Mahfuzur Rahman Manik
আইল বাঁধার প্রচেষ্টা-২
ডিসেম্বর 26, 2013

write-a-book-reviewআইল বাঁধার প্রচেষ্টা শীর্ষক সংক্ষিপ্ত বই আলোচনার পোস্টটি অনেকদিন আগেই এখানে প্রকাশ করেছি। পোস্টটিতে আমার পঠিত কয়েকটি বই নিয়ে কিছু বলেছি। কথা ছিলো এরপর প্রতিটা বই পড়ার পর পরই পোস্ট দিবো। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। হলে হয়তো প্রত্যেকটি বইয়ের নামেই শিরোনাম হতে পারতো। এখন যেহেতু অনেকগুলো বই জমে গেছে ফলে কোনো একটার নাম দিয়ে শিরোনাম করা প্রায় অসম্ভব। এ জন্য এর শিরোনাম দিলাম আইল বাঁধার প্রচেষ্টা-২।
এ পর্বে পঠিত বইগুলো এক নজরে-

  •     আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর: আবুল মনসুর আহমেদ
  •     রমনীয় রচনা (প্রথম খন্ড): আবদুশ শাকুর- বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র
  •     আধুনিক ভারতে সাংবাদিকতা: রোল্যান্ড ই. উলসলে সম্পাদিত, বাংলা একাডেমী
  •     লালসালু: সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ
  •     রেইনবো ওভার পদ্মা: এস. এম. আলী
  •     দ্য গুড মুসলিম: তাহমিমা আনাম
  •     আর দশটা দিনের মত দিন: সৈয়দ শামসুল হক
  •     অধরা কুমারী- শেখ আব্দুল হাকিম
  •     এ টেল অব টু সিটিজ- চার্লস ডিকেন্স

এ টেল অব টু সিটিজ

A Tale of Two Cities
এ টেল অব টু সিটিজ চার্লস ডিকেন্সের অনন্য রচনা। ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস এটি। এর কলেবর খুব বড় নয়। মোচড়ের পর মোচড় রয়েঠে উপন্যাসটিতে। লেখক ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের চরিত্র এবং ঘটনাবলি বর্ণনার মাধ্যমে ফরাসি বিপ্লবের কাহিনী তুলে ধরেছেন। শুরুটা তারিখ দিয়ে- ১৭৭৫ সালের নভেম্বর। লুসি ম্যানেট রয়েছেন ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে তার বাবা ডা. ম্যানেটকে দিয়ে ঘটনার পরম্পরা। ম্যানেট বয়স্ক ডাক্তার। ১৮ বছর ফ্রান্সের বাস্তিল কারাগারে বন্দী থাকার মুক্তি পেলেন। ব্রিটিশ ব্যবসায়ী লরির সহযোগিতায় ডাক্তারের মেয়ে লুসিকে তার বাবাকে নিয়ে ইংল্যান্ডে গেলেন। সেখানে ঘটনাচক্রে বাপ মেয়ে উভয়কে এক রাজনৈতিক বিশ্বাসঘাতকতার মামলায় সাক্ষ্য দিতে হয়ে। যেখানে চার্লস ডারনে ফ্রান্স সরকারের কাছে গোপন সংবাদ পাচারের দায়ে প্রায় অভিযুক্ত হন। কিন্তু তা  মত আরেকজনের চেহারা আদালতে উপস্থিত করে আইনজীবী সিডনি কার্টনের কৌশলে তিনি মুক্তি পান। চার্লস ডারনে ও সিডনি কার্টন উভয়েই লুসিদের বাসায় যাতায়ত করতেন। লুসির সঙ্গে উভয়ের ভালো সম্পর্ক হয়। উভয়েই লুসিকে বিয়ে করতে চায়। অবশেষে চার্লসের সঙ্গেই লুসির বিয়ে হয়। কিন্তু চার্লসের মূল পরিচয় তাদের জানা ছিলো না। একদিন লুসির বাবা ম্যানেটকে তার পরিচয় জানায় যে সে ফ্রান্সের অভিজাত পরিবারের সন্তান। তাদের বলা হতো মার্কুইস। যে পরিবার ফ্রান্সের সাধারণ মানুষকে শোষণ করতো। সাধারণ মানুষও তাদের ওপর ক্ষেপে ছিলো।
ডিকেন্সের দুই শহরের মধ্যে দ্বিতীয় শহরের কাহিনী বিপ্লবের। যেখানে অভিজাততন্ত্রের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের জয় হলো। বাস্তিল দুর্গের পতন হলো। চার্লসের তখন ফ্রান্সে যাওয়ার প্রয়োজন পড়লো। কিন্তু ফ্রান্সে তখন বিপ্লবী শাসক। চার্লসকে গ্রেফতার করা হলো। লুসিসহ ডাক্তার ম্যানেটকে আবার ফ্রান্সে যেতে হলো। সাবেক বাস্তিল বন্দী হিসেবে সেখানে ম্যানেটের কদর থাকলেও শেষ পর্যন্ত চার্লসকে রক্ষা করতে পারেননি। চার্লকে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার হবে। তখনি উপন্যাসের চুড়ান্ত মোচড় দেখলাম আমরা। চার্লসের বন্দীশালায় হাজির হলো সিডনি কার্টন সে এক সময় লুসিকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো। চার্লসকে বের হওয়ার যাবতীয় বন্দোবস্ত করে নিজেই তার জামাকাপড় পরে নিলো। লুসিসহ চার্লসরা ফ্রান্স থেকে বের হলো। আর মৃত্যুদন্ড হলো চার্লস বেশধারী সিডনি কার্টনের।

