্রয়, হস্তান্তর ও দান করা যায়। বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে মেধাসম্পদ হিসেবে স্বীকৃত বিষয়গুলো দুই ধরনের_ ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোপার্টি ও কপিরাইট। ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোপার্টির অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো সাধারণত আবিষ্কারের প্যাটেন্ট, ট্রেডমার্কস, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন ও ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য। আর কপিরাইটে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো প্রধানত সাহিত্যকর্ম। যেমন উপন্যাস, কবিতা, নাটক বা অন্য কোনো লিখিত বই। এ ছাড়া চলচ্চিত্র, গানও এর অন্তর্ভুক্ত। একই সঙ্গে শৈল্পিক কোনো কাজ, যেমন_ অঙ্কন, চিত্রকলা, ছবি, স্থাপত্য নকশাও রয়েছে। বিশ্ব মেধাসম্পদ সংস্থা চলচ্চিত্রকে হাইলাইট করে এ বছরের থিম করেছে :মুভিজ_ অ্যা গ্গ্নোবাল প্যাশন।
আমাদের দেশে এ মেধাসম্পদের গুরুত্ব তেমন চোখে পড়ার মতো নয়। আমরা শুধু বইয়ের কপিরাইট নিবন্ধনের কথাই শুনি। যদিও সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে প্যাটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর। আর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে কপিরাইট অফিস। রয়েছে প্রতিটির জন্য আলাদা আইন। এসব আইন কতটা কার্যকর, তা দেখা দরকার। অথচ অন্যরা কিন্তু এগুলোতে অনেক এগিয়ে। বিশেষ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্যাটেন্ট নিবন্ধনের কাজটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়। আমাদের দেশে সেটা ম্যানুয়ালি হলেও সম্প্রতি তা স্বয়ংক্রিয় করা হয়েছে। এতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোপার্টির অন্তর্গত বিষয়গুলো সহজে নিবন্ধন করা যাবে। এই প্যাটেন্ট নিবন্ধন জরুরি। কোনো পণ্য নিবন্ধনের সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখতে হয় সেটা কেউ আগে তৈরি করেছে কি-না। পাটের প্যাটেন্ট রাইট যেমন এখন বাংলাদেশের হাতে। অথচ যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প জামদানির প্যাটেন্ট আমরা নিবন্ধন করতে পারিনি। ভারত তার নিবন্ধন নিয়ে ফেলেছে।
ipda_iconআমাদের মধ্যে প্রতিভাবান মানুষের অভাব নেই। অনেককে হয়তো আমরা আবিষ্কার করতে পারছি না। যাদের আমরা পাচ্ছি তাদের হয়তো প্রত্যেককে সেভাবে সৃজনশীল কর্মে উৎসাহিত করতে পারছি না। আবার অনেকের সৃষ্টিকর্মেরও তেমন গুরুত্ব দিচ্ছি না। কিংবা গুরুত্ব দিলেও তার যথাযথ মর্যাদা দিচ্ছি না। এদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
আমাদের মেধাসম্পদ আমাদেরই রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। ব্যক্তিগত পর্যায়েও এসবে খেয়াল রাখা দরকার। বিশেষ করে ইন্টারনেটের কারণে এখন অনেক কিছুই সহজে পাওয়া যায়। চাইলেই যে কেউ অন্যের লেখাসহ নানা সৃষ্টিকর্ম সহজে ব্যবহার করতে পারেন। অনেকে হয়তো করেনও। তবে এটা ব্যক্তির মেধাসম্পদ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া কিংবা স্বত্ব স্বীকার না করে ব্যবহার আইনত অবৈধ। মেধার মূল্যায়ন, মেধাবী মানুষের মূল্যায়নের মাধ্যমে আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাই।

  • ছবি- ইন্টারনেট
ট্যাগঃ , , , , , , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।