Mahfuzur Rahman Manik
ঢাকার শীত, গ্রামের শীত
জানুয়ারী 15, 2017

gai-winter-36441গ্রামে ঘুমুতে যখন লেপ-কম্বলেও শীত মানছে না, রাজধানীতে তখন এক-দুটো পাতলা কাঁথায় দিব্যি চলছে। গ্রামে পৌষের শীতে যখন সবাই গরমের পোশাকে জবুথবু, ঢাকায় পাতলা জামায় চলছে তখন। দূরত্বের দিক থেকেও যে খুব বেশি তা নয়। তার পরও রাজধানী বলে কথা। মানুষের কোলাহলে শীত বুঝি আসতে ভয় পায়! আর প্রায় সর্বক্ষণ দরজা বন্ধ থাকা রুমে শীত ঢুকবেই বা কীভাবে!
এ বছর অবশ্য এতদিনে ঢাকায় তেমন শীতের দেখা না মিললেও শনিবার মাঘ আসার সঙ্গে সঙ্গে ভালোভাবেই শীত অনুভূত হচ্ছে। বাইরে বের হলেই শৈত্যপ্রবাহ টের পাওয়া যাচ্ছে। অন্যের গায়ে গরমের পোশাক দেখেও তো বলা যায়, শীত যে সত্যি জেঁকে বসেছে।
শীতে গ্রামের চিত্র একরকম, শহরের অন্যরকম। গ্রামে সবাই মিলে লাকড়ি জ্বালিয়ে আগুন পোহানোর মধুর চিত্র দেখা যায়, দেখা যায় সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির আঙিনায় রোদ পোহানোর দৃশ্য। প্রকৃতির পরিবর্তনও গ্রামে লক্ষণীয়; মাঠে-জমিতে সবুজ শাকসবজি আর রসের হাঁড়ি নিয়ে খেজুর গাছে কৃষক। রাজধানীতে এসব চিত্র বিরল। রাজধানীর চিত্র অবশ্য দু'রকম। কৃত্রিম উপায়ে শীত নিবারণের ব্যবস্থা এখানে যেমন রয়েছে একই সঙ্গে শীতবস্ত্রহীন অসহায় মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। রাজধানীতে যারা পথেঘাটে থাকে অনেকে অনেক কষ্টে শীতের দিন কাটায়। কম শীত হলে না হয় রাজধানীর 'গরমে' তাদের সমস্যা কম হয় কিন্তু শীতের প্রকোপ যখন বেশি তখন ভোগান্তিও কম নয়।
শীত বাড়লে শীতবস্ত্র ব্যবসায়ীদের ওপর এর প্রভাব পড়বে- এটাই স্বাভাবিক। সপ্তাহখানেক আগেও সংবাদমাধ্যম বলেছে, ঢাকার গরম কাপড়ের বাজার এখনও সেভাবে জমেনি। এখন হয়তো অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। মাঘের শীতে নাকি বাঘও কাঁপে। সে মাঘ মাস যে হাজির।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতেও এ রকম বিলম্বিত শীতের অভিজ্ঞতা হচ্ছে আমাদের। বলা হয় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঋতুতেও পরিবর্তন আসছে। এ বছর এল নিনোর প্রভাবে শীতের বিলম্ব বলছেন অনেকে। ওয়ার্ল্ড ম্যাটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডবিল্গউএমও) গত হওয়া ২০১৬ সালকে উষ্ণতম বছর হিসেবে ইতিমধ্যে অনানুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিলম্বিত হচ্ছে শীত।
winter-470x270বলা বাহুল্য, ঋতু হিসেবে শীত অনেকেরই প্রিয়। এ ঋতুতে শাক-সবজিসহ কেবল প্রাকৃতিক নানা জিনিসই পাওয়া যায় না, চলাফেরায় শীতকাল স্বাচ্ছন্দ্য। শীতে শরীর ও ত্বক পরিচর্যায় বাড়তি মনোযোগ দিতে হলেও ধোয়ামোছা, খাবারদাবার সংরক্ষণে ভেজাল কম। তবে মাত্রাতিরিক্ত হলে সমস্যা বেশি। শীতের কারণে মানুষের মৃত্যুও হয়, বিশেষ করে প্রায় প্রতি বছরই আমাদের শীতপ্রবণ এলাকায় বয়স্ক ও শিশুমৃত্যুর খবর সংবাদমাধ্যমে দেখা যায়। আর বিশ্বের শীতপ্রবণ দেশ, বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোতে তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নেমে যায়। রাস্তায় বরফ পড়ে। মানুষের চলাচলেও সমস্যা হয়।
শীত প্রকৃতিরই অংশ। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় এটি প্রয়োজন। প্রকৃতি সবার জন্যই সমান। এখানে গ্রাম-শহরের ভেদাভেদ নেই। মানুষের অবস্থানুযায়ীই প্রকৃতি আচরণ করে। প্রকৃতির প্রতি মানুষ সদয় হলে প্রকৃতিও সদয় হয়। তবে রাজধানীতে যখন কলকারখানার বাহার, যখন এটি লোকে লোকারণ্য, লাখ লাখ চুলা যখন এখানে জ্বলে, বিদ্যুতের খেলা যখন এর নিয়তি তখন শীতটা হিসাবমতোই আসে। গ্রামের চেয়ে এখানে শীত কিছুটা কম হওয়াই স্বাভাবিক।

ট্যাগঃ , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।