Mahfuzur Rahman Manik
স্বপ্নের দোলাচলে বিনামূল্যের পাঠ্যবই
অক্টোবর 28, 2010

আগের বছরগুলোর অভিজ্ঞতায় সরকার আগামী বছরের আগেই শিক্ষার্থীদের হতে বই পেঁৗছে দিতে চায়। মার্চ থেকেই এর কার্যক্রম শুরু করে। ১৫ মার্চের মধ্যেই সব প্রতিষ্ঠান তাদের চাহিদা নিজ নিজ শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে জানায়। মার্চে সরকার কাগজ কেনার দরপত্র আহ্বান করে, যদিও এ নিয়ে অযথাই দেরি হয়। আন্তর্জাতিক দরপত্রের নামে বাংলাদেশের টি কে পেপারমিল এবং কর্ণফুলী পেপারমিল বাদে ভারতের প্রতিষ্ঠানগুলোই বেশি কাজ পায়। বই মুদ্রণের শেষ দিন অক্টোবরের ৩০ তারিখ। ৯ অক্টোবর প্রকাশিত সমকালের সংবাদ অনুসারে এ দিনে মুদ্রণ কাজ শেষ হওয়া দূরে থাক, পুরো কাগজ হাতে পেতেই লেগে যাবে ৩০ নভেম্বর। এ বছর কাগজের চাহিদা ২৩ হাজার টন। এর মধ্যে রুপানা পেপারমিল নামে ভারতের একটি প্রতিষ্ঠান দুই হাজার টন কাগজের কার্যাদেশ পায়। প্রতিষ্ঠানটি এখনও এনসিটিবিকে কাগজ দেয়নি। অথচ কাগজের অভাবে কোথাও কোথাও পাঠ্যবই ছাপার কাজ এখন বন্ধ। কাগজ পাওয়ার পর কাজ শেষ হতে ডিসেম্বরও লেগে যেতে পারে। এর অর্থ, বছরের প্রথম দিন থেকে শিক্ষার্থীদের নতুন বই পাওয়ার স্বপ্ন আগত শিক্ষাবর্ষে বাস্তব হবে কি-না, যথেষ্ট সংশয় থেকেই যাচ্ছে।আগামী শিক্ষাবর্ষে বইয়ের মোট চাহিদা ২৩ কোটি। বই ছাপা হচ্ছে এক হাজার বিশটি প্রেসে। এনসিটিবি বই ছাপার কাজ পর্যবেক্ষণ করছে। ৪৩টি প্রেসকে ঝুঁকিপূর্ণ, এর মধ্যে ১০টি প্রেসকে অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এনসিটিবি। এ প্রেসগুলোর কারণেও নির্দিষ্ট সময়ে মুদ্রণকাজ শেষ হবে না।বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের নতুন, রঙিন কিংবা ভালো কাগজের বই যেমন দরকার, সে বইটি মানসম্মত কিংবা যুগোপযোগীও হওয়া দরকার। আমাদের মাধ্যমিকের বর্তমান সিলেবাস ১৯৯৫ সালে প্রণীত। প্রাথমিকের সিলেবাসের বয়সও কম নয়। স্বাভাবিকভাবেই ১৫ বছর আগের সিলেবাসের প্রাসঙ্গিকতা বর্তমানে নেই। মাধ্যমিকের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, ২০১২ সাল থেকে শিক্ষার্থীরা নতুন সিলেবাসের বই পাবে। প্রাথমিকের জন্যও এ রকম ঘোষণা দ্রুত আসা চাই। প্রচলিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পাঠ্যবই-ই পেতে যেখানে দেরি হচ্ছে, সেখানে নতুন সিলেবাস প্রণয়নে কতটা দেরি হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকার এ বিষয়ে পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে পারে।যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পেঁৗছে দেওয়ার বাধা হিসেবে প্রতি বছরই \'সিন্ডিকেট\'র কথা শোনা যায়। এ বছরও সিন্ডিকেট সমস্যাকে নাকচ করছে না পত্রিকাগুলো। বই কার্যক্রমে সরকার তিন শতাধিক কোটি টাকা খরচ করছে। এ বিরাট অঙ্কের প্রতি লোলুপ দৃষ্টিই তৈরি করছে সিন্ডিকেট। প্রশাসন স্বচ্ছ, সক্রিয়, সচেতন এবং নিয়মমাফিক সব কাজ করলে সিন্ডিকেট থাকার কথা নয়।বই নিয়ে রাজনীতি, ব্যবসা, বিলম্বিত সংস্কৃতি আর নয়। আগামী বছরের আগে বই পেঁৗছে দিতে এখনও কিছুটা সময় বাকি। সব সমস্যার দ্রুত সমাধান করে শিক্ষার্থীদের হাতে যথাসময়ে বই পেঁৗছে দেওয়া চাই।

ট্যাগঃ

One comment on “স্বপ্নের দোলাচলে বিনামূল্যের পাঠ্যবই”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।