Mahfuzur Rahman Manik
শান্তির জন্য বন্ধুতা
জুলাই 30, 2016
Friendshipবন্ধুত্ব দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না; অনুভব করা যায়। কারও সঙ্গে পাঁচ বছর থেকেও বন্ধুত্ব না হতে পারে। কারও সঙ্গে কোথাও সহযাত্রী হিসেবে যেতে ক্ষণিকের দেখায়ও বন্ধুত্ব হয়ে যেতে পারে। এটা এক ধরনের টান। কাছে না থাকলেও দূর থেকে সে টান অনুভব করে বলেই হয়তো একজন আরেকজনের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ করে; ভাব আদান-প্রদান করে, যা উভয়কে এক ধরনের প্রশান্তি দেয়। কাছে থাকলে বন্ধু বন্ধুকে সঙ্গ দেয়। সুখ-দুঃখ শেয়ার করে হালকা হয়। প্রয়োজনে একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়ায়। জাতিসংঘের আজকের আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবসও সে কথা বলছে। দিবসটি চালু হওয়ার গোড়ার কথাই হলো শান্তির সংস্কৃতি প্রচলন। বন্ধুত্ব তো সব রকম অশান্তি, দ্বন্দ্ব-সংঘাত মিটিয়ে পরস্পর শান্তি স্থাপন। জাতিসংঘ মহাসচিব এ দিবস উপলক্ষে যথার্থই বলেছেন_ আজ লোভ যখন আমাদের বসবাসের পরিবেশকে কলুষিত করছে, ধর্মান্ধতা যখন আমাদের রক্ত ঝরাচ্ছে, যখন নানাভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে তখন বিশ্বের সবাইকে নিজেদের বাঁচাতেই বন্ধুত্বের সহমর্মিতায় এগিয়ে আসতে হবে।
বন্ধুত্বের মধ্যে ভালোবাসা, ত্যাগ, আপস ও মানিয়ে চলা থাকে। এসবের মধ্য দিয়ে যখন দু'জন সমানে চলে তখন দিন দিন বন্ধুত্বও গাঢ় হয়। মনীষীরা বলেন, প্রত্যেক নতুন জিনিসকেই উৎকৃষ্ট মনে হয়। আর বন্ধুত্ব যতই পুরাতন হয় ততই উৎকৃষ্ট ও গাঢ় হয়।
বন্ধুত্বের সঙ্গে কল্যাণ বিষয়টি বেশি প্রয়োজন। এক দেয়াল লিখন বলছে, যে তোমাকে মাদক অফার করে সে প্রকৃত বন্ধু হতে পারে না। এখানেই বোধ হয় সে প্রবাদটি প্রযোজ্য_ মানুষ চেনা যায় তার সঙ্গী-সাথী দেখে।ফলে বন্ধুত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রেও সতর্কতা প্রয়োজন। যাকে তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করায় বিপদ আছে। সৎসঙ্গে স্বর্গবাস অসৎসঙ্গে সর্বনাশ। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে স্বার্থের ঊধর্ে্ব ওঠার কথাও হয়তো অনেকে বলেন। বন্ধুতা নিঃস্বার্থে হলেও এখানে বন্ধুত্ব করার ক্ষেত্রে অন্তত এটা দেখা দরকার_ কার সঙ্গে বন্ধুতা হচ্ছে। ভালোমানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে গেলে তখন যতই বিপদ হোক, বন্ধুর জন্য এগিয়ে আসাই কাঙ্ক্ষিত। বিপদের বন্ধুই তো প্রকৃত বন্ধু। অনেক বন্ধু হওয়ার চেয়ে ভালো একজন বন্ধুই যথেষ্ট।
বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে বয়সের বাধা নেই। মা-বাবার সঙ্গেও সন্তানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হতে পারে। অভিভাবক হিসেবে মা-বাবার উচিত সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখা। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হলে বরং সন্তানদের বুঝতে পারা সহজ হয়। সন্তান কাদের সঙ্গে চলছে, বিপজ্জনক কিছু করছে কি-না তা দেখা প্রয়োজন। মা-বাবার বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ ও গাইডেন্স সন্তানকে সঠিক পথে রাখতে পারে।
এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবশ্য সবার জন্যই একই অভিধা- 'ফ্রেন্ড, বন্ধু'। বাস্তবে শত্রু হলেও তার জন্য এনিমি অপশন নেই। সেখানেও বন্ধুতার ক্ষেত্রে সতর্কতা প্রয়োজন। এ ধরনের বন্ধু কারও জন্য শত্রুর চেয়েও ভয়ঙ্কর হতে পারে। যেটা ব্যক্তির জীবনের শান্তি বিনাশ করবে। দিবসটি উপলক্ষে সেই শান্তির কথাই বলছে জাতিসংঘ। ব্যক্তিগত পর্যায়ে শান্তি থাকলে সামষ্টিকভাবেও তার প্রভাব পড়ে। ব্যক্তিগত শান্তিকে সমাজ, রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমেই এ দিবসের সার্থকতা।

 

ট্যাগঃ , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।