খবর হিসেবে সাংবাদিকতার এক বড় অংশ জুড়ে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন। জলবায়ু পরিবর্তন যেহেতু গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের কারণে হয় সেহেতু পরিবেশ সাংবাদিকতায় এটি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণে ভূমিকা না রাখলেও আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি শিকার। উন্নত বিশ্ব এবং শিল্পোন্নত দেশগুলোর গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণের কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বই হুমকিতে। বাংলাদেশ তার ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়েই জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে নজর দিয়েছে।
গ্রীনহাউস গ্যাস:
১৮ আক্টোবর (২০২২) বিশ্বের অন্যতম ধনী বিল গেটস তার ব্লগ গেটসনোটসে লিখেছেন, দ্য স্টেট অব দ্য এনার্জি ট্রানজিশন বা জ্বালানি রূপান্তর পরিস্থিতি। সেখানে ঘুরেফিরে তিনি জলবায়ুপরিবর্তনের কথা বলেছেন। বলেছেন গ্রীনহাউস গ্যাসের কথা। বস্তুত পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারক গ্যাসই গ্রীনহাউস গ্যাস। যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ওজোন, জলীয়বাষ্প ইত্যাদি। বায়ুম-লে নিঃসরিত গ্রিন হাউস গ্যাসের ৮০ শতাংশ কার্বন ডাই-অক্সাইড, ১০ শতাংশ মিথেন, ৭ শতাংশ নাইট্রাস অক্সাইড ও বাকি ৩ শতাংশ অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস। এদের মধ্যে ডাই-অক্সাইডের স্থায়িত্বকাল বায়ুম-লে প্রায় একশ বছর। মিথেন গ্যাসের স্থায়িত্বকাল প্রায় ১২ বছর। নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাসের স্থায়ীত্বকালও একশ বছরের উপরে। এরা যখন দীর্ঘমেয়াদে বায়ুমণ্ডলে থাকতে থাকতেই নতুন গ্যাস জমা হয়। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি এভাবেই বৃদ্ধি হতে থাকে। বিলগেটস যুক্তরাষ্ট্রের থিংকট্যাঙ্ক রোডিয়াম গ্রুপের সৌজন্যে দেখিয়েছেন, কার্বন নিঃসরণে আবাসন খাতের ভূমিকা ৭ শতাংশ, পরিবহন ১৬ শতাংশ, কৃষি ২১ শতাংশ, বিদ্যুৎ খাতে ২৬ শতাংশ এবং উৎপাদন খাতে ৩০ শতাংশ।
গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী কারা:
২০২১ সালের ২ নভেম্বর বিবিসি বাংলায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। শিরোনাম ছিলো- কপ২৬: সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলো কি কথা রেখেছে? এবছর (২০২২) কপ২৭ তথা জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় নভেম্বরের ৬ থেকে ১৮ নভেম্ববর। তো বিবিসি বাংলা লিখেছে, পৃথিবীর বাতাসে যত কার্বন ডাই অক্সাইড মিশছে, তার অধিকাংশই আসছে মাত্র চারটি দেশ থেকে- চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও রাশিয়া। সাথে আছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। প্রতিবেদনটির সঙ্গে বিবিসির গ্রাফেও আমরা দেখতে পাচ্ছি চীন প্রতিবছর ১১৫৩৫ মেগাটন কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন করে। তালিকায় ৫১০৭ মেগাটন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও মাথাপিছু আয়ে দেশটি শীর্ষে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা প্রত্যেকে গড়ে ১৫.৫ টন কার্বন নিঃসরণ করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর চতুর্থ অবস্থানে আছে আমাদের প্রতিবেশী ভারত। ভারতের ক্রমবর্ধমান কার্বন নিঃসরণের হার গত দুই দশকে স্পষ্ট। যদিও কার্বন নির্গমনের দিক থেকে শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে ভারতেরই মাথাপিছু নির্গমনের হার কম।
তাছাড়া উন্নত বিশ্ব এবং শিল্পসমৃদ্ধ দেশগুলো বেশি কার্বণ নিঃসরণ করছে। পৃথিবীতে গ্রীনহাউস নিঃসরণের ফলে বায়ুমণ্ডলে পুঞ্জীভূত গ্রিন হাউজ গ্যাস বর্তমানে ২ মিলিয়ন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে জাতিসংঘ আন্তঃরাষ্ট্রীয় জলবায়ু পরিবর্তন প্যানেলের (আইপিসিসি) সাম্প্রতিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন বলছে। ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে গ্রীনহাউস গ্যাস নিসরণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। ২০৩০-২০৪০ সালের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ নিঃসরণ কমাতে না পারলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
