Mahfuzur Rahman Manik
এই নগরীর ৪০০তম জন্মদিন(ইত্তেফাক ২০ জুলাই২০০৯)
মার্চ 17, 2010

গত ১৬ জুলাই ছিল ঢাকার ৪০০তম জন্মদিন। অর্থাৎ ১৫ জুলাই ঢাকা ৩৯৯ বছর পূর্ণ করেছে। ১৬১০ সালের এই দিনে মোগল সুলতান সুবেদার ইসলাম খাঁ ঢাকাকে রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন। ৪০০ বছরের ঢাকা বলা হলেও ঢাকা তার সঠিক হিসাবে ২০১০ সালের ১৬ জুলাই পূর্ণ করবে ৪০০ বছর। ঢাকা মোটামুটি এ উপমহাদেশের প্রাচীন শহরগুলোর অন্যতম। ৩৯৯ বছর আগের ঐতিহ্যের ঢাকা বর্তমানে ১ কোটি ২৫ লাখ জনসম্পদ নিয়ে বিশ্বের অন্যতম মেগাসিটির খেতাব অর্জন করেছে।

ঢাকাকে রাজধানী ঘোষণা করা হয় এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। তখন ইসলাম খাঁ ঢাক বাজানোর নির্দেশ দেন। যে পর্যন্ত ঢাকের শব্দ পৌঁছেছিল, সেটাই হয়েছিল ঢাকার সীমানা। কেউ বলেন-ইসলাম খাঁর এই ঢাক বাজানোর নির্দেশ অর্থাৎ ঢাক শব্দ থেকে ঢাকার নাম করা হয়। অ্বশ্য নাম নিয়ে আরো কথা প্রচলিত আছে। প্রাচীন শহর ঢাকা যখন সমতট, বঙ্গ ও গৌড় প্রভৃতি জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল তখন ঢাকা নামে আঞ্চলিক ভাষা এ জনপদে প্রচলিত ছিল, তা থেকে এর নাম হয় ঢাকা। কেউ বলেছেন, ঢাকা-ঈশ্বরী বা ঢাকেশ্বরী যে মন্দির রয়েছে সে অনুসারেই এর নাম ঢাকা। আবার কারো মতে, এ অঞ্চলে প্রচুর ঢাকা গাছ জন্মাত। যা ছিল এ অঞ্চলের মানুষের খুবই প্রিয়। তা থেকে ঢাকা নাম হিসেবে এসেছে।

ঐতিহাসিক তথ্যানুযায়ী, ৩৯৯ বছর আগে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের ফরমান অনুযায়ী সুবেদার ইসলাম খাঁ চিশতী ঢাকায় বাংলার প্রাদেশিক রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর সংলগ্ন টিএসসি সড়কে হরিদ্রাবর্ণের যে গেট এখনও দাঁড়িয়ে আছে সেটাই-ঢাকা গেট। সম্রাট জাহাঙ্গীরের নামানুসারে রাজধানীর নাম জাহাঙ্গীর নগর রাখা হলেও লোকমুখে ঢাকা নামটিই প্রচলিত ছিল। অবশ্য সম্রাট জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর সে নামেরও মৃত্যু ঘটে।

সম্রাট আকবরের আমলে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার রাজধানী ছিল বিহারের রাজমহল। তখন বাংলায় চলছিল মোগলবিরোধী বার ভূঁইয়ার শাসন। মোগলরা দীর্ঘ সময় চেষ্টা করে বঙ্গ বিজয়ে সফল হন। সম্রাট জাহাঙ্গীর ১৬০৮ সালে ইসলাম খাঁ চিশতীকে রাজমহলের সুবেদার নিয়োগ করেন। তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে বাংলার ভৌগোলিক অবস্থান বিশ্লেষণ করে রাজমহল থেকে রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তরিত করেন।

মোগল রাজধানী স্থাপনের পরে ঢাকাইয়া মসলিনের খ্যাতি বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা এসে বাংলার মসলিন কিনতেন। ফলে ঢাকা পরিণত হয় গোটাবঙ্গের কেন্দ্রবিন্দুতে। এরপর ঢাকার পরিচিতির সাথে রাজধানী হারিয়ে যায়। অর্থাৎ ১৭১৭ সালে মুর্শিদকুলি খান রাজধানীকে ঢাকা থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় স্থানান্তর করেন। তখন ঢাকা পরিণত হয় নায়েব-নাজিমের শাসনে। অবশ্য এখানে ব্যবসা বাণিজ্য এবং জনবসতি ছিল। এরপর ব্রিটিশ আমলে রাজধানী চলে যায় কলকাতায়।

১৯০৫ সালে ব্রিটিশ সরকার ঢাকাকে আবার বাংলার রাজধানী করলে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পায় ঢাকা। এরপর ১৯১১ সালে ঢাকা থেকে রাজধানী নিয়ে নেয়া হয় ভারতের কলকাতায়। পূর্ববাংলার মানুষের দাবির মুখে ১৯২১ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী হিসেবে ঢাকা আবার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী হিসেবে এক নতুন স্বাতন্ত্র্য পায় ঢাকা।

চলতি মাসের ১৬ তারিখে ঢাকার ৪০০তম জন্মদিন পূর্ণ হলো। আর আগামী বছর অর্থাৎ ২০১০ সালের ১৬ জুলাই ঢাকার ৪০০ বছর পূর্তি হবে। ৪০০ বছর পূর্তিকে সামনে রেখে চলছে নানা আয়োজন। একাডেমিক গবেষণা, স্মৃতি সংরক্ষণ এবং সাংস্কৃতিক কর্মসূচির আয়োজন করছে বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠন। এশিয়াটিক সোসাইটি, শত নাগরিক কমিটি, আমরা ঢাকাবাসী প্রভৃতি সংগঠন পালন করবে নানা কর্মসূচি। এসব কর্মসূচির মধ্যে ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক বিবর্তন, সাহিত্য, নগরজীবন, নগর ও নারী, স্থাপনা ইত্যাদি সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে গবেষণার মাধ্যমে মোট ১৯টি বই প্রকাশিত হবে। এছাড়া ঢাকার ওপর এ যাবৎ লেখা প্রায় ৩ হাজার বইয়ের গ্রন্থপঞ্জি প্রকাশিত হবে। এগুলো করবে এশিয়াটিক সোসাইটি। ঢাকার ৪০০ বছর তার ঐতিহ্য আর সম্মানের। আমরা ঢাকার গৌরবময় ঐতিহাসিক এগিয়ে চলা কামনা করছি।
http://ittefaq.com.bd/content/2009/07/20/news0819.htm

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।