রেইনবো ওভার পদ্মা
বিশিষ্ট সাংবাদিক, ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা জনাব এসএম আলীর রচনা রেইনবো ওভার পদ্মা। এসএম আলী বিখ্যাত লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাতিজা। ১৯৯৩ সালে মারা যাওয়ার পর ১৯৯৪ সালে উপন্যাসটি ইউপিএল থেকে প্রকাশিত হয়। যাকে বলা হচ্ছে প্রত্যাশার উপন্যাস। লেখক সমস্যা সংকুল বাংলাদেশের একটি নতুন চিত্র অংকন করেছেন এখানে। দেশের মানুষই এ উপন্যাসের নায়ক। আশির দশকের শেষের দিকে দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে দেশকে নতুনভাবে গড়ার জন্য একদল মানুষের প্রচেষ্টাই উপন্যাসটির মূল প্রতিপাদ্য। এ প্রচেষ্টার মূলে রয়েছেন একজন লেখক। রফিক অনোয়ার। যিনি প্রায় বিশ বছর দেশের বাইরে প্রায় বিশ বছর সাংবাদিকতার বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে দেশে এসেছেন। তার নেতৃত্বে তাদের দল একটি আন্দোলন দাঁড় করিয়েছে, তাদের প্রধান লক্ষ্য গ্রামের মানুষ। তাদের জন্য কাজ করা, তাদের সমর্থণ লাভ। তাদের প্রচেষ্টা গ্রামের দরিদ্র-পীড়িত কৃষক এবং ভূমিহীন শ্রমিকদের মাঝে আশার আলো জাগানো এবং প্রধানত একেবারে অজপাড়া গাঁয়ের উন্নয়ন। যা একধরণের নতুন কম্যুনিটি ভিত্তিক নেতৃত্ব তৈরি করেছে। যারা দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং উপন্যাসটিতে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি মোরশেদ প্রশাসনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম। উপন্যাসটিতে লেখক উন্নয়নের এক নতুন ধারা দেখিয়েছেন যার মাধ্যমে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশ এগিয়ে যেতে পারে। নানা উপমা দিয়ে লেখক দরিদ্র-পীড়িত গ্রামের মানুষের চিত্র অংকিত করেছেন। যারা বছরের পর বছরের দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে এসেছেন তাদের মৌচাষসহ নতুন নতুন আয়ের উপায়ও দেখিয়েছেন। দেশের দক্ষিনাংশের ছোট্ট এক শহরের দুইশ রিকশাওয়ালাদের নিয়ে সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে লেখক অসাধারণ দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন, যাতে সহজেই তারা দিনভিত্তিক রিকশা ভাড়া করতে পারে। মোটকথা দ্য রেইনবো অভার পদ্মার মাধ্যমে লেখক এরকম উন্নয়নের কথাই বলেছেন।

আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর

Amar-Dekha-Rajnitir-50Bochor
আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অনবদ্য বই। লেখক আবুল মনসুর আহমেদের পরিচয় সবাই জানেন। নানা পরিচয়ে তিনি পরিচিত। সাংবাদিকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু। তার সময়ের নানা পত্রিকায় কাজ করেছেন। সাংবাদিকতার সর্বোচ্চ চূড়া আরোহন করেছেন; সম্পাদকও ছিলেন তিনি। মাঝে মাঝে ওকালতি করেছেন। আর রাজনীতিবিদ তো বটেই। পাকিস্তান আমলে তিনি মন্ত্রীও হয়েছিলেন। একাশি বছর (১৮৯৮-১৯৭৯) বেঁচে ছিলেন আবুল মনসুর। লেখক হিসেবেও তার সৃষ্টি অসাধারণ। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বই লিখেছেন। এর মধ্যে কয়েকটা বিখ্যাত; আমার দেখার রাজনীতির পঞ্চাশ বছর অন্যতম। বইয়ের নামের সঙ্গে পঞ্চাশ বছর থাকলেও আসলে ষাট বছরেরও অধিক সময়ের পর্যালোচনা রয়েছে। অবশ্য লেখকের প্রত্যক্ষ রাজনীতির পঞ্চাশ বছরের অভিজ্ঞতাই এখানে প্রধান। আর বাকি সময়টায় তার পর্যবেক্ষণ এবং সেসব ঘটনাবলি বর্ণনা করেছেন। আমাদের রাজনীতির তিনকাল- বৃটিশ শাসন, পাকিস্তান আমল এবং বাংলাদেশ সময়ের শুরুর দিকের ইতিহাস রয়েছে। বইটি উপমহাদেশের রাজনীতির এক অকাট্য দলীল।
ইতিহাসের সঙ্গে সঙ্গে লেখকের অনেকটা জীবনকাহিনীও পাঠক জেনে যাবেন। সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তার জন্ম। পরিবারের কারণেই শিশু বেলা থেকেই ধর্মের প্রতি তার বিশেষ অনুরাগ দেখা যায়। ফলে ফরায়েজি ও ওহাবী আন্দোলনের প্রতি তার দুর্বলতা আর ইংরেজদের ওপর বিদ্বেষ ভাব দিয়ে বইটি শুরু। ধীরে ধীরে তার মাঝে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ লাভ করে। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর অধীনে তিনি কংগ্রেস আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পর তিনি মুসলিম লীগের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করেন এবং ১৯৪০ সাল থেকে পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। দেশভাগের পর ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে তিনি ময়মনসিংহ হতে নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনী ইশতেহারের ২১ দফা প্রণয়নের রূপকার তিনি। শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের মন্ত্রীসভায় তিনি প্রাদেশিক সরকারের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৭ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদীর মন্ত্রীসভায় তিনি কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি তিনি। আইউব খানের আমলে তিনি ১৯৫৮ সালে কারাবরন করেন এবং ১৯৬২ সালে মুক্তি পান।
পুরো বই জুড়ে এসবই তিনি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা এসেছে। তার ছোট ছেলে বর্তমান ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিষয়ও এসেছে বইটিতে। মাহফুজ আনামের ডাক নাম ছিলো ‘তিতু’। পাঁচশতাধিক পৃষ্ঠার বইটিতে সহজ সরল ভাষায় এসব ইতিহাস লিখেছেন আবুল মনসুর আহমেদ।
বইটি পড়ার সময় ডায়েরিতে টুকে রাখা ভালো লাগা কয়েকটা কথা-
-   টাইপ রাইটার আবিষ্কারের ফলে যেমন লোকের হাতের লেখা খারাপ হইয়াছে, মাইক আবিষ্কৃত হওয়ায় বক্তাদের গলাও তেমনি ছোট হইয়া গিয়াছে বলিয়া মনে হয়।
-  দু’চারটা ভাল কাজ কর। তখন দেখবা লোকে তোমার বদনাম শুরু করেছে। আম গাছে লোকে ঢিল মারে। শেওড়া গাছে কেউ মারে না। ফজলী আমের গাছে আরও বেশি মারে- বলেছেন, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক।
-    ফাউ এর ধান টিয়ায় খাইলে গৃহস্থের আপত্তি হয় না।
-    সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের সব ব্যাপারেই কিছু মত থাকে। বিশেষত সাংবাদিকদের। সম্পাদকীয় লিখিতে হইলে সম্পাদকদিগকে সব বিষয়ে প-িত হইতে হয়।

