Mahfuzur Rahman Manik
ইন্টারনেট ও তথ্য অধিকার
সেপ্টেম্বর 28, 2012

'ক্ষমতায়ন'-এর কথা অহরহই শোনা যায়। জনগণের ক্ষমতায়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, প্রান্তিক মানুষের ক্ষমতায়ন ইত্যাদি। এসব ক্ষমতায়ন বাস্তবে না ঘটলেও বুলি হিসেবে যে খুবই জনপ্রিয়_ সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে তা বোঝা কষ্টের নয়। এই ক্ষমতায়নের মাপকাঠি কী এবং কীভাবে ক্ষমতায়ন করা যায়, তারও কিছু মানদণ্ড রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে তথ্যপ্রযুক্তিকে অন্যতম মানদণ্ড হিসেবে দেখা হয়। জনগণের জন্য তথ্যপ্রবাহকে অবাধ করার মাধ্যমে এই ক্ষমতায়ন হবে বলা হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ইন্টারনেট আসবে, যেহেতু এর মাধ্যমে সহজেই সব তথ্য পেতে পারেন। এমনকি এই তথ্য জানাটা নাগরিকের অধিকার। এ অধিকার নিশ্চিত করার জন্যই ২৮ সেপ্টেম্বরকে বিশ্বব্যাপী তথ্য অধিকার দিবস হিসেবে পালন করা হয়। দাতারা তো মনে করেন, এ জন্যই সবার কাছে ইন্টারনেট সেবা পেঁৗছাতে হবে। তাই মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলে এটাও অন্যতম লক্ষ্য। সে বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান কেমন।
বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেরিটি কমিশন বলছে, দেশে ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় রয়েছে দুই কোটি মানুষ। যার মধ্যে প্রচলিত আইএসপির ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬০ লাখ। এটাকে সরকারের হিসাব বলা যায়। কিন্তু যারা বিশ্বব্যাপী এ হিসাবটা করে, তারা কী বলছে। ২৪ সেপ্টেম্বর আলজাজিরা একটা খবর দিয়েছে_ পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এখন অনলাইনে। আলজাজিরা জাতিসংঘের টেলিকমিউনিকেশন এজেন্সির তরফে তা প্রকাশ করে। সংস্থার আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) অধীনে ২০১০ সালে দ্য ব্রডব্যান্ড কমিশন ফর ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট নামে একটি কমিশন গঠিত হয়। সে কমিশনই আসলে জরিপ করে। ২০১২ সালে জরিপের ফলাফল বলছে, পৃথিবীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষের ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে। আইটিইউ একই সঙ্গে এটাও বলছে, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জনে এ সংখ্যাটা আরও বেশি হওয়া প্রয়োজন। তারা এও বলছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর ২০ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবারের ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে। তবে ২০১৫ সালের মধ্যে একে ৪০ শতাংশে পেঁৗছানো তাদের লক্ষ্য।
জরিপটি ১৭০টি দেশের ওপর চালানো হয়। তালিকায় শীর্ষ দেশ আইসল্যান্ড. যেখানে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ৯৫ ভাগ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। সবার নিচে রয়েছে তিমুর লেস্তে, আগে যেটি পূর্ব তিমুর নামে পরিচিত ছিল। দেশটির ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্য মাত্র ০ দশমিক ৯ ভাগ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থান ২৩; ব্যবহারকারী ৭৭ দশমিক ৯ ভাগ। আর বাংলাদেশের অবস্থান ১৫২ এবং এটি দেখাচ্ছে দেশের ৫ ভাগ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। জরিপে সামাজিক যোগাযোগের বিষয়টিও আসে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৫৫ ভাগই সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে সক্রিয়। ফিলিপাইনের মানুষ সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। তাদের ৭০ ভাগ মানুষ এগুলো ব্যবহার করে।
ব্যবহারকারী দেশের দিক থেকে না হলেও ডাউনলোড স্পিডের দিক থেকে বাংলাদেশ সবার নিচে। জরিপের মূল প্রতিবেদনেই সেটি এসেছে। বলা হচ্ছে, 'গ্রাহকদের জন্য গড়ে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড স্পিড রয়েছে লুক্সেমবার্গের, ৪৯ মেগাবাইট; যেখানে এলডিসি দেশগুলোর যেমন বাংলাদেশ, মালাবি এবং সুদানের স্পিড এক মেগাবাইট বা তার চেয়ে কম।' বাংলাদেশের অবস্থা আরেকটা জরিপ দিয়ে দেখা যাক। সম্প্রতি ফলপ্রসূ ইন্টারনেট ব্যবহারের বিবেচনায় ৬১টি দেশের ওপর জরিপ করে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ফাউন্ডেশনের টিম বর্নার্স লি। তাদের ওয়েব ইনডেক্সডটঅর্গে প্রকাশিত ফল থেকে দেখা যাচ্ছে, ৬১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৫।
আমাদের অবস্থাটা ভালোই বোঝা গেল। মাত্র ৫ ভাগ মানুষ যেখানে ইন্টারনেটের আওতায়, যেখানে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ পরিবারে ইন্টারনেটের সুযোগ রয়েছে; সেখানে অন্তত ইন্টারনেট দিয়ে সব মানুষের ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়। একই সঙ্গে তথ্য জানাটাও জনগণের জন্য কঠিনই থেকে যাচ্ছে। তবে কথা হলো, দিন দিন সংখ্যাটা বাড়ছে। সেটাই হয়তো সান্ত্বস্ননা।

  • ছবি: Courtesy
ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।