হোসাইন মোহাম্মদ দিদারের 'কাছে থেকো হৃদয়ের' ও 'সর্বাঙ্গে তোমার বিচরণ' দুটি কবিতার বই। তাকে প্রেমিক কবি বলা যায়। উভয় বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠায় বইয়ের নামের ওপর ব্র্যাকেটে তা পাঠকদের কাছে স্পষ্ট করেছেন। প্রথমটিতে লিখেছেন প্রেম ও দ্রোহের শ্রেষ্ঠ কবিতা নিয়ে। আর দ্বিতীয়টিতে লিখেছেন জীবন ও প্রেমের শ্রেষ্ঠ কবিতা নিয়ে। বলাবাহুল্য, কবির অসংখ্য কবিতা থেকে বাছাইকৃত শ্রেষ্ঠ কবিতাই বই দুটিতে স্থান পেয়েছে। তবে উভয়টিতেই প্রেম কমন। বইগুলো দেখে তাই কবি কিসের প্রেমিক তা খোঁজার চেষ্টা করি। 'তোমরাই ঋণী' কবিতায় পেয়েও যাই। তিনি লিখেছেন_ 'এই দিনমজুর, বস্তিবাসী না থাকলে/তোমাদের মিছিল জমবে না। জমবে না সমাবেশ। রক্তাক্ত করতে পারবে না/মিছিলে মিছিলে রাজপথ। তোমরাই ঋণী তাদের কাছে।' কবি দিনমজুরের কথা বলেছেন। তিনি আসলে মানবপ্রেমী। অবশ্য তাকে কেবল প্রেমের ফ্রেমে আবদ্ধ করা কঠিন। তিনি তার কবিতায় স্বাধীনতার কথা বলেছেন। বলেছেন গণতন্ত্রের কথা, স্বপ্নের কথা। মৃত্যুর কথাও এসেছে কবিতায়। ভালোবাসার কথা তো আছেই। কবি ও কবিতার বন্দনা গেয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তারুণ্যের জয়গান গাইতেও ভোলেননি। কবি নামক কবিতায় তা-ই স্পষ্ট হয়_ 'আমি রবির দলের তরুণ কবি'। তরুণ কবি দিদার নানা উপমা কবিতায় এনেছেন। সেসব তার কবিতার সৌন্দর্য আরও বাড়িয়েছে। তিনি লিখেছেন_ এতো দিন হৃদয় মহলের/সব দরজা-জানালা/খোলা ছিলো/ছিলো না কোনো প্রহরী। আরও লিখেছেন_ আমাকে সোনা ভেবে/ হাতে তুলে নিয়ে/আবার মাটির দলা মনে করে/ ছুড়ে ফেলে দিলে। এ রকম নানা জায়গায় অসাধারণ উপমা পাঠককে ধরা দেবে। কবি অবশ্য কবিতায় প্রকৃতির কথাও ভোলেননি। ভোলেননি দেশমাতৃকার প্রতি মানুষের দায়িত্বের কথা। তার কবিতা সাবলীল। যে কোনো বয়সের পাঠক পড়ে সহজে বুঝতে পারবেন। তিনি নানাভাবে কবিতা সাজিয়েছেন। একটার সঙ্গে আরেকটার তেমন মিল নেই। প্রত্যেকটি কবিতায় নতুন সুর, নতুন ভাবনা, নতুন দিকনির্দেশনা। সাধারণ পাঠক অবলীলায় এসব পড়ে যেতে পারবেন। তবে কোনো কোনো বোদ্ধার বিচারে তার সব কবিতা মানউত্তীর্ণ নাও হতে পারে। কয়েকটি কবিতা তিনি অন্যের স্মরণে, আরেকজনকে উৎসর্গ করে লিখেছেন। অনেকের কাছে তাও দৃষ্টিকটু হতে পারে। একটি কবিতার বইয়ে দুইয়ের বেশি এ ধরনের কবিতায় পাঠকও বিভ্রান্ত হতে পারেন। মাঝে কোনো কবিতায় ইংরেজি লাইনও এসেছে। উৎসর্গ যদিও কবির একান্ত ব্যাপার, তারপরও বলা যায় দুটি বইয়ের উৎসর্গ একটু অন্য রকম। তবে তরুণ কবি চেষ্টা করেছেন তার স্বকীয়তা ধরে রাখতে। বর্ণনাভঙ্গি অসাধারণ। মানুষের জীবনের অভিজ্ঞতা চমৎকারভাবে তার কবিতায় ফুটে উঠেছে। দুটি কবিতার বইয়ে মোট কবিতার সংখ্যা ৯৭ (৫৬+৪১)। কবিতার সব শিরোনামই ব্যতিক্রম। বিজ্ঞাপন, মুক্তি মিলবে, ইশতিহার, মন্ত্র, ঢেউ, ফেরিওয়ালা ইত্যাদি কবিতায় পাঠক হয়তো নিজেকেই খুঁজে পাবেন। অনেকে যখন দুঃখ-কষ্টে থাকে, বেদনায় জর্জরিত মানুষের আকুতি কী হতে পারে কবির লেখনী থেকে তিন লাইন দিয়ে শেষ করছি_ 'বেদনা তুমি ভূমিকম্পের মতো কম্পন সৃষ্টি করে আমাকে চুরমার করে দিতে পারো না।'