ডিজিটাল স্কুল, ডিজিটাল ক্লাসরুম নিয়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে, সরকার যখন সব স্কুলকে ডিজিটাল স্কুল বানাতে চাইছে তখন সমকালের একটি খবর, স্কুলে তালাবদ্ধ ডিজিটাল ল্যাব। কেবল তালাবদ্ধ নয়, বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনটি বলছে_ শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার কয়েকটি বিদ্যালয়ে চার বছর আগে ডিজিটাল ল্যাব গড়ে তোলা হলেও আজও এর কার্যক্রম শুরু হয়নি। চার বছর ধরে ল্যাবের দরজা বন্ধ। প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি মাধ্যমিক স্কুলে অযত্ন-অবহেলায় ধূলিধূসরিত কম্পিউটার, প্রিন্টার, প্রজেক্টর তথা ল্যাব সামগ্রী। এ অবস্থা কেবল একটি বিদ্যালয়েই নয়। প্রতিবেদনটি বলছে, উপজেলার অধিকাংশ বিদ্যালয়ের একই অবস্থা। আমাদের আশঙ্কা অন্যান্য উপজেলায়ও এমন চিত্র দেখা যেতে পারে।
ডিজিটাল ল্যাব বন্ধের কারণ প্রতিবেদনটিতে উঠে না এলেও অনেক বিষয়ই যে এর পেছনে রয়েছে তা বলাই যায়। হয়তো বিদ্যালয়গুলোতে কম্পিউটার, প্রজেক্টর, প্রিন্টার চালানোর মতো দক্ষ কেউ নেই। কিংবা অতি সতর্কতার জন্য, ধরলে নষ্ট হয়ে যাবে_ এ ভয়ে ডিজিটাল ল্যাব খোলাই হয়নি! কিংবা ব্যবস্থাপনাগত কোনো সমস্যা রয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিক স্তরে যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয় রয়েছে ল্যাব ছাড়া তা এসব স্কুলে কীভাবে পড়ানো হয়েছে। এটি তো অন্য বিষয়ের মতো নয় যে, বই দেখে পড়ালেই হয়। এখানে তত্ত্বীয় বিষয়ের সঙ্গে ব্যবহারিকও রয়েছে, যেখানে কম্পিউটারে হাতে-কলমে শেখানো প্রয়োজন হয়। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি ডিজিটাল ল্যাবকে ছাড়িয়ে গোটা শিক্ষা কার্যক্রমকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাহলে অন্যান্য বিষয়ও কি শিক্ষকরা এভাবে পড়ান? যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারছে না। আসলে গ্রামের অনেক বিদ্যালয়ে সমস্যার অন্ত নেই। প্রয়োজনীয় শিক্ষক নেই, অবকাঠামো সমস্যা, শিক্ষা-উপকরণের অভাব ইত্যাদি। ডিজিটাল ল্যাবের কথা তো বলারই অপেক্ষা রাখে না। তাও যেসব বিদ্যালয়ে ডিজিটাল ল্যাব আছে সেখানকার এ চিত্র বেদনাদায়ক।
কেবল আইসিটি বিষয়ের জন্য নয়, এমনিতেই শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান প্রাথমিক থেকেই দেওয়া প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে সরকার প্রতিটি বিদ্যালয়ে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন ও ডিজিটাল ক্লাসরুম বানানোর চেষ্টা করছে। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিদ্যালয় তা বাস্তবায়নও করেছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও এ বছরের প্রথম দিকে ইন্টার-অ্যাকটিভ মাল্টিমিডিয়া ডিজিটাল কনটেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল শ্রেণিকক্ষ প্রতিষ্ঠায় সমাজের প্রতিষ্ঠিত ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, 'যারা বিত্তবান এবং সমাজে একটু প্রতিষ্ঠিত, তাদের কাছে আমার এই অনুরোধ থাকল- যার যার এলাকায়, যারা যেখানে পড়াশোনা করে এসেছেন, আপনারা একটা করে উপহার দেবেন।' ১৬ কোটি মানুষের দেশে ৬৩ হাজার ৬০১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম করা খুব কঠিন হবে বলে তিনি মনে করেন না।
আমরা দেখছি ডিজিটাল ল্যাব, ডিজিটাল ক্লাসরুম এমনকি ডিজিটাল বিদ্যালয় স্থাপনের নানাবিধ উদ্যোগ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান ও সমাজের বিত্তবান অনেকের সহায়তায় এসব স্থাপনও হয়েছে। কিন্তু এসব স্থাপনই যে শেষ কথা নয়, একই সঙ্গে এগুলোর ব্যবহারের দিকেও যে কর্তৃপক্ষের নজর রাখতে হবে তা আলোচ্য প্রতিবেদনই স্পষ্ট করেছে। স্কুলগুলোতে আইসিটি বিষয়ের আলাদা শিক্ষক ছাড়াও সব শিক্ষকের যাতে আইসিটির প্রাথমিক ধারণা থাকে সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। তাতে অন্তত ডিজিটাল ল্যাব এভাবে থাকবে না বলেই বিশ্বাস। কম্পিউটার বা প্রযুক্তির উপকরণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে যত্নবান হওয়া প্রয়োজন বটে তবে অতি সতর্কতার জন্য এভাবে বন্ধ রেখে তা নষ্ট করার মানে হয় না।