Mahfuzur Rahman Manik
রাজনৈতিক সংঘাতে উন্নয়ন যেন ব্যাহত না হয়
জানুয়ারী 19, 2023
student politics in private university

সাক্ষাৎকার: ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ

সাক্ষাৎকার গ্রহণ: মাহফুজুর রহমান মানিক

বীর মুক্তিযোদ্ধা, অর্থনীতিবিদ ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন ও ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের চেয়ারম্যান। বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ছাড়াও তিনি উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। পঞ্চাশের দশকের শেষ এবং ষাটের দশকের গোড়ার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্র কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ পিএইচডি করেছেন যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স (এলএসই) থেকে। তিনি ২০০৯ সালে দারিদ্র্য বিমোচনে একুশে পদক লাভ করেন এবং ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন।

সমকাল: অর্থনীতির কথা যদি আমরা বলি- পুরোনো বছরের সংকট নতুন বছরেও আমরা দেখব। আপনার বিবেচনায় ২০২২ সালে আমরা কি টালমাটালের বছর অতিবাহিত করলাম?

কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: ২০২২ সাল অবশ্যই আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ উভয় ক্ষেত্র একটি অর্থনৈতিক টালমাটালের বছর ছিল। মোটা দাগে দুটি কারণ, একটি করোনা মহামারি এবং অপরটি ইউক্রেন যুদ্ধ। করোনা মহামারি স্বাস্থ্য এবং অর্থনীতি উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাপক বিরূপ অভিঘাত ফেলে। শুরুতে এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তা কোনো দেশের ধারণায় ছিল না। কেননা এই মহামারি হঠাৎ করেই আসে। বাংলাদেশও অন্যান্য দেশের মতো অপ্রস্তুত অবস্থায় এর মোকাবিলা করতে শুরু করে। তবে এখন এটা সবারই জানা যে, বাংলাদেশ খুব দ্রুততার সঙ্গে স্বাস্থ্যগত দিক এবং অর্থনৈতিক দিক দুটোই উল্লেখযোগ্য সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। তবে করোনা মহামারির অভিঘাত থেকে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করার সময়ই ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়; যার বিরূপ প্রভাব পড়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এবং বাংলাদেশসহ সব দেশেই অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে। ফলে আমরা লক্ষ্য করি, অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সামষ্টিক অর্থনীতিতে সমস্যা দেখা দেয় এবং মূল্যস্ম্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে; যাতে এই অভিঘাত থেকে উত্তরণ সম্ভব হয়। তবে ২০২২ সালের অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ সম্ভাব্য উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে এবং করবে বলে আমি ধারণা করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংগতভাবেই যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সতর্কতার সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

সমকাল: গেল বছরের রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্য দিয়েই নতুন বছর শুরু হলো। আগামী দিনগুলোয় আমরা সংঘাত দেখব নাকি সমঝোতার পরিবেশ তৈরি হবে?

কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: নির্বচান আসছে। অতীতে আমরা দেখেছি নির্বাচন এলেই বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ে। শুধু তাই নয়, যেমন ২০১৩-২৪ সালে আমরা দেখেছি, তা সহিংসতায় রূপ নেয়। কাজেই এই বছর রাজনৈতিক উত্তাপ অব্যাহত থাকবে বলে আমার মনে হয় বরং আগামী দিনগুলোতে তা আরও বাড়বে। তবে আমি বলতে চাই, দেশের স্বার্থে এবং দেশের মানুষের স্বার্থে এই উত্তাপ যেন রাজনৈতিক মতপ্রকাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে এবং সহিংসতায় রূপ না নেয়। রাজনীতি তো মানুষের স্বার্থেই করতে হবে, যাঁরা রাজনীতি করেন, তাঁরাও সেটা বলেন। কিন্তু অনেকে বাস্তবে সেটা করেন না, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যাঁরা বিশ্বাসী নন। যেহেতু আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং মানবকেন্দ্রিক উন্নয়নে বিশ্বাসী তাই আমি আশা করতে চাই এবার যেন তার ব্যতিক্রম হয়। অর্থাৎ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক সহিংসতার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে। বিগত ১০-১২ বছরে দেশে যে ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে, তা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং আগামীর উন্নয়ন যেন ব্যাহত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে রাজনীতিবিদরা যেন তাঁদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন।

সমকাল: পরিবেশের দিক থেকে পুরোনো বছরের আলোকে নতুন বছরে আপনি কোনো সম্ভাবনা দেখছেন?

কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: পরিবেশের অবস্থা দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছে- কী জীববৈচিত্র্যের সংকোচন, কী পরিবেশের অবনমন, কী জলবায়ু পরিবর্তন সব ক্ষেত্রে। এটি বিশেষ করে জীববৈচিত্র্যে ধস এবং জলবায়ু পরিবর্তন বৈশ্বিক সমস্যা। কাজেই আসল সমাধান বৈশ্বিকভাবেই আসতে হবে। সাম্প্রতিক বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন বা জীববৈচিত্র্য সম্মেলনও উল্লেখযোগ্য আশার আলো দেখাতে পারেনি।

সমকাল: বৈশ্বিক যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক সংকটের প্রভাবে দেশের বাজারে অস্বস্তি আমরা দেখেছি। মূল্যস্ম্ফীতির দিক থেকে নতুন বছরে কোনো সুখবর রয়েছে কি?

কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: মূল্যস্টম্ফীতি সারাবিশ্বেই বাড়ছে- কী উন্নত, কী উন্নয়নশীল সব দেশেই। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। এর দুটো কারণ- একটা অভ্যন্তরীণ, একটা আন্তর্জাতিক। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মূল্যস্ম্ফীতির প্রভাব উল্লেখযোগ্য। কেননা, আমরা জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেলসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানি করে থাকি এবং এসব পণ্যের উৎপাদন, সরবরাহ ও আন্তর্জাতিক পরিবহন ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ব্যাহত হচ্ছে এবং অধিকতর খরচসাপেক্ষ হচ্ছে। বাংলাদেশে মূল্যস্ম্ফীতির এটি একটি বড় কারণ। অন্যদিকে বাংলাদেশে কিছু ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা অধিক মুনাফা লাভের জন্য অকারণে দাম বাড়িয়ে দেন। যদিও বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে মূল্যস্ম্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ২০২৩ সালে এদিকে বিশেষ নজর দেওয়া হবে। আমার মনে হয় সারা বছর ধরেই এ বিষয়টি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকবে এবং সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টির কারণগুলো বিচার-বিশ্নেষণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রাখতে হবে।

সমকাল: পদ্মা সেতু-মেট্রোরেল চালু হওয়াটা বড় মাইলফলক। কিন্তু ডলারের সংকট আমরা দেখছি এবং নতুন বছরে বিদেশি ঋণের কিস্তি শোধ ও এলসি নিষ্পত্তিতে এ সংকট আরও বড় হয়ে দেখা দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। আপনার মতামত কী?

কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: পদ্মা সেতুর উদ্বোধন, কর্ণফুলী টানেলের উদ্বোধন ও মেট্রোরেল চালু অবশ্যই বাংলাদেশের অগ্রগতির ক্ষেত্রে বড় মাইলফলক। এগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে আরও উচ্চতায় অধিষ্ঠিত হলো এবং একইসঙ্গে উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরও সুযোগ সৃষ্টি করল। কেননা চলাচল ও পরিবহনের উন্নয়ন আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। ২০২২ সালে আমাদের আমদানি অনেক বেড়ে যায়, অবশ্য রপ্তানিও বাড়ে। কিন্তু আমদানি-রপ্তানি গ্যাপ অনেক বেড়ে যায়। তবে ইতোমধ্যে রপ্তানি বাড়ানো এবং আমদানি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বাস্তবতার আলোকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে এ ক্ষেত্রে উন্নতি হবে। এ ছাড়া রেমিট্যান্স ২০২২ সালে নিম্নমুখী হলেও বিভিন্ন সরকারি পদক্ষেপের ফলে আবার বাড়তে শুরু করেছে। তবে কার্ব মার্কেটে যে পরিমাণ টাকা পাওয়া যায় মার্কিন ডলারের বিপরীতে তা থেকে রেমিট্যান্স প্রেরকরা বেশ কয়েক টাকা কম পান। এই গ্যাপ যদি না থাকে বা খুব সামান্য থাকে তাহলে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানো রেমিট্যান্স অনেক বাড়বে বলে আমি মনে করি। রপ্তানিকারকদের দ্বারা এবং সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে রপ্তানিও বাড়তে শুরু করেছে। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সুতরাং বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল স্বস্তির জায়গায় অব্যাহতভাবে থাকবে এবং ডলার সংকট থেকে আগামী মাসগুলোতে উত্তরণ ঘটবে বলে আমি মনে করি।