গ্রীনহাউস গ্যাস, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাংলাদেশে এর প্রভাব:
গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণে ভূমিকা অতি নগন্য হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের অভিঘাত যে কয়টি দেশ সবচেয়ে বেশি মোকাবেলা করছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব এমনভাবে আমাদের জীবনে ঘিরে আছে এবং এমন ক্ষেত্রে এটি ভূমিকা রাখছে, যেটি সাধারণভাবে অবোধগম্য। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক, এ বছর অক্টোবরে ডেঙ্গু জ¦রে যে ভযঙ্কর রুপ আমরা দেখেছি, স্বাভাবিকভাবে এমনটি হওয়ার কথা নয়। কারণ বর্ষা মৌসুমের সঙ্গে ডেঙ্গুর সম্পর্ক থাকার কারণ, জমে থাকা পানিতেই প্রধানত এডিস মশার প্রজনন বেশি হয়। প্রতিবছর সেপ্টেম্বরেই বর্ষা সাধারণত শেষ হয়ে যায়, সেইসঙ্গে ডেঙ্গুও চলে যায়। এবার কিছুটা দেরিতে বর্ষা আসায় ডেংগুর সময়ও প্রলম্বিত হয়েছে। অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখানেও স্পষ্ট। সমকালের প্রতিবেদন অনুসারে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অক্টোবরের প্রথম ১৬ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯ হাজারের বেশি এবং মারা গেছেন ৩৯ জন; এবার ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যায় ডেংগু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ২০২২ সালে অক্টোবরে।
সাম্প্রতিক বছর গুলির প্রাকৃতিক দূর্যোগ- বন্যা, খরা কিংবা যে ঘূর্ণিঝড় দেখছি, সেখানেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব স্পষ্ট। ২৪ অক্টোবর বাংলাদেশ দেখে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর তা-ব। ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে ফণী, আম্পান, ইয়াস এবং সর্বশেষ সিত্রাং। প্রায় প্রতিটি ঝড়েই যেমন প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে তেমনি ক্ষতি হয়েছে ফসলেরও। সিত্রাং কেড়ে নেয় ৩৮ প্রাণ। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, উপড়ে যায় গাছপালা-বিদ্যুতের খুঁটি, ভেসে যায় ঘেরের মাছ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তাৎক্ষণিক তথ্য বলছে, ৫৮ হাজার ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডরের কথা আমাদের মনে আছে। বর্ষার সময় বৃষ্টি না হওয়া, শীতকালে শীত না হওয়া, সমুদ্রে ঘনঘন বিশাল বিশাল সংকেত এ সবই জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, গ্রীনহাউস গ্যাস নিসরণ অব্যাহত থাকলে বৈশি^ক উষ্ণতা বৃদ্ধি পেতে থাকেবে এবং এর ফলে সমুদ্র স্ফীতির মুখোমুখি হতে পারে। তাতে স্থায়ীভাবে প্লাবিত যাওয়া ও লবনাক্ততা বৃদ্ধির কারণে দেশের ব্যাপক উপকূলীয় এলাকা ও অন্যান্য নিম্নাঞ্চলে বসবাস এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য উপযুক্ততা হারাবে। এসব এলাকার মানুষ যে শুধু আর্থ-সামাজিক বিপর্যয়ের কবলে পড়বেন তাই নয় বরং তাদের মধ্যে অসংখ্যজন উদ্বাস্তুর কাতারে যোগদান করতে বাধ্য হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন প্রশ্নে ন্যায্যতা ও ক্ষতিপূরণ:
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উন্নত বিশ্ব ও শিল্পসমৃদ্ধ দেশগুলো দায়ী হলেও এর ভুক্তভোগী বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল কিছু দেশ। সে কারণেই এখানে ন্যায্যতার প্রশ্ন আসছে। অপরাধ না করেও উন্নয়নশীল বিশ্ব যে ক্ষতির শিকার হয়েছে এবং হচ্ছে তার মোকাবিলায় উন্নত বিশ্বের দুটি প্রধান দায়িত্ব। প্রথমটি গ্রীন হাউজ গ্যাস নির্গমণ বন্ধ করা; দ্বিতীয়ত, আমাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া। জলবায়ু পরিবর্তনে যাদের তেমন ভূমিকা নেই সেসব ক্ষতিগ্রস্থ দেশের জনগণের প্রতি ন্যায়বিচারের স্বার্থেই তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত। কিন্তু এ ব্যাপারে উন্নত বিশ্বের আচরণ খুবই দুঃখজনক। যদিও চীন, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা কার্বন নিসরণে যারা দায়ী তারা নিঃসরণ কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারপরও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। আন্তর্জাতিক এনার্জি এজেন্সির মতে, চীনকে তার জলবায়ু সংক্রান্ত লক্ষ্য অর্জন করতে হলে, দেশটিকে ২০৬০ সালের মধ্যে কয়লার চাহিদা ৮০ শতাংশেরও বেশি কাটছাঁট করতে হবে। অথচ চীনে এখনও কয়লাভিত্তিক নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রও কার্বন নিঃসরণ কমানোর কথা বলেছে। তারা ২০৩০ সালের মধ্যে নতুন গাডির অর্ধেক বৈদ্যুতিক গাডি করার ঘোষণা দেওয়াসহ আরও পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ও কর্মসূচি যথেষ্ট নয় বলে দাবি করছে ক্লাইমেট এ্যাকশন ট্র্যাকার। তাদের বক্তব্য, প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অনুযায়ী বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রিতে সীমিত রাখতে হলে আরো উন্নতি ঘটাতে হবে।
অন্য দেশগুলোর অবস্থাও সে মাত্রায় প্রত্যাশিত নয়। তাছাড়া তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার যে দায়িত্ব সেখানেও উদাসীনতা স্পষ্ট। তবে একটা স্বস্তির বিষয় হলো, উন্নত বিশ্ব তাদের দায় স্বীকার করেছে। সেজন্য তারা ক্ষতিপূরণেরও অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু উন্নত বিশ্ব যে পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলছে সেটা তারা দিচ্ছে না। ক্লাইমেট পলিসি ইনিশিয়েটিভ বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিসরণ কমানোর নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে প্রতি বছর ৪.১৩ ট্রিলয়ন মার্কিন ডলার অর্থ প্রয়োজন, সেখানেও কার্পণ্যতা স্পষ্ট। সবুজ জলবায়ু ফান্ড, অভিযোজন ফান্ড ইত্যাদি ফান্ডে অর্থায়নের কথা থাকলেও অর্থ পাওয়া যাচ্ছে না।
জলবায়ু তহবিল এবং বাংলাদেশের অভিযোজন:
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় বাংলাদেশ যেমন আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল থেকে অর্থ সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা করেছে, একইসঙ্গে নিজেদের উদ্যেগেও ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পরিবেশ বন ও জলবায়ু মন্ত্রনালয় এবং বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের মাধ্যমে সরকারি উদ্যোগে প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। একটি পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ রাজস্ব বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মকা-ে সরকার প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে। সরকার জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে। উন্নত বিশ্ব থেকেও কিছু সহযোগিতা পাওয়া গেছে। অর্থনীতিবিদ ও পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ ৩০ অক্টোবর ২০২১ সালে সমকালে প্রকাশিত ‘কপ-২৬ ও সবুজ জলবায়ু তহবিল’ শিরোনামের লেখায় দেখিয়েছেন, বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত সবুজ জলবায়ু থেকে কমবেশি ১০০ মিলিয়ন ডলার অর্থ পেয়েছে।
সরকারের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট জলবায়ু পরিবর্তজনিত কারণে মানুষ, জীববৈচিত্র ও প্রকৃতির উপর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় অভিযোজন ও প্রশমনের কাজ যেমন করছে তেমনি কার্বন নি:সরণের মান কমানোর লক্ষ্যে পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিকরণের ভূমিকা রাখছে। এ ট্রাস্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সম্ভাব্য পরিবেশ বিপর্যয় সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও বিপর্যয় মোকাবেলার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক, সামাজিক বা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট যে কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ পরবর্তী জরুরী কার্যক্রমেও সহায়তা করে আসছে। ছবিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি, জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে সাইক্লোন সেন্টার কাম স্কুল নির্মাণ করা হয়েছে, ভাসমান বেডে সবজি চাষের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং নদীর তীরে প্রতিরক্ষা বাঁধসহ আরও নানা অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।