দ্য গুড মুসলিম
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের মেয়ে তাহমিমা আনামের উপন্যাস দ্য গুড মুসলিম। এটি ২০০৭ সালে প্রকাশিত তার প্রথম উপন্যাস অ্যা গোল্ডেন এইজ এর ধারাবাহিকতায় লেখা। এ বছর প্রথম আলোর ঈদ সংখ্যায় এর ভাষান্তর করেছেন মশিউল আলম। উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছে মায়া ও সোহেল। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের এক দশকেরও পরের সময়ের কথা লেখক বর্ণনা করেছেন।
যুদ্ধের পর ভাই-বোন সোহেল ও মায়ার মধ্যে দুই ধরণের চেতনার বহি:প্রকাশ ঘটে। সোহেল সম্পূর্ণভাবে ইসলামের প্রাকটিস শুরু করে। অন্যদিকে মায়া ডাক্তার হন ধর্ম এড়িয়ে চলেন। ১৯৭৭ সাল থেকে তাদের মধ্যে আর দেখা নাই। ১৯৮৪ সালে মায়া ঢাকা আসেন। তখন মায়ার সঙ্গে ভাই সোহেলের দেখা। ইতিমধ্যেই সোহেল ধর্মীয় এক আধ্যাতিœক নেতায় পরিনত হন। অন্যদিকে মায়ার চিন্তাধারা বৈপ্লবিক। যখন সোহেল তার ছেলেকে মাদরাসায় পাঠাতে চেষ্টা করে তখনই ভাই- বোনের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এই দ্বন্দ্বের ক্লাইমেক্সের মধ্যেই শেষ হয় উপন্যাসটি।

রমনীয় রচনা
রমনীয় রচনা বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের নিজস্ব সম্পাদিত রচনা। দুই খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে এই রচনা। তবে রচনাগুলো বিখ্যাত সব লেখকের লেখা। পশ্চিমবঙ্গ ও আমাদের নামকরা লেখকদের অসাধারণ লেখাগুলো এখানে সংযোজিত হয়েছে। সম্পাদনা করেছেন আবদুশ শাকুর।

