ঈদুল আজহায় গরু-ছাগল দুই-ই কোরবানির অনুষঙ্গ হলেও আলোচনায় সবসময় গরুই প্রধান। বিপুল অধিকাংশই যখন গরু কোরবানি দেয় তখন সংবাদমাধ্যম, ক্রেতা-বিক্রেতা সবার মনোযোগের কেন্দ্রে থাকে গরু। তবে বিক্রেতার মনোযোগই বোধহয় বেশি থাকে। তার প্রস্তুতির ব্যাপার আছে। অনেকে সারাবছর এই ঈদের জন্য অপেক্ষা করেন। অনেক দিন ধরে পরিচর্যা করে গরু কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেন। বিশেষ করে গরু ব্যবসায়ীরা মোটাতাজা করে গরু হাটে তুলতে চান। তাতে বেশি দাম পাবেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈজ্ঞানিক উপায়ে গরু মোটাতাজা করতে নূ্যনতম চার-পাঁচ মাস সময় লাগে। ইউরিয়া, খড়, চিটাগুড় ইত্যাদি খাইয়ে তা সম্ভব। কিন্তু ঈদ যখন নিকটবর্তী তখন অনেক ব্যবসায়ী বেশি দামের আশায় দুই মাসের মধ্যেই ওষুধ ও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে গরু মোটাতাজা করতে চান। ফলে ভেজাল গরুর প্রশ্ন আসে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয় 'ভেজাল গরু চেনার উপায়'। সোমবার অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজের লাইফ স্টাইল বিভাগে ফিচারটি প্রকাশ হয়। ইউটিউবে 'মজা লস' নামের পেজে অবশ্য গত বছরই ৫ মিনিটের একটি ভিডিওতে 'ভেজাল গরু চেনার ৩টি সহজ উপায়!' বাতলে দেওয়া হয়। এসব দেখে যত না ভেজাল খোঁজার জন্য সচেতন হই, তার চেয়ে বেশি হই আতঙ্কগ্রস্ত। যে কেউই বিস্মিত হবেন। মাছে ভেজাল, ফলে ভেজাল, তরকারিতে ভেজাল, শিশুখাদ্যে ভেজাল। ইত্যাদি ভেজালে যদিও আমরা অভ্যস্ত তারপরও কোরবানির গরুতে ভেজালের কথা অনেকে চিন্তাও করতে পারেন না। কিন্তু ভেজাল সেখানেও! তার মানে ভেজালমুক্তি যে আমাদের সুদূর পরাহত_ তা বলা বাহুল্য।
এখন বাঁচার জন্য আমাদের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। ভেজাল গরুর তিনটি চিহ্ন ওই ভিডিও বলছে_ সিনার হাড্ডি দেখা যাবে না, গায়ে চাপ দিলে চামড়া গোশত দেবে যাবে ও মুখে অতিরিক্ত ফেনা জমে থাকবে। আর ফিচারে বলা আছে, সুস্থ গরুর গায়ে আঙুল দিয়ে চাপ দিলে মাংস দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে; কিন্তু ভেজাল গরুর ক্ষেত্রে স্বাভাবিক হতে সময় লাগে। এসব গরুর শরীরে পানি জমার কারণে নড়াচড়া কম করে। আবার ট্যাবলেট খাওয়ানো গরুর শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়। মনে হয় হাঁপাচ্ছে।
ইসলামে হৃষ্টপুষ্ট পশু কোরবানির কথা বলা হয়েছে। এখন অনেকের মধ্যে মোটাতাজা, বড়, দামি গরু কোরবানি নিয়ে প্রতিযোগিতা দেখা যায়। অনেকের জন্য তা যেন সামাজিক মর্যাদার পরিচায়ক। সেটাও কিন্তু ব্যক্তির ভেজাল নিয়ত। এ রকম ভেজাল নিয়ে কোরবানি তার আসল উদ্দেশ্যই হারায়।
তবে ভেজাল গরু শনাক্ত করা যেমন ব্যক্তির কাজ, তার চেয়ে বেশি দায়িত্ব প্রশাসনের। অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পশু মোটাতাজাকরণে হয়তো সাময়িক লাভ হতে পারে, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে তার ক্ষতি অপূরণীয়। একে তো বিষাক্ত ওষুধ প্রয়োগে গরুর জীবন বিপন্নম্ন হতে পারে, আবার সে গরুর গোশত খেলে যে কারও মারাত্মক রোগব্যাধি হতে পারে।
আসলে কোরবানির সঙ্গে ভেজাল গরু যায় না। যেখানে ব্যক্তি ত্যাগের নিদর্শনস্বরূপ পশু জবাই করেন, সেখানে পশু সরবরাহকারী ভেজাল পশু দেবেন_ তা স্বাভাবিকভাবে অবিশ্বাস্য। তারপরও যখন তা ঘটছে তখন আমরা কোন অবস্থায় আছি বলার অপেক্ষা রাখে না।