Mahfuzur Rahman Manik
‘নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ’ গ্রামে কেন নয়

অনেকে বলেন– গ্রামে বিদ্যুৎ যায় না, মাঝে মাঝে আসে। এটি পুরোনো কথা, কিন্তু এখনও কি পরিস্থিতির সেই অর্থে উন্নতি ঘটেছে? শহর থেকে গ্রামে ঈদ করতে গিয়ে সেই প্রশ্নটিই বারবার মনে হয়েছে। ঈদে সরকারি ছুটির সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে বিদ্যুৎ বিভাগের চেষ্টা ছিল বটে; বিদ্যুৎ ভবনে স্থাপন করা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ অন্তত তার প্রমাণ। বাস্তবে ‘নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ’ কেবল শহরেই মিলেছে। গ্রামে গতানুগতিক সেই লোডশেডিংই নিয়তি!

ঈদে কয়েকদিন বাড়ি থেকে দেখেছি, দিনের বেলায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বটে কিন্তু রাতের অভিজ্ঞতা ছিল ভয়াবহ। দিনে যতবার বিদ্যুৎ যেত, রাতে যেত তার দ্বিগুণ হারে। ঈদের পূর্বে এক দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখেছিলাম, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে। কুমিল্লার প্রতিবেশী আমাদের চাঁদপুরে তেমনটিই ঘটেছে। সবচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতা ছিল ঈদুল আজহার দিন তথা সোমবার। সন্ধ্যার আগ থেকেই বিদ্যুৎ হাওয়া। সন্ধ্যার ঘণ্টাখানেক পর এলেও রাতে আবার তার দেখা নেই। গ্রামের মানুষ অধিকাংশই রাত ১০টার মধ্যে শুয়ে পড়েন। রাতে দফায় দফায় বিদ্যুৎ যেভাবে গিয়েছিল, তার জন্য ‘মাঝে মাঝে আসে’ বলাই যুক্তিসংগত। রাতে প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুৎহীন মানুষ হাঁসফাঁস করেছে। বাচ্চাগুলো কান্না করেছে। হাতপাখা ঘুরাতে ঘুরাতে হাত ব্যথা হয়ে যায়; বিদ্যুতের খবর নেই। মাঝেমাঝে যখন বিদ্যুৎ আসে, একটু স্বস্তি পাই। চোখে ঘুম না আসতেই আবার চলে যায়। গরমে বাচ্চাদের কান্নায় বারবার ঘুম ভেঙে যায়। এভাবে ঘুমহীন রাতের পর সকাল আসে, কিন্তু বিদ্যুৎ থেকে নিস্তার নেই। সকালে একটু ঘুমাব তখনই সেই বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার খেলা। সেখানে চার্জার ফ্যানসহ বিকল্প সব ব্যবস্থা অসহায়। ওইদিন তথা ঈদের পরদিন সকাল ৯টার মধ্যে বিদ্যুৎ গিয়েছিল তিনবার।

শহরের মতো গ্রামে বিদ্যুৎ ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে আসে না। একবার বিদ্যুৎ গেলে অধাঘণ্টা-এক ঘণ্টার আগে আসার নজির নেই বললেই চলে। ঈদের মধ্যেই যখন এই অবস্থা, তখন অন্য সময়ের পরিস্থিতি সহজেই অনুমেয়। গত এপ্রিলে লোডশেডিংয়ের তীব্রতা দেখেছে গ্রামের মানুষ। ওই সময় গ্রামাঞ্চলের কোথাও কোথাও ১২ ঘণ্টাও লোডশেডিং হয়েছে। গরমে বিদ্যুতের চাহিদা যখন বেড়ে যায়, প্রথমেই তার শিকার হয় গ্রামের মানুষ। গ্রামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। অথচ সেখানেই বেশি মানুষ বাস করে।

যা হোক, কিন্তু ঈদের পরিস্থিতি তো ভিন্ন। এই সময়ে অফিস, আদালত, কল কারখানা বন্ধ থাকে। শহর থেকে অনেক মানুষ গ্রামে চলে যায় বলে শহরে বিদ্যুতের চাহিদাও কমে যায়। এরপর কেন সেখানে প্রত্যাশিত বিদ্যুৎ দেওয়া হয় না? বিদ্যুৎ বিভাগ যদিও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের কথা বলেছে। বাস্তবতা বলছে, এটা যেন শহরের জন্যই প্রযোজ্য। শহরে যেমন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রয়োজন আছে, গ্রামের প্রয়োজনও তো অস্বীকার করা যাবে না। শহরে সর্বোচ্চটা দিয়ে বাকিটুকু গ্রাম পাবে, এমনটা বৈষম্যমূলক নীতি।

সরকার প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত দেশের প্রায় সবাইকে বিদ্যুতের আওতায় এনেছে, এটি বড় সাফল্য। কিন্তু বিদ্যুৎ দেওয়াই তো শেষ কথা নয়। তাছাড়া আমাদের বিদ্যুতের সক্ষমতাও কম নয়। বিদ্যুৎ বিভাগ বছরে বছরে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করছে। কিন্তু সেই বিদ্যুৎ কোথায়। গ্রাম কেন সেভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে না?

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ গ্রামেও হোক। স্বাভাবিক সময়ের পাশাপাশি ঈদ উৎসব যেন গ্রামের মানুষ একটু স্বস্তিতে কাটাতে পারে।

সমকালে প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৪

ট্যাগঃ , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।