লালসালু
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’র লালসালু উপান্যাসটি লালসালু নাম দিয়ে বোঝা যতটা কঠিন তার অনুবাদ করা ট্রি উইদাউট রুটস দিয়ে বোঝা ততটা সহজ। শেকড়হীন দরিদ্র মজিদ কিভাবে এক গ্রামে এসে আসন গাড়ে। গ্রামের মানুষের ধর্মের প্রতি দুর্বলতার সুযোগে নিজের অবস্থান শক্ত করে নেয় তা অত্যন্ত সুন্দরভাবে দেখিয়েছেন লেখক। উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে, দ্বিতীয় প্রকাশকাল ১৯৬০। এর পটভূমি ১৯৪০ কিংবা ১৯৫০ দশকের বাংলাদেশের গ্রামসমাজ হলেও এর প্রভাব বা বিস্তার কালোত্তীর্ণ। গ্রামীণ সমাজের সাধারণ মানুষের সরলতাকে কেন্দ্র করে ধর্মকে ব্যবসার উপাদানরূপে ব্যবহারের একটি নগ্ন চিত্র উপন্যাসটির মূল বিষয়। উপন্যাসটির রচনাকাল ১৯৪৮ সাল। সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর প্রথম উপন্যাস এটি। উপন্যাসটি ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায়ও অনুবাদ করা হয়।

আধুনিক ভারতে সাংবাদিকতা

Modern-Journalsim
একটি সম্পাদিত গ্রন্থ। সূচীপত্র ও পরিশিষ্ট বাদে এটি পঞ্চম খন্ডে বিভক্ত। ১৪ জন লেখক ১৬ টি বিষয়ে লিখেছেন। একজন কেবল দুটি বিষয় লিখেছেন। রোল্যান্ড ই. উলসলে (জড়ষধহফ ঊ. ডড়ষংবষবু)। তিনিই বইটির সম্পাদক। উলসলে সাংবাদিকতা-বিভাগের একজন অধ্যাপক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিরাকুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল জার্নালিজম-এর বিভাগের সভাপতি। তিনি ১৯৫২ সালে ভারতের নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসলোপ কলেজে সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম প্রধানের পদে যোগ দেওয়ার জন্যে ফুলব্রাইট হিসেবে ভারতে আসেন। উলসলে ভারতের সাংবাদিকতার ষাটের দশক এবং তার আগের ঘটনাবলী বর্ণনা করেছেন। বইটির বাংলা অনুবাদ করেছেন আশফাক-উল-আলম যা বাংলা একাডেমী ১৯৮৯ সালে প্রকাশ করে।
বইয়ের নাম আধুনিক ভারতে সাংবাদিকতা হলেও সাংবাদিকতার বলা চলে একটি পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ এটি। এর মাধ্যমে যেমন ভারতে সাংবাদিকতার বিভিন্ন প্রধান প্রধান দিক সম্পর্কে বিচার-বিশ্লেষণ হয়েছে তেমনি সাংবাদিকতার মেীলিক বিষয়গুলোও আলোচনা হয়েছে। যেমন প্রতিবেদন ও সংবাদ রচনা, সম্পাদনা, ফিচার ও আর্টিক্যাল লেখা, সম্পাদকীয় লিখন, সাময়িকী লিখন ইত্যাদি। এ ছাড়া ভারতে ইংরেজী সংবাদপত্রের অবস্থা, দেশী ভাষার সংবাদপত্র, সেখানকার বার্তা-প্রতিষ্ঠানের উন্মেষ, ব্যবসাগত দিক সর্বোপরি ভারতে সাংবাদিকতার ভবিষ্যত নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ সব বিষয় যারা লিখেছেন সবাই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ।
বইটির ভবিষ্যদ্বানীই আজ ভারতের বিকশিত সংবাদমাধ্যম। ২০০৯-এর হিসাব মতে ভারতে প্রতিদিনকার পত্রিকার সার্কুলেশন সংখ্যা প্রায় ১১ কোটি। পত্রিকার বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠক রয়েছে সেখানে। দিন দিন সাক্ষরতার হার বাড়ছে, এখনো বাড়ছে পাঠক সংখ্যা। বিভিন্ন রাজ্য থেকে নানা ভাষার সংবাদপত্র যেমন: ইংরেজি, হিন্দি, বাংলা, উর্দু, মারাঠি, তেলেগু, পাঞ্জাবি, গুজরাটি, তামিল প্রভৃতি ভাষায় প্রতিদিন পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ভারতের অডিট ব্যুরো অব সার্কুলেশনের সাম্প্রতিক হিসাবে, টাইমস অব ইন্ডিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক।