একটি বিষয় পরিস্কার করা দরকার। সরকারি বৈদেশিক ঋণ (মূলত দীর্ঘমেয়াদি, অতি সামান্য স্বল্পমেয়াদি) ২০২২ সালে জাতীয় উৎপাদের (জিডিপি) মাত্র ১৫ শতাংশ ছিল। বিগত কয়েক বছর ধরে তা ১২ থেকে ১৪ শতাংশ ছিল। আর বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ মার্কিন ডলারে বছরে এখন কেবল দুই বিলিয়নের একটু ওপরে; ফলে এখানেও কোনো সমস্যা নেই। যদি বৈশ্বিক ঋণের স্থিতি জাতীয় উৎপাদনের ৫০ শতাংশের বেশি হয়ে যায়, তখন এটি একটি চিন্তার বিষয় হতে পারে।

সমকাল: ব্যাংক খাতে অস্থিরতা, খেলাপি ঋণ ও অর্থ পাচারের সংকট কি সহসা কাটার সম্ভাবনা দেখছেন?

কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: ব্যাংক খাতের সমস্যা দীর্ঘদিন থেকে বিদ্যমান। এটি বহুল আলোচিত। কিন্তু কোনোভাবেই যেন ব্যাংকিং ব্যবস্থা, খেলাপি ঋণ এবং অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই কার্যকর তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে। বিশেষ করে দায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি। অন্যথায় এ সংকটগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে, সম্ভব নাও হতে পারে।

সমকাল: রাজনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়ে অর্থনীতিতে। কিন্তু আগামী বছর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। অর্থনীতির সুরক্ষার স্বার্থেও কি রাজনীতিবিদদের মধ্যে আলোচনার পরিবেশ তৈরি হওয়া জরুরি নয়?

কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: আগেই এ বিষয়ে কিছু বলেছি। রাজনীতিবিদদের জনকল্যাণে কাজ করার কথা। জনকল্যাণ মানে হচ্ছে, সব মানুষের যে বহুমাত্রিক চাহিদা রয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে পূরণ হতে হবে এবং বিশেষ করে সাধারণ মানুষের জীবনমানে উন্নতি ঘটতে হবে। পিছিয়ে পড়া, পিছিয়ে থাকা এবং পিছিয়ে রাখা সবার উন্নয়নে ন্যায়সংগত অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক সময় দেখা যায়, কিছু কিছু দল যেন ক্ষমতায় যাওয়া এবং থাকার জন্যই রাজনীতি করে। এই দেশটি মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন করা হয়েছে এবং সংবিধান অনুযায়ী এ দেশের প্রত্যেক নাগরিক দেশটির সম-অধিকারসম্পন্ন মালিক। যাঁরা সেটি ধারণ করবেন এবং সেই আঙ্গিকে কাজ করবেন, তাঁরাই জনকল্যাণধর্মী রাজনীতির ধারক ও বাহক হবেন। কাজেই আমি মনে করি, শুধু কথায় নয়, বাস্তবেও সব রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড জনস্বার্থে পরিচালনা করা উচিত। সুতরাং আলোচনার মাধ্যমেই একটি রাজনৈতিক সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে সব রাজনৈতিক দলের সচেষ্ট হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

সমকাল: প্রতি বছরই আমরা কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখছি। প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় কোন কোন জায়গায় কাজ করা দরকার বলে মনে করেন?

কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: বাংলাদেশে প্রকৃতি বিষয়ে সরকারি ও নাগরিক পর্যায়ে উঁচুমাত্রার সচেতনতা রয়েছে। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে মূলত খারাপ থেকে খারাপ হতে থাকা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। এর জন্য বাংলাদেশ মোটেই দায়ী নয়। কারণ আমরা অতি সামান্য গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করে থাকি। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণই পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ। এর জন্য মূলত দায়ী উন্নত বিশ্ব ও কিছুসংখ্যক দ্রুত উন্নয়নশীল বড় দেশ। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেনদরবারের মাধ্যমে সব দেশ মিলে কার্যকর ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি। ২০২২ সালে আনুষ্ঠিত ২৭তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ) কোনো কার্যকর পথপরিক্রমা নির্ধারণ করতে পারেনি। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই সম্মেলনে বলেছেন, আমরা জলবায়ু নরকের দিকে ধাবিত মহাসড়ক দিয়ে চলছি। তিনি আরও বলেছেন, বিশ্ববাসীর সামনে দুটি পথ আছে। একটি হচ্ছে সব দেশ মিলে কার্যকর সহযোগিতার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনকে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা, আর অন্যটি ধ্বংসের পথে অগ্রসর হওয়া। বিশ্বনেতারা, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রধানত দায়ী দেশগুলোর নেতাদের টনক এখনও নড়েনি বলে দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সচেতনভাবে নিজস্ব পরিকল্পনায়, নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের আর্থিক সামর্থ্য স্বল্পই। বাংলাদেশ ইদানীংকালে বছরে জাতীয় উৎপাদনের দেড় শতাংশের মতো, অর্থাৎ প্রায় ৫ থেকে ৬ বিলিয়ন বা ততধিক মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ এই খাতে ব্যয় করছে। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই অঙ্ক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কিন্তু ঘনীভূত হতে থাকা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এটি খুবই অপ্রতুল। আমাদের প্রয়োজন আরও অনেক বিলিয়ন অর্থ প্রতি বছর। যথাযথ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা না পাওয়া গেলে অবস্থা যে খারাপের দিকে যাবে, তা সহজেই অনুমেয়।

সমকাল: সাধারণের জীবনযাপনে স্বস্তি আনতে রাজনীতি, অর্থনীতি ও পরিবেশের অগ্রাধিকার কী হওয়া উচিত?

কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: বঙ্গবন্ধু দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর কথা বলেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছেন, এ দেশে কল্যাণ রাষ্ট্র তৈরি করা হবে। অর্থাৎ দেশটির অর্থনীতি ও রাজনীতি মানুষকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হবে। অবশ্যই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত বৈষম্যহীন সমাজ, প্রত্যেকের সকল মানবাধিকার এবং মানব মর্যাদায় বসবাস নিশ্চিতকরণই দেশের অগ্রগতির মূল লক্ষ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। এই প্রক্রিয়া বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা এবং শেখ হাসিনার কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তোলার পথ-পরিক্রমা নির্দেশক।

বাংলাদেশ এখন বিশেষ করে বিগত একযুগে যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে, তা দেশ-বিদেশে প্রশংসিত। পাশাপাশি ২০১৮ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে অনেক চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই চ্যালঞ্জগুলো মোকাবিলা করে মানুষকে কেন্দ্র করে অগ্রগতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার পথ প্রশস্ত করবে।

সমকাল: নতুন বছরে সরকারেরও শেষ বছর। সংকটের মধ্যেও সরকারের কোন কাজগুলো শেষ করা দরকার?

কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ:যে কাজগুলোর দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে, সেগুলোর মধ্যে নিল্ফেম্নাক্তগুলো রয়েছে যেগুলোর দিকে সরকারও নজর দিচ্ছে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা এবং বজায় রাখা। যার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ধারাবাহিকতা। দ্বিতীয়ত, সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যার জন্য সম্ভাব্য সর্বোচ্চ খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করা, মানুষের আয় বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ম্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ইঞ্চি জমি খালি না রাখার যে অনুশাসন দিয়েছেন, তা অনুসরণ করা জরুরি। আরও একটি অবশ্য করণীয় হচ্ছে, ব্যাংক খাতের সংস্কার। এ ছাড়া বহুল আলোচিত বিষয় রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে তৎপরতা কার্যকরভাবে বাড়াতে হবে; যাতে সরকারের আর্থিক সামর্থ্য বাড়ে এবং ঋণ (বৈদেশিক বা অভ্যন্তরীণ) নির্ভরতা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

সমকাল: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।

সমকালে প্রকাশ: ১ জানুয়ারি ২০২৩

ট্যাগঃ , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।