Mahfuzur Rahman Manik
কাগজ-কলম কিংবা প্রযুক্তি
জুলাই 6, 2013
Rabinndrbath
রবীন্দ্রনাথের হাতে লেখা চিঠি

লেখার অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হিসাব করতে গেলে অবশ্যম্ভাবী হয়ে দুটি বিষয় মাথায় হাজির হয়_ কাগজ ও কলম। লেখার সঙ্গে এ দুটি বিষয় এত অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত যেন এগুলো ছাড়া লেখালেখি কদাপি সম্ভব নয়। লেখালেখির ইতিহাসও তা-ই বলে। কাগজ-কলমের যখন আবিষ্কার হয়নি তখনও মানুষ লিখেছে গাছের পাতায় কিংবা চামড়ায়। কালি দিয়ে লিখত মানুষ। এরকম হাতের লেখায় প্রাচীন নানা গ্রন্থ আমরা দেখেছি। তবে লেখালেখি বলতে এতদিন সবাই যে 'হ্যান্ড রাইটিং' বা হাতের লেখা বুঝে আসছেন সেখানে এক ধরনের পরিবর্তন এসেছে। কাগজ-কলম ছাড়াও এখন মানুষ লিখে। সম্প্রতি টাইমস অব ইন্ডিয়ায় 'থ্যাংকস টু ই-মেইল অ্যান্ড এসএমএস, উই আর লুজিং দ্য আর্ট অব রাইটিং' শীর্ষক ব্লগটিতে জুগ সুরাইয়া তার কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন। তার শিরোনাম থেকেই ই-মেইল আর এসএমএস পাওয়া গেল, যেগুলো লিখতে কাগজ-কলমের প্রয়োজন হয় না। চিঠির বদলে, বিষয়গুলো যে চিঠির সে আবেদন, শিল্পকৌশল ধরে রাখতে পারছে না মোটাদাগে তাই তিনি বুঝিয়েছেন। তারপরও এগুলোকে তার থ্যাংকস দেওয়ার বিষয়টা অবশ্য অন্যরকম। তার আগে বলা আবশ্যক আজকের মেইল বা এসএমএস কেন যে কোনো লেখার ক্ষেত্রেই অনেকে কাগজ-কলম ব্যবহার করেন না। তারা লিখেন কম্পিউটার, ল্যাপটপ কিংবা নোটবুকে। এগুলোতে লিখেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন তারা, এমনকি তাদের কাছ থেকে 'কাগজ-কলম দিয়ে লিখতে বসলে লেখা আসবে না' এরকম শোনাও অস্বাভাবিক নয়। যেমনটা কাগজ-কলম দিয়ে লিখেন এরকম মানুষ অহরহই বলে থাকেন, 'কম্পিউটারে লেখা অসম্ভব'।
এখন প্রশ্ন কাগজ-কলম কিংবা কম্পিউটার কোন লেখা উত্তম। জুগ সুরাইয়া এক কথায় সেটা বলে দিলেন 'উই আর লুজিং দ্য আর্ট অব রাইটিং'। সবাই তার সঙ্গে একমত হবেন কি-না জানা নেই। কিন্তু এটা ঠিক, এভাবে গড়পড়তা বলে দেওয়ার মতো বিষয় এটা নয়। কারণ মানুষের লেখা তার চিন্তা-চেতনা, বৌদ্ধিক গুণাবলির ওপর নির্ভর করে। এই গুণাবলি অনেকে আরও কিছু শব্দ যোগ করেও ব্যাখ্যা করে, যেমন_ 'তার লেখার হাত আছে' কিংবা 'তিনি ভালো লিখেন' অথবা 'ভালো লিখে না'। এই ভালো বা মন্দের বিচার কলম কিংবা কম্পিউটারের নয়। যে মানুষটি কাগজ-কলমে ভালো লিখেন তিনি কম্পিউটারে লিখতে অভ্যস্ত হলে ভালোই লিখবেন। যিনি হাতের লেখায় সৃজনশীল চিঠি লিখতে পারেন একই ব্যক্তি যে কোনো ডিজিটাল ডিভাইসে সুন্দর এসএমএস কিংবা ই-মেইলও লিখতে পারবেন। কম্পিউটারে লিখতে অভ্যস্ত একজন বলবেন, এভাবেই বরং ভালো লেখা যায়। কম্পিউটারে আপনি একবার লিখলেন, চাইলে সহজেই আপনি সেটা মুছে দিতে পারেন। কোনো লাইন, প্যারা আপনার ভালো লাগেনি সেকেন্ডেই সেটা ডিলিট করে দিতে পারবেন। যেটা কাগজে-কলমে কিছুটা অসম্ভব।

Laptop
ল্যাপটপে লিখছেন

এটা হয়তো ঠিক, ডিজিটাল ডিভাইস আসার ফলে মানুষের লেখা কমে গেছে। অন্তত চিঠির ক্ষেত্রে তা সত্য। মোবাইলের কারণে এখন আর লিখতে হয় না। তা অবশ্য প্রয়োজনের দিক। আগে চিঠির প্রয়োজন ছিল, এখন তেমন নেই। তবে চিঠির প্রয়োজন যেখানে আছে সেখানে মানুষ এখনও চিঠি লিখে। অনেকে কাগজে লিখেন, অনেকে লিখেন মেইলে। উভয় জায়গায়ই ব্যক্তির সৃজনশীলতা দেখানোর সুযোগ রয়েছে। তবে অস্বীকার করার জো নেই হাতের লেখার একটা আবেদন আছে, যা জুগ সুরাইয়া দেখিয়েছেন। তিনি অবশ্য হাতের লেখার ওপর জোর দিলেও প্রযুক্তিকে মহৎ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তার এই মহত্ত্বের একটা কারণ শেষে বলেছেন, 'আসলে প্রযুক্তি একেবারে খারাপ না, কারণ আমার হাতের লেখা কেউ বোঝে না, মাঝে মাঝে আমিও না।' তার 'থ্যাংকস টু ই-মেইল অ্যান্ড এসএমএস' লেখার রহস্য এখানেই, বলাই বাহুল্য।

ট্যাগঃ , , , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।