Mahfuzur Rahman Manik
ভিসি খোঁজার মিশন
আগস্ট 29, 2024

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য যোগ্য উপাচার্য খুঁজে পাচ্ছে না সরকার। অথচ কিছুদিন আগেও সম্ভাব্য উপাচার্যের ভিড়ে সচিবালয় বা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের অফিসে অন্য কারও জায়গা পাওয়াই কঠিন হতো। দেশের ৪০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি এখন উপাচার্য নেই। এত এত ভিসি বা উপাচার্য পদপ্রত্যাশী তাহলে গেলেন কোথায়?

অবশ্য আগে ভিসি হওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের প্রতি সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের অনুগত্যই ছিল মূল যোগ্যতা। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সেখানে পরিবর্তন এসেছে। নতুন সরকার উপাচার্য হওয়ার ক্ষেত্রে একাডেমিক যোগ্যতাকেই প্রাধান্য দিচ্ছে– ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের মাধ্যমে তা প্রমাণিত।

এতদিন উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি প্রশাসনিক পদে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিতদের বসানোই ছিল দস্তুর। অনুরূপভাবে আবাসিক হলগুলো দখল করে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন সেখানে তাদের রামরাজত্ব কায়েম করেছিল। গত দেড় দশক ধরে ছাত্রলীগ আবাসিক হলগুলোতে ‘গণরুম’ ও ‘গেস্টরুম কালচার’-এর বিস্তার ঘটিয়ে মুক্তচিন্তা চর্চার প্রতিষ্ঠানগুলোতে কী বিভীষিকা তৈরি করেছিল, তা অজানা নয়। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাথা তথা উপাচার্য পদেই যখন পচন ধরে, তখন তা গোটা শিক্ষাঙ্গনকে প্রভাবিত করাটাই স্বাভাবিক। এ কারণেই ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর দলীয় অনুগত উপাচার্য ও অন্যান্য প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তি একে একে পদত্যাগ করতে থাকেন। উপাচার্য পদে যোগ্য ব্যক্তিরা থাকলে নিশ্চয় এমনটা দেখা যেত না।

এ সংকট থেকে উত্তরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সে জন্য শিক্ষাঙ্গন সংস্কারে হাত দিতে হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে উপাচার্য নিয়োগে তারা নিশ্চয় কিছু মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদনে যেমনটা এসেছে, গত সরকারের আমলে সুবিধাভোগী ও সমর্থনকারী কেউ উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্য নন। একাডেমিক দিক থেকে যোগ্য, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ ও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে মোটা দাগে ‘গ্রহণযোগ্য’ ব্যক্তি খুঁজছে বর্তমান সরকার। যোগ্যতার এসব মাপকাঠির কারণেই উপাচার্য নিয়োগ দিতে সংকটে পড়ছে সরকার। শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ থাকলে নিশ্চয় এমনটা হতো না।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এত বছর যেভাবে লেজুড়বৃত্তির ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি প্রচলিত ছিল, সে জন্য শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস হয়েছে। যোগ্য শিক্ষকরা নিয়োগ পাননি। শিক্ষার্থীরাও একদিকে আবাসিক হলে ছাত্রলীগের দ্বারা জিম্মি হয়েছে, অন্যদিকে শ্রেণি কার্যক্রমে অনেক ক্ষেত্রে দেখেছে অযোগ্যদের। এই ধারায় পরিবর্তনের জন্য শুরুতেই উপাচার্য পদে বদল আনা জরুরি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সেই প্রচেষ্টার সূচনা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও দুই উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে কিছু সমালোচনা থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষানুরাগী মানুষের কাছে তা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। অন্তত সবাই স্বীকার করেছেন, গবেষণা কিংবা একাডেমিক দিক থেকে তারা যোগ্য। তবে প্রশ্ন উঠছে, ১৯৭৩ সালে অধ্যাদেশ অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে কিনা। যদিও আচার্য বিশেষ পরিস্থিতিতে উপাচার্য নিয়োগ দিতে পারেন। এখানে সেটাই হয়েছে। তার পরও কিন্তু অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সমানভাবে এমন যোগ্য উপাচার্য পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় থাকা স্বাভাবিক। কারণ দীর্ঘদিন ধরে যে অপচর্চা চলে আসছে, সেখানে হঠাৎ সব পরিবর্তন হয়ে যাবে, কিংবা সবখানে শতভাগ যোগ্য মানুষ বসানো যাবে, সেটা কঠিন। কিন্তু যে প্রচেষ্টা সরকার চালাচ্ছে, তাকে সাধুবাদ জানাতেই হবে।

যোগ্য উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি তাদের স্বাধীনতা দেওয়াও জরুরি। আগে যেমন উপাচার্যদের নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতের চেয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের স্বার্থ দেখা প্রধান কাজ ছিল। এমন কোনো শর্ত এখন থাকতে পারে না। শেষে এটাও বলা দরকার, উপাচার্য কিংবা অন্যান্য পদের লবিং ও তদবিরকে যেন অযোগ্যতা হিসেবে দেখা হয়।

সমকালে প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৪

ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।