Mahfuzur Rahman Manik
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি স্পষ্ট হওয়া উচিত
নভেম্বর 29, 2017

মূল: লুক হান্ট

মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তির পরও আসছে রােহিঙ্গা। ২৬ নভেম্বর ২০১৭। রয়টার্স

বাংলাদেশ ও মিয়ানমার বলছে, গত সপ্তাহে তারা রোহিঙ্গা শরণাথীদের প্রত্যাবাসনে একটি সমঝোতা চুক্তি করেছে। যদিও চুক্তিতে কিছু সীমাবদ্ধ রয়েছে, সংকট পুরোপুরি কাটাতে এটি খুব একটা সহায়ক হবে বলে মনে হয় না। পোপ যখন ভ্যাটিকান থেকে উভয় দেশেই সফরে, ঠিক তার প্রাক্কালে তাড়াহুড়ো করে এ রকম চুক্তি অগোছালো কূটনীতিরই পরিচায়ক।

চুক্তিটি বলা চলে পরীক্ষামূলক, যেখানে অনেক অস্পষ্টতা রয়েছে। তবে আশা করা হচ্ছে, দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে। চুক্তিটি এমন সময়ে হলো, তার আগের দিন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণকে সমর্থন করে বলেছেন, রোহিঙ্গাবিষয়ক তথ্যাদি সতর্ক হয়ে পর্যালোচনা করলে বলা যায়, রোহিঙ্গা মুসলিমদের টার্গেট করে চালানো সহিংসতা জাতিগত নিধন বৈ কিছু নয়।

আগস্ট মাসের শেষ দিকে মিয়ানমারের পুলিশ পোস্টে হামলা ও তার জের ধরে সামরিক বাহিনীর অভিযানে রোহিঙ্গা মুসলিমরা রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে। রোহিঙ্গার ঢল এখনও থামেনি। এমনকি সংবাদমাধ্যম বলছে, প্রত্যাবাসন চুক্তির পরও আসছে রোহিঙ্গারা। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ছয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। নেপিদো রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গা বলে স্বীকৃতি দেয়নি, বরং তাদেরকে বাঙালি হিসেবে দেখছে; যদিও তারা এর আগে মিয়ানমারেই বসবাস করে আসছিল।

১৯৯২-৯৩ সালের চুক্তিকে ভিত্তি করে এবারও সমঝোতা স্বাক্ষরিত হলো, যেখানে মিয়ানমার কেবল তাদেরই গ্রহণ করবে, আগে যারা সরকার কর্তৃক প্রদানকৃত নিজেদের পরিচয়পত্র দেখাতে পারবে। এর মধ্যে থাকবে জাতীয় পরিচয়পত্র ও 'সাদা কার্ড' কিংবা 'সাদা কার্ড' জমা দেওয়ার রসিদ। কিন্তু এ পদ্ধতি কতটা সফলভাবে কাজ করবে, এ নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি ও প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা ভালো করেই জানেন, অনেক রোহিঙ্গাই এসব শর্ত পূরণ করতে পারবে না। কারণ তাদের অনেকের কাছে পরিচয়পত্র কিংবা কোনো ধরনের প্রমাণপত্র নেই, আবার অনেকে হয়তো মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার সময় হারিয়ে ফেলেছে। হয়তো অল্প কিছুসংখ্যকের কাছে থাকতে পারে। পরিচয়পত্র ছাড়াও প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের তাদের নাম, পরিবারের সদস্যদের নাম, মিয়ানমারে কোথায় বাস করত সেখানকার ঠিকানা, জন্ম তারিখ ও ফিরে যাওয়ার স্টেটমেন্ট দিতে হবে।

সামরিক বাহিনীর দিকটিও দেখতে হবে। রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরে গেলে সহায়তার পরিবর্তে সামরিক বাহিনী পদে পদে বাধা দিতে পারে। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যে মাত্রায় সহিংসতা ও বর্বরতার অভিযোগ রয়েছে, সেখানে এ ধারণা অমূলক নয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সামরিক বাহিনীর অভিযানে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের কথা বলেছে, যেখানে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতকরণসহ নানা অপরাধের কথা বলেছে। যদিও সামরিক বাহিনী অভিযোগ অস্বীকার করছে। অং সান সু চি রোহিঙ্গা নিপীড়নের ঘটনায় বিশ্বব্যাপী সমালোচিত। তারপরও তিনি বলছেন, 'অনেক ভুল তথ্য পরিবেশন হচ্ছে।' তাদের প্রত্যাবাসন হবে 'নিরাপদ ও স্বেচ্ছাসেবী'।

যা হোক এ চুক্তি অনেকেই স্বাগত জানিয়েছে, বিশেষ করে ঢাকার আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও প্রত্যাবাসনের তাগিদের ক্ষেত্রে ভ্যাটিকানের পোপ ফ্রান্সিসের ভূমিকাও উল্লেখ করেছেন। যদিও পোপকে মিয়ানমারের তরফ থেকে রোহিঙ্গা শব্দটি উল্লেখ না করার কথা বলা হয়েছে। পোপ অবশ্য এ বছরের শুরুর দিকে মিয়ানমারের কড়া সমালোচনা করে বলেন, রোহিঙ্গারা বছরের পর বছর ধরে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তারা নির্যাতন, হত্যার শিকার হচ্ছেন এ কারণেই যে, তারা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতি নিয়ে সেখানে বাস করতে চেয়েছেন।

ঢাকার আর্চবিশপ কিন্তু আশাবাদী। তিনি একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, 'আমি আশাবাদী যে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে।' ডি রোজারিও আরও বলেন, 'বিশ্বের সবাই এটাই চায়, পোপ ফ্রান্সিসের সফরের ব্যাপারে সবার মানসিকতা তৈরি করবে।'

তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ অনেকেই এ চুক্তিতে সন্তুষ্ট নয় বলে মনে হয়। সংস্থাটির শরণার্থী বিষয়ক পরিচালক বলছেন, 'এ চুক্তির বিস্তারিত এখনও প্রকাশ হয়নি। এ ব্যাপারে কথাবার্তাও পরিপকস্ফ মনে হয়নি। আর এখনও প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে।

 

 

ট্যাগঃ , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।