প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে এ বছর পাসের হার ৯২ ভাগ। পাসের হার সন্তোষজনক। উদ্বেগটা অন্যখানে, ঝরেপড়ায়। প্রায় ২৫ লাখ শিক্ষার্থী এ পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করে। গত ২৩ নভেম্বর শুরু হওয়া পরীক্ষায় অংশ নেয় ২২ লাখ শিক্ষার্থী। প্রায় তিন লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেয়নি। ২২ লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করে ২০ লাখ ১৩ হাজার ৯৬৬ জন। ফেল করেছে দুই লাখ। অর্থাৎ মোট পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী শুধু পঞ্চম শ্রেণী থেকে ঝরে গেল।
গোটা প্রাথমিক শিক্ষায় এ ঝরেপড়ার হার কত ভাগ। গত ৮ নভেম্বর সমকাল শিক্ষামন্ত্রীর তরফে জানায় ৪৮ ভাগ। বিষয়টি স্পষ্ট। প্রত্যেক বছর ৪০ লাখের মতো শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়। ৪০ লাখের মধ্যে সমাপনী পরীক্ষা শেষে দেখলাম টিকে আছে ২০ লাখ।
আমাদের অর্ধেক শিক্ষার্থীই পঞ্চম শ্রেণী পাস করার আগেই ঝরে যায়। তার ওপর দেশের মোট শিশুর ৯২ ভাগ স্কুলে আসে, অর্ধেকের সঙ্গে যুক্ত হলো আরও ৮ ভাগ। মানে, আমাদের অর্ধেকের বেশি শিশুই ঝরেপড়ার কাতারে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা তা-ই প্রমাণ করল।
প্রাথমিকে ফেল করা শিক্ষার্থী যেমন আছে, তেমনি পরীক্ষায় অংশই নেয়নি এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। অংশ না নেওয়ার পেছনে অনেক কারণের মধ্যে একটি কারণ ছিল শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্র অনেক দূরে। দূরে কেন্দ্র হওয়ার ফলে অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে যেতে পারেনি। এটার সমাধান খুব সহজ, গ্রামভিত্তিক, ইউনিয়ন ছোট হলে ইউনিয়নভিত্তিক কেন্দ্র দেওয়া। এরকম ছোট ছোট এবং সহজে সমাধানযোগ্য কারণগুলো খুঁজে সহজ সমাধান বের করা।
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় যারা ফেল করেছে বা পরীক্ষায় অংশ নেয়নি, তাদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনা নিঃসন্দেহে কষ্টের বিষয়। প্রধান প্রতিবন্ধকতা দারিদ্র্য। দরিদ্র পরিবারের অভিভাবক তাদের সন্তানদের আবার স্কুলে দেওয়ার প্রেষণা হারিয়ে ফেলবে। এক্ষেত্রে এক বিষয় বা দুই বিষয়ে ফেল করা শিক্ষার্থীদের ওই বিষয়ে আলাদা পরীক্ষার সুযোগ রেখে, পরবর্তী শ্রেণীতে ভর্তির অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। বিদ্যালয়গুলোকে তাদের ফেল করা এবং পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া শিক্ষার্থীদের বিষয়ে অধিক তত্ত্বাবধান করার ওপর জোর দেওয়া যেতে পারে।
এ কথা ঠিক, পাবলিক পরীক্ষা বেড়েছে বলে গোটা শিক্ষার মান যেমন আমাদের কাছে স্পষ্ট, তেমনি এর চ্যালেঞ্জগুলো। বলাই যায়, ঝরেপড়াটা এখনও আমাদের শিক্ষার প্রধান চ্যালেঞ্জ। আগের এসএসসি আর এইচএসসি তো থাকছেই, নতুন করে যোগ হলো জেএসসি এবং প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী।
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর ব্যাপারে আরও কথা আছে। ১০-১১ বছরের একটি শিশুকে যুদ্ধে ঠেলে দিয়ে এ পরীক্ষা নিজেই ঝরেপড়া বাড়াচ্ছে কি-না, সংশয় প্রকাশ করেছে অনেকেই।
প্রাথমিক শিক্ষায় শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত করার ব্যাপারে অনেক তোড়জোড় বক্তব্য শোনা যায়। তার তুলনায় ঝরেপড়া রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের আওয়াজ খুবই ক্ষীণ। অথচ গুরুত্ব দেওয়া উচিত এখানেই।