আর দশটা দিনের মত দিন
এটি সৈয়দ শামসুল হকের সাম্প্রতিকতম উপন্যাস। এ বছর সমকাল ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত হয় উপন্যাসটি। প্রতিষ্ঠিত একটি পরিবারের আর দশটা দিনের মত একটা দিনের কাহিনী-ই এ উপন্যাস। বজলুর রহমান আর তার স্ত্রী রোমেনা দু’জন ঢাকা শহরের অত্যাধুনিক ফ্ল্যাটের বাসিন্দা। ব্যবসায়ী বজলুর রহমানের দুই ছেলে করিম ও নাঈম। উভয়ে বিয়ে করেছে। তাদের জন্য আলাদা ফ্ল্যাটও কিনে দিয়েছেন রহমান সাহেব। তার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ছেলের কাছে। নাতি-নাতনীরা দেশে বিদেশে লেখাপড়া করছে। কোনোদিক থেকেই সুখের কমতি নেই রহমান সাহেবের।
তারপরও সেদিনটিতে তিনি সুখ খোজেন। মনে হয় যেন তিনি অসুখী। অফিসে না গিয়ে নানা জায়গায় যাচ্ছেন। নানা মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন। গাড়ি নিয়ে শহরে ঘুরছেন তারপরও যেন তিনি স্বস্তি পাচ্ছেন না। তার মনে শান্তি নাই।
অবশেষে শান্তি মিলল তার ধানমন্ডিতে এসে। ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সড়কে স্কুলের ইউনিফর্ম পড়া ছেলে-মেয়েদের দল দেখেছেন। জয় বাংলা শুনেছেন তাদের মুখে। তিনি উপলব্ধি করলেন দেশকে। আর আমাদের ভাষা বাংলাকে।

অধরা কুমারী
অধরা কুমারী শেখ আব্দুল হাকিমের রহস্য ও গোয়েন্দা উপন্যাস। লেখকের নামের সঙ্গে যারা পরিচিত তাদের জানার কথা তিনি  রহস্য ও গোয়েন্দাধর্মী গল্প, উপন্যাস লিখে থাকেন। তার রচনার ক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় লক্ষ্যনীয়, রচনার শেষে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লেখা থাকে- বিদেশি কাহিনি অবলম্বনে। অধরা কুমারীও এর ব্যতিক্রম নয়। বিদেশি কাহিনী অবলম্বনে হলেও বাংলাদেশের সাধারণ পাঠকদের বুঝতে এতটুকু সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কোনো পাঠক উপন্যাসটি শুরু করলে ঘটনা পরম্পরায় এটি তাকে শেষ পর্যন্ত নিয়ে। যারা অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় তাদের কথা বলাই বাহুল্য। ভøাদিমির ক্রোমোভিচ নামে এক রুশ ইন্টেলিজেন্সকে দিয়ে কাহিনী শুরু। গোয়েন্দার চাকরি হলেও শখ তার ফটোগ্রাফি। বিষয়টা বড়কর্তাদের নজরে এলে টেনিং দিয়ে তাকে রাশিয়ান হাই অলটিচ্যুড রিকনিসন্স সেকশনে বসিয়ে দেওয়া হয়। ফটোগ্রাফি নিয়ে খেলতে খেলতেই তিনি পেয়ে যান কিছু একটা সেখান থেকেই শুরু রহস্য।  অধরা কুমারী একটা বিশাল জায়গার নাম। যার আকৃতি অনেকটা কুমারীর মত- লম্বা দু্’পাশে পাহাড়, মাঝখানে ঢালু হয়ে গেছে। যার নীচে রয়েছে স্বর্ণ। সে এক বিরাট অভিযান।

  • ছবি: ইন্টারনেট
ট্যাগঃ , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।