ঢাকার সূর্যোদয় এখন সাড়ে ৬টায়, তারও দুই ঘণ্টা আগে আগে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। কিছু শব্দ আবছাভাবে কানে বাজছিল, কানটা সজাগ করে যা শুনলাম যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না। এ যে খুব পরিচিত কণ্ঠ, বাক্যগুলোও বেশ পরিচিত। অফিস থেকে ফেরার পথে রাতে যেগুলো শুনছিলাম সেগুলোই এখন শয্যায় থেকে শুনছি। অবাক না হয়ে পারলাম না। তরুণ প্রজন্মের একজন হিসেবে অনেকটা অসহায়ই বোধ হলো। মুগ্ধ হলাম তাদের ডেডিকেশন দেখে। পাঁচ-ছয় দিন আগের সেই মুগ্ধতা এখনও আচ্ছন্ন করে আছে। অফিসে যাওয়া-আসার পথে সশরীরে শাহবাগে অবস্থান করলেও যেন নিরন্তর আমরা শাহবাগেই। সারাদিন টেলিভিশন চ্যানেলে শাহবাগ দেখছি, অনলাইনে রিয়েল টাইম নিউজ সাইটগুলো থেকে প্রতিনিয়ত শাহবাগের আপডেট জানছি, ব্লগে পাচ্ছি শাহবাগকে আর ফেসবুকেও ফ্রেন্ডদের শাহবাগ বিষয়ক আলোচনাই উপভোগ করছি। শাহবাগ আমাদের ইউনিভার্সিটি এলাকায় বলে সারারাত শাহবাগের স্লোগান আর গান নিজ কানে শুনছি। তার ওপর সংবাদমাধ্যমের একজন কর্মী হিসেবে ধ্যান-জ্ঞান পুরোটাই এখন শাহবাগে।
অষ্টম দিন পেরিয়ে গেলেও যেন গণজাগরণের কোনো ক্লান্তি নেই। অবসর কিংবা ফুরসত এখানে নেই। নেই দিন কিংবা রাতের প্রভেদ। ছেলেমেয়ে, শিশু-বৃদ্ধের পার্থক্য চোখে পড়বে না। দূর-অদূরের কোনো ছাপ নেই। বরং শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে গেলেই দেখা যাবে নতুন আমেজ। রবীন্দ্রনাথের গানের মতো 'বহে নিরন্তর আনন্দধারা'। সবাই যেন এক সত্তা আবার সবাই আলাদা। মূল চত্বরকে ঘিরে অসংখ্য উপদলে মানুষ। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে এসেছে মানুষ, এমনকি দু'চারজন হলেও নিজেরাই স্লোগান তুলছে, নিজেদের মতো আয়োজন উপভোগ করছে। তবে সবার দাবি অভিন্ন_ 'রাজাকারদের ফাঁসি চাই।' এই দাবিতে গণজোয়ার। যেটি আর সীমাবদ্ধ নেই শাহবাগে। দেশের বিভিন্ন শহরের সীমানা ছাড়িয়ে পেঁৗছে গেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
শাহবাগে নিরন্তর তারুণ্যের এ জাগরণে উৎসাহ দিচ্ছে সংবাদমাধ্যম। প্রজন্ম চত্বরে কেবল আন্দোলনকারীরাই নেই, রয়েছে গণমাধ্যমের অতন্দ্র প্রহরী কর্মীরা। যারা ২৪ ঘণ্টাই আপডেট সংবাদ জানিয়েছে বিশ্বকে। সমকালসহ প্রথম সারির প্রায় প্রতিটি দৈনিক শুরু থেকেই এ ঘটনাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রধান শিরোনাম করেছে, করে আসছে। সংবাদমাধ্যমের বেশিরভাগ আয়োজন এখন আন্দোলনকেন্দ্রিক। বলা যায় এটি ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেবে দৃঢ়ভাবেই। যেটি হয়তো আগামী দিনে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
তারুণ্য যেখানে জেগেছে তাদের রুখবে কে? তাদের সঙ্গে গণমানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ একে শক্তিশালী করেছে। যারা এতদিন বর্তমান প্রজন্মকে কেবল ফেসবুক-ব্লগ-ইন্টারনেট প্রজন্ম হিসেবে দেখত, যারা ভাবত এদের দিয়ে কিছু হবে না, তাদের ধারণা আজ পাল্টে গেছে। তারা বলছে, এদের দিয়েই সম্ভব। যাদের হৃদয়ে রয়েছে দেশের ভালোবাসা। যারা কলঙ্কমুক্ত একটি দেশ চায়।
অবশেষে সেই শাহবাগ; যেটি ৮ ফেব্রুয়ারি লক্ষাধিক মানুষের শপথে উদ্বেলিত হয়েছে; যেটি প্রতিনিয়ত হাজারো মানুষের পদভারে মুখরিত; যেটি প্রতিমুহূর্তে গানে-গানে স্লোগানে-স্লোগানে উচ্ছ্বসিত; যেটি তারুণ্যের আয়নায় এক নতুন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি দেখাচ্ছে; যেটি তারুণ্যকে সেই একাত্তরের চেতনায় উজ্জীবিত করছে; যেখানে শত শত তারুণ্যের নির্ঘুম রাত কাটছে; যে আন্দোলন দেখে এটি কবে শেষ হবে সেটা বলার মতো অবস্থা নেই, সেই সম্ভাবনাময় নিরন্তর শাহবাগ যে কত বড় ইতিহাস সৃষ্টি করেছে আরও কিছু সময় পেরোলেই সবাই টের পাবে।
আসলেই তো অনেকদিন তোমার লেখা দেখি নাই।
ভালোই লিখছ।
নিশ্চয় ভালো আছো।
শুভ কামনা।
অসংখ্য ধন্যবাদ সুজন ভাই,
লিখছিতো নিয়মিতই; শেয়ার দিচ্ছিনা হয়তো।
ভালো থাকবেন।