(ছবি-৪ বিসিসিটি; ক্যাপশন- জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের কর্মকা-ের একটি চিত্র)
জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সাংবাদিকতা:
পরিবেশ সাংবাদিকতার অংশ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজের অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। মনে রাখতে হবে, গ্রীনহাউস গ্যাস নিসরণের ফলে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। একে কেবল পরিবেশের গণ্ডিতে আবদ্ধ না রেখে পারিপার্শ্বিক ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ও দেখতে হবে। যেমন, নারী ও শিশুদের ওপর এর প্রভাব কীভাবে পড়ছে। শিক্ষায় কী সংকট তৈরি করছে ইত্যাদি। গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নাালিজম নেটওয়ার্ক বা জিআইজেএন ‘জলবায়ু সংকট: অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য আইডিয়া’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে আর্থ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক জেমস ফানের জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পরামর্শ এসেছে। জেমস ফানের পরামর্শ হলো- গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রধান উৎস হিসেবে কয়লা, তেল ও খনিজ গ্যাস উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে ভালো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হতে পারে; সরকারের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গোষ্ঠীস্বার্থ কোনোভাবে প্রভাবিত করছে কিনা; জলবায়ু নিয়ে অ্যাকটিভিস্ট গ্রুপগুলোর কাজ নিয়ে অনুসন্ধান হতে পারে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ ও অভিযোজনের ক্ষেত্রে সমাধানের উদ্যোগগুলোকে অনুসন্ধানের আওতায় আনা; জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ বা অভিযোজনের জন্য কী কী করা দরকার, তা-ও অনুসন্ধান করা। জলবায়ু তহবিল থেকে অন্যরা কীভাবে অর্থ পাচ্ছে, বাংলাদেশ কীভাবে অর্থ পেতে পারে এবং এ তহবিলের অর্থ যথাযথভাবে খরচ হচ্ছে কি-না তাও সাংবাদিকের অনুসন্ধানে উঠে আসতে পারে।
গ্রীনহাউস গ্যাস নিসরণের ফলে সৃষ্ট জলবায়ু সংকট আরও গভীর হওয়ারই ইঙ্গিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেজন্য ভুক্তভোগী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এর অভিযোজনের বিকল্প। কিন্তু ন্যায্যতার জন্য উন্নত বিশ্বকে চাপে ফেলা জরুরি এবং ক্ষতিপূরণ আদায়ও জরুরি। এ ক্ষেত্রে যথাযথ তথ্য ও উপাত্ত নিয়ে সাংবাদিকরা সহযোগিতা করতে পারে।
তথ্যসূত্র:
• Brummer, Hugh (2019); Climate Change, Sea-level Rise and Development in Bangladesh; Dhaka; University Press Limited.
• https://www.gatesnotes.com/Energy/2022-State-of-the-Energy-Transition
• https://www.bbc.com/bengali/news-59125836
• http://www.bcct.gov.bd/site/page/e6fb75e8-f5e5-4bed-8adc-e6183e69353a/-
• https://gijn.org/%E0%A6%9C%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A7%81-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A6%9F-%E0%A6%93-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%A4%E0%A6%BE/
• https://samakal.com/t-20/article/211082753/%E0%A6%95%E0%A6%AA%E0%A7%A8%E0%A7%AC-%E0%A6%93-%E0%A6%B8%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%9C-%E0%A6%9C%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A7%81-%E0%A6%A4%E0%A6%B9%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B2
• https://mahfuzmanik.com/2010/02/climate-change-2/
• https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_countries_by_greenhouse_gas_emissions
• https://meansandmatters.bankofthewest.com/article/sustainable-living/taking-action/who-funds-the-fight-against-climate-change/
পিআইবির (Press Institute Bangladesh - PIB) সাংবাদিকতা সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম সাময়িকী নিরীক্ষার ২৪৩তম (অেক্টােবর-ডিসেম্বর ২০২২) সংখ্যায় প্রকাশিত