Mahfuzur Rahman Manik
দায়িত্বহীনতা!
এপ্রিল 11, 2013

5daysসংবাদমাধ্যমে সব খবর আসে না। আবার অনেক খবর এলেও সবটা স্থানাভাবে ছাপা হয় না। ছাপা হলেও অনেকের তেমন নজরে আসে না। কিংবা নজরে এলেও হয়তো আলোচনার সৃষ্টি করে না। এভাবে কোনো কোনো খবর অনেকটা নীরবে-নিভৃতে হারিয়ে যায়, কোনোটা আবার ব্যাপক আলাপ-আলোচনার জন্ম দেয়। তার ফলোআপ খবরও ছাপা হয়। সেটাও এক সময় নতুন নতুন ঘটনার ঘনঘটার চাপে পড়ে যায়। খবর এ রকমই।
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে গ্রামবাংলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ খবর প্রকাশের জন্য স্থান মিলছে না। তবে সমকাল গুরুত্ব দিয়েই ৮ এপ্রিল একটি খবর ছেপেছে। বরিশাল বানারীপাড়া প্রতিনিধির পাঠানো খবরটির শিরোনাম ছিল_ 'লিখিত পরীক্ষার পাঁচদিন পর কার্ড পেলেন প্রার্থী!'। হরতাল-ধর্মঘট-অবরোধের মতো খবরের তুলনায় গুরুত্বের বিচারে এ খবরটি হয়তো পেছনের দিকের। ফলে সেভাবেই এটি পত্রিকায় ভেতরের দিকে জায়গা পেয়েছে। তবে 'খবরের পেছনের খবর' বলে যে কথা আছে, তার অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেল প্রকৃতই এটি ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো কেবল এক ব্যক্তিই এর শিকার হয়েছেন। কিন্তু এ থেকে সংশ্লিষ্ট অনেকেই শিক্ষা নিলে অনেক মানুষ উপকৃত হবে।
বানারীপাড়ার প্রার্থীর চাকরির প্রয়োজন বলেই তিনি আবেদন করেছেন। প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতর তথা ডিজিএফআইর সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগের জন্য কর্তৃপক্ষ তার আবেদনপত্র প্রাথমিকভাবে গ্রহণ করেই লিখিত পরীক্ষার জন্য মনোনীত করেছে। সে চিঠি তিনি পেয়েছেন ২৯ মার্চ লিখিত পরীক্ষার পাঁচ দিন পর ২ এপ্রিল। তিনি লিখিত পরীক্ষা দিতে পারেননি এবং তার পক্ষে এ চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা নাকচ হয়ে গেল।
আবেদন করার পরও নানা কারণে প্রার্থীর লিখিত পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। তবে এ প্রার্থীর সরকারি চাকরি লাভের এটাই ছিল শেষ সুযোগ। তার চাকরিতে আবেদন করার বয়স শেষ হয়ে গেছে। লিখিত পরীক্ষা দিতে পারলেই যে তাতে উত্তীর্ণ হতেন এবং মৌখিক ও অন্যান্য যোগ্যতার পরীক্ষাতেও ভালো করতেন, তার নিশ্চয়তা ছিল না। কিন্তু আজীবন একটি যন্ত্রণা থেকে যাবে। স্বগতোক্তির মতোই হয়তো বলে যাবেন_ কার দোষে! যদি জীবনে উন্নতি ঘটে, তাহলে এ ঘটনা ভুলে যাবেন হয়তো। কিন্তু তেমনটি না হলে?
প্রার্থীকে কার্ড পেঁৗছানোর জন্য ডাক বিভাগের কাছে তা কবে দেওয়া হয় তা প্রতিবেদনে নির্দিষ্ট করে বলা নেই। যদি এমন হয় ডিজিএফআই সঠিক সময়েই পাঠিয়েছিল কিন্তু ডাক বিভাগ নির্দিষ্ট সময়ে প্রার্থীর কাছে পেঁৗছাতে ব্যর্থ হয়। তাহলে এর দায় ডাক বিভাগেরই। ডাক বিভাগ নিয়ে অভিযোগ পুরনো। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত এ প্রতিষ্ঠানটির ওপর ভরসা রাখা চলে না। বিকল্প হিসেবে এসেছে কুরিয়ার সার্ভিস। এখন শহরের বাইরে গ্রামেও তারা সেবা দেন অতিরিক্ত চার্জ নিয়ে। কিন্তু বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসও 'সরকারি পোস্ট অফিস' হয়ে গেছে_ এমন অভিযোগ মিলছে দেশের সর্বত্র। তাহলে ভরসাস্থল কোথায়?
সংবাদটি প্রকাশের পরও কোনো ফলোআপ পাওয়া যায়নি। এমনকি সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কোনো প্রতিষ্ঠানই প্রার্থীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। চাকরিটা এমনিতেই এখন 'সোনার হরিণ'। কোনো প্রার্থী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বহীনতার কারণে আবেদন করা থেকে বঞ্চিত হবেন, তা মেনে নেওয়া কঠিন। এ ধরনের খবর প্রকাশিত হলে তা যেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ে এবং কে বা কারা দায়ী সেটা চিহ্নিত করে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তাহলে অন্তত একটু সান্ত্বনা মেলে। এ ক্ষেত্রে সেটা ঘটবে কি? নাকি সংশ্লিষ্টরা বলবেন, এমন তো কত ঘটনাই ঘটছে। এ নিয়ে সংবাদপত্র কেন যে মাথা ঘামায়!

ট্যাগঃ , , ,

One comment on “দায়িত্বহীনতা!”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।