Mahfuzur Rahman Manik
দুর্যোগে প্রাণিকুল
সেপ্টেম্বর 30, 2017

পশু-পাখি ও অন্য প্রাণিকুল পরিবেশেরই অংশ। মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় প্রাণিকুলের বিকল্প নেই। মানুষের উপকারে তারা জড়িয়ে থাকে। কিন্তু খোদ মানুষের জীবনই যখন বিপম্ন; বিশেষত প্রাকৃতিক দুর্যোগে যখন মানুষের বসতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়; যখন প্রাণিকুলের চিন্তার চেয়ে মানুষ নিজের জীবন বাঁচাতেই বেশি ব্যস্ত, তখন প্রাণীরা কী করে? আমেরিকার সাম্প্রতিক দুর্যোগ হার্ভে, ইরমা ও মারিয়ার প্রেক্ষিতে ২০ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের গার্ডিয়ানে এক পাঠকের প্রশ্ন ছাপা হয়। গার্ডিয়ানের লাইফ অ্যান্ড স্টাইল বিভাগের নোটস অ্যান্ড কোয়েরিসে প্রকাশিত জিজ্ঞাসা : হারিকেন হার্ভে, ইরমা ও এখনকার মারিয়ার পর প্রশ্ন জাগছে কীভাবে বন্যপ্রাণী ও পাখি এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে। তারা কি দুর্যোগের লক্ষণ দেখার সঙ্গে সঙ্গেই কোথাও আপদকালীন সময়ের জন্য চলে যায়, না অন্য কোনোভাবে বেঁচে থাকে? নাকি এদের অধিকাংশই মারা যায়? প্রশ্নটি আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ প্রতিনিয়ত নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাক্ষী আমরা। অনেক এলাকায় বন্যার ক্ষত এখনও শুকায়নি; এর আগে বাঁধ ভেঙে ডুবে যাওয়া হাওর আমরা দেখেছি। হাওরের দুর্যোগ বোধ হয় দেখিয়ে দিয়েছে প্রাণিকুলের কী অবস্থা হয়। এবার সবাই দেখেছে হাওরের পানিতে ভেসে যাওয়া মাছ, হাঁস, পাখি, সাপ, ব্যাঙসহ বিভিম্ন প্রজাতির প্রাণীর চিত্র। একই সঙ্গে বন্যায়ও বিপম্ন হয় পশু-পাখি ও প্রাণীর জীবন। যখন ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে যায়, রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়, বন-জঙ্গল, ফসলি মাঠ, গাছ-গাছালি পানিতে ভেসে যায়, তখন প্রাণিকুলও ঠিকানা হারা হয়। তাদের খাদ্যের অভাব দেখা দেয়। তখন অনেক প্রাণী নিরাপদ স্থান খোঁজে। অনেক সময় তারা আশ্রয় হারিয়ে বাঁধ বা কাছের লোকালয়ে চলে আসে। মানুষের সামনে এসে অনেক প্রাণীরই জীবন বিপম্ন হয়। বিশেষ করে সাপ, শিয়াল, বাগডাশ, বেজি ইত্যাদি যখন কেউ নাগালের মধ্যে পায়, তখন সবাই মিলে তাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়। এ সময় মানুষের হাতেও মারা পড়ে কোনো কোনো প্রাণী।
অবশ্য গরু-ছাগলের মতো গৃহপালিত প্রাণীর ব্যাপারে সবাই তৎপর থাকে। মানুষের সঙ্গে এগুলোও নিরাপদ আশ্রয়ে যায়। হাঁস-মুরগির ব্যাপারে মানুষের মনোযোগ থাকে। সুযোগমতো এসব প্রাণী স্থানান্তর কিংবা বিক্রি করে ফেলা হয়। অনেক সময় হয়তো নিজেরাই এগুলো রাম্না করে খেয়ে ফেলে। যারা পুকুর-ডোবায় মাছ চাষ করে, মাছ যাতে ভেসে না যায় সেজন্য জাল দিয়ে চারদিকে ঘেরাও করে রাখে। লোকালয়ে থাকা কুকুর-বিড়ালও দুর্যোগে সংকটে পড়ে। বিড়াল হয়তো মানুষের সঙ্গে কোনোভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই পায়, তবে কুকুরের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না।
অবশ্য সবই দুর্যোগের মাত্রানুযায়ী হয়ে থাকে। বন্যার সময় যখন পানি হঠাৎ মাথার ওপরে উঠে যায় কিংবা প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় যখন কোথাও আঘাত হানে, তখন মানুষের জীবনই হয়ে ওঠে ঝুঁকিপূর্ণ। কখনও মানুষ মারা পড়ে কিংবা খুব দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যায়। তখন হয়তো প্রাণিকুলও ভেসে যায়। গৃহপালিত পশু-পাখিও তখন অসহায়। দুর্যোগের মাত্রা যত কম হয়, প্রাণিকুল ততই রক্ষা পায়।
দুর্যোগ কেবল মানুষের জন্যই নয়, প্রাণিকুলের জন্যও বিপদ ডেকে আনে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে মানুষের পাশাপাশি অন্য প্রাণিকুল রক্ষার বিষয়টিও জোর দেওয়া প্রয়োজন। আর লোকালয়ের বাইরে থাকা প্রাণিকুলকে অসহায় পেয়ে সবাই তাদের মারতে নয়, রক্ষায় উদ্যোগী হই।

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।