Mahfuzur Rahman Manik
অর্থনীতির নোবেল সমাচার
অক্টোবর 17, 2011

নোবেল পুরস্কার ২০১১ কারা পেলেন তা ১০ অক্টোবরের মধ্যেই সবাই জেনে গেছে। হাল দুনিয়ায় যত বিতর্কই থাকুক, নোবেলটাই বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় পুরস্কার। আমাদের এটা বুঝতে মোটেও কষ্ট হয় না। কারণ সুইডেন থেকে হোক কিংবা নরওয়ে থেকেই হোক, অক্টোবরের প্রথম থেকে পুরস্কার ঘোষণার পরপরই বাংলাদেশের পত্রিকায় পরদিন সে সংবাদ ছাপা হচ্ছে। আর যারা অনলাইনে থাকেন, তারা তো সঙ্গে সঙ্গেই জানতে পারেন। তবে ‘আদার বেপারীর জাহাজের খবর নেয়া’ আর আমাদের নোবেল পুরস্কারের খবর নেয়া অনেকটা একই কথা। অর্থনীতির কথা তো বলাই বাহুল্য। অবশ্য শান্তিতে একটা পুরস্কার আছে বলে আমাদের রক্ষা।
পদার্থ, রসায়ন, চিকিত্সা, শান্তি, সাহিত্য ও অর্থনীতি— নোবেল পুরস্কারের এ ছয়টি বিষয়ের মধ্যে অর্থনীতির মাহাত্ম্য একটু অন্যরকম। এ পর্যন্ত কোনো মুসলমান এ পুরস্কার পাননি। অবশ্য আট শতাধিক নোবেল মুকুটপ্রাপ্তদের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা মাত্র ১২। উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে, ইহুদিদের সংখ্যাটা ১৬০-এর কম নয়। অর্থনীতিতে সর্বপ্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র নারী নোবেলবিজয়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এলিনর অস্ট্রম। যদিও নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তদের অধিকাংশই আমেরিকান।
অর্থনীতির পুরস্কারের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। ১৯০১ সালে প্রথম নোবেল পুরস্কারের সময় এটা ছিল না। অর্থাত্ এ পুরস্কারের প্রবর্তক আলফ্রেড নোবেলও অর্থনীতিকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেননি বা করে যেতে পারেননি। পরে ১৯৬৮ সালে সেরিজ রিকস ব্যাংক প্রাইজ নামে অর্থনীতিতে পুরস্কার চালু হয়। এটা অবশ্য আলফ্রেড নোবেলের স্মরণেই এবং এ বিষয়ের গুরুত্বের কথা বিবেচনায় রেখেই করা হয়।
নোবেল বিজয়ীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সে পুরস্কার বিজয়ী লিওনিদ হারউইজ। তিনি ৯০ বছর বয়সে অর্থনীতিতে পুরস্কার পান। প্রথম এশীয় হিসেবে অর্থনীতির নোবেল বিজয়ী হলেন অমর্ত্য সেন। তিনি ১৯৯৮ সালে কল্যাণ অর্থনীতি, সামাজিক চয়ন তত্ত্বের (দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্র্য) জন্য এ পুরস্কার লাভ করেন। অর্থনীতির পুরস্কার ঘোষণা ও বাছাই করে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমী অব সায়েন্স। যদিও তারা কেবল অর্থনীতির পুরস্কারই নয়, একই সঙ্গে পদার্থ এবং রসায়নের পুরস্কারও দিয়ে থাকেন।
এ বছরের অর্থনীতির বিষয়ে আসা যাক, নোবেলের ছয়টি বিষয়ের মধ্যে সবার শেষে ঘোষণা হয় অর্থনীতি। অক্টোবরের প্রথম থেকে পুরস্কার ঘোষণা হয়, ১০ অক্টোবর অর্থনীতির ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হয় ঘোষণা। আমরা সাদামাটাভাবে যে অর্থনীতি ব্যবহার করছি, নোবেল পুরস্কারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট www.nobelprize.org তাকে বলছে Economic Sciences । এ বছর অর্থনীতির পুরস্কার জয়ীরা হলেন টমাস সার্জেন্ট ও ক্রিস্টোফার সিমস।
উইকিপিডিয়ায় শুরু থেকে এ পর্যন্ত অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ীদের একসঙ্গে ছবিসহ যে লিস্ট আছে তাতে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ বছরই একাধিক অর্থনীতিবিদ একসঙ্গে এ পুরস্কার পেয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে দুজন পেয়েছেন। কখনো তিনজন মিলে পেয়েছেন। একজনও পেয়েছেন, তবে সেটা কম। সাম্প্রতিক সময়ে এক বছরে একজন নোবেল পুরস্কার পাওয়া অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান। তিনি এ পুরস্কার পেয়েছেন ২০০৮ সালে।
এ বছর যে দুজন নোবেল পান, উভয়ের মাঝেই কিছু মিল আছে। তারা উভয়েই অধ্যাপক এবং আমেরিকান। ১৯৬৯ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার প্রবর্তনের পর থেকে ৪০ বারের মতো এ পুরস্কার জিতলেন মার্কিনিরা। বয়সেও তারা সমান, বয়স ৬৮। তবে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ভিন্ন। টমাস সার্জেন্ট নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা ও অর্থনীতির অধ্যাপক। অন্যদিকে ক্রিস্টোফার সিমস প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও ব্যাংকিংয়ের অধ্যাপক। নোবেল পুরস্কারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে উভয়ের ছবিসহ বিস্তারিত দেয়া আছে। যাতে একটি অপশন হলো ‘কনগ্র্যাচুলেট দ্য নিউ লরিয়েটস’। এতে প্রায় এক হাজার মানুষ তাদের অভিনন্দন জানিয়েছে। এর মধ্যে এক নেপালির অভিনন্দনের ভাষাটা ছিল এ রকম— ‘Congratulation and Salute to both of you.’

এবারের অর্থনীতির বিষয় নিয়ে মূল বিষয়টাই বাদ পড়ে গেছে। তাদের অবদান। ম্যাক্রো অর্থনীতি ও সরকারের অর্থনৈতিক কর্মপন্থার ওপর গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের এ পুরস্কার দেয়া হচ্ছে বলে জানা যায়। নোবেল কমিটি জানায়, সরকারের নীতি বা কর্মপন্থা কীভাবে অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে এ নিয়ে তারা গবেষণা করেছেন। সুদের হারের অস্থায়ী বৃদ্ধি এবং কর হ্রাস অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলে এ সম্পর্কীয় একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদরা। অর্থনীতিবিদ হিসেবে ড. ইউনূসকেও এখানে আনা যায়। ড. ইউনূসের পড়াশোনা অর্থনীতি বিষয়ে হলেও তিনি নোবেল পেয়েছেন শান্তিতে। তাকে অর্থনীতিতে পুরস্কার না দিয়ে শান্তিতে দেয়ায় অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। ২০০৬ সালে দারিদ্র্যবিমোচন ক্ষুদ্র ঋণ প্রবর্তনে গ্রামীণ ব্যাংক এবং তাকে যৌথভাবে এ পুরস্কার দেয়া হয়।
এ বছরের অর্থনীতির এ দুই অধ্যাপক নোবেল পুরস্কার স্বরূপ পাবেন ১ কোটি সুইডিশ ক্রোনার, ডলারে তা ১৪ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার, বাংলাদেশী টাকায় ১৫ কোটি প্রায়। তাদের এ পুরস্কার দেয়া হবে আগামী ১০ ডিসেম্বর।

বণিক বার্তা, 16 অক্টোবর ২০১১

ছবি- উইকিপিডিয়া

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।