Mahfuzur Rahman Manik
ভুয়া সার্টিফিকেট
সেপ্টেম্বর 3, 2012

ভুয়া শব্দটির সঙ্গে আমাদের পরিচয় বোধহয় একটু বেশিই। ভুয়া র‌্যাব, ভুয়া সাংবাদিক, চিকিৎসক ইত্যাদি তো রয়েছেই। একই সঙ্গে অনলাইনের বদৌলতে ভুয়া প্রোফাইল, অ্যাকাউন্ট ইত্যাদিও দেখছি। ভুয়া সার্টিফিকেটের কথা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না। এর দৌরাত্ম্য যে ভারতেও আছে সেটা বোঝা গেল সম্প্রতি ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকার একটি প্রতিবেদন থেকে। যেটি বলছে 'ওয়াচ আউট ফর দ্য ফেইক!' ভুয়া হতে সাবধান। এখানে ভুয়া বলতে প্রধানত ভুয়া সার্টিফিকেটই ইঙ্গিত করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি একটু অন্যরকমভাবেই শুরু হয়েছে_ ইন্টারনেটে প্রদত্ত একটি প্রকাশ্য বিজ্ঞাপন, সব চিন্তা ঝেড়ে একটু কৌশলের আশ্রয় নিয়ে বিজ্ঞাপনটি বলছে_ আপনি কি ভাবছেন একটা ডিগ্রি দরকার, বা আপনার ডিগ্রিটা পাল্টিয়ে মানানসই একটা ডিগ্রি নেবেন, বা আপনার সার্টিফিকেটটা হারিয়ে গেছে কিংবা নষ্ট হয়ে গেছে। তো ভাবনা কি, আপনার জন্য আছি আমরা ডিপ্লোমা কোম্পানি! এখানে শত শত ডিজাইনে সার্টিফিকেট টেমপ্লেট রয়েছে। আপনার পছন্দমতো ভারতের যে কোনো প্রতিষ্ঠানের হুবহু সার্টিফিকেটের নিশ্চয়তা আমরা দিচ্ছি। যেখানে স্বল্প সময়ের জন্য ১৩ শতাংশ ছাড়ের বিষয় তুলে ধরে সম্পূর্ণ খাঁটি সার্টিফিকেটেরও নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
ভারতে ভুয়া সার্টিফিকেটের বিষয়টি নতুন নয়। ২০১১ সালের মার্চে ভারতে পাইলটদের ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিষয়টি বেশ জানাজানি হয়। তখন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাইলটের লাইসেন্স বাতিল হয়, অনেককে গ্রেফতারও করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর লোকসভায় একটি বিল উত্থাপন করা হয়। বিলটির জন্য একটি স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠিত হয়। এ বছরের প্রথমদিকে কমিটি একটি প্রতিবেদন পেশ করে। বিলটিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে, যার অন্যতম হলো অ্যাকাডেমিক ডিগ্রির একটি ড্যাটাবেইজ প্রতিষ্ঠা, যার মাধ্যমে সহজেই অনলাইনে যে কেউ সার্টিফিকেটের সত্যতা যাচাই করতে পারবেন। বিশ্ব পরিমণ্ডলেও যে এসব ভুয়ামির খবর কম আছে তা নয়। ওবামার জন্ম সনদ ভুয়া বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। চীনের ভুয়া সার্টিফিকেটের খবর আছে, আইইএলটিএসেরও ভুয়া সার্টিফিকেট নাকি বিক্রি হচ্ছে। ইন্টারনেটে কেউ ফেইক সার্টিফিকেট শব্দটি লিখে সার্চ দিলে মজার কিছু ফলাফল বেরিয়ে আসবে। যেখানে আপনি দেখবেন অজস্র প্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি। এ রকম কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম হলো_ এনডি-সেন্টার, ডিপ্লোমা রিপ্লেসমেন্ট সার্ভিস, ডিপ্লোমাস অ্যান্ড মোর ইত্যাদি। এসব প্রতিষ্ঠান আপনাকে ভুয়া সার্টিফিকেট বানানোর অফার করছে। অনলাইনেই অর্ডার দেবেন, নাম-পরিচয়-প্রতিষ্ঠান দেবেন, স্যাম্পল দেবেন, ব্যস পেয়ে যাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত সার্টিফিকেট!
ভারতের চেয়ে কোনো দিক দিয়েই 'ভুয়া'র বিচারে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ভুয়া শিক্ষার্থী ধরা পড়েছে। কেউ ভুয়া সার্টিফিকেট বানিয়ে ডাক্তার হচ্ছেন, কেউ আবার ভুয়া র‌্যাব সেজে কার্য সিদ্ধি করছেন। সবখানেই ভুয়ার কারবার আর কি!
ভুয়া সার্টিফিকেটের না হয় একটা রফা হলো, মানে অনলাইনের মাধ্যমে আসল সার্টিফিকেট শনাক্ত করা গেল। কিন্তু ভুয়া কাজের কী হবে। কারও উদ্দেশে যদি বলা হয় লোকটা আসলে ভুয়া, তাকে সংশোধনের এ রকম কোনো ব্যবস্থা আছে কি? কিংবা যে ভুয়া ক্ষমতাশালী সেজে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে তারও কি কোনো সমাধান আছে? অনেকে হয়তো বলবেন, নৈতিকতার অভাব। সোজাসাপ্টা উত্তরটা হয়তো না-ই আসতে পারে। তবে ভারত জাল সার্টিফিকেট ধরার জন্য যে অনলাইন ড্যাটাবেইজের কথা ভাবছে আমরা কি সেটা শুরু করতে পারি না? অন্তত সার্টিফিকেট দিয়েই শুরু হোক না। জাল সার্টিফিকেট যখন ধরা যাবে জাল মানুষও নিশ্চয় একদিন ধরা যাবে।

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।