Mahfuzur Rahman Manik
সেবার পৃথিবী ও স্বেচ্ছাসেবা
ডিসেম্বর 5, 2015
Volunteer-1মানুষ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় বলেই হয়তো সেবার ধারণা এসেছে। এখানে একই সঙ্গে সবাই সেবক আবার সেবাগ্রহীতাও। একেকজনের প্রয়োজন একেকরকম। কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসকের কাছে যায়; চিকিৎসক রোগীর সেবা দেন; কিন্তু তিনিও হয়তো শিক্ষা সেবা নিতে শিক্ষকের কাছে যান। মানুষের প্রত্যেক কাজই বলা চলে একেকটা সেবা। সেবার বিনিময়ে মানুষ জীবন নির্বাহ করেন। পুলিশ নিরাপত্তা দেয়; ব্যাংকার গ্রাহককে সেবা দেন; সরকারি চাকরিজীবী নাগরিকের সেবা করেন; সাংবাদিক মানুষের কাছে সংবাদ পেঁৗছান। সেদিক থেকে কোনো পেশাই বড়-ছোট নয়। মানুষের প্রয়োজনেই পেশার সৃষ্টি। এসবই সেবা, এমনকি ব্যবসাও। আর যারা দেশ-সমাজ-জাতির নেতা তারা তো মূলত জাতির সেবক। মানুষ জনসেবার জন্যই তাদের নির্বাচিত করেন। স্বেচ্ছাসেবক এর বাইরে কিছু নয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে পার্থক্য হয়তো এতটুকু যে, স্বেচ্ছাসেবকরা স্বেচ্ছায় কোনো বিনিময় ছাড়াই সেবার কাজ করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয়তো সংঘবদ্ধভাবে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ হয়ে থাকে।
আজ সে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস। জাতিসংঘের উদ্যোগে প্রতিবছর ৫ ডিসেম্বর দিবসটি পালিত হয়। এ বছরের প্রতিপাদ্য_ দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ চেঞ্জিং. আর ইউ? ভলান্টিয়ার! অর্থাৎ পৃথিবী পরিবর্তন হচ্ছে, স্বেচ্ছাসেবক তুমিও কি! পরিবর্তিত পৃথিবীতে স্বেচ্ছাসেবকদের সেবা কর্মকাণ্ডে পরিবর্তন আনার কথাই এখানে বলা হচ্ছে। জাতিসংঘ অবশ্য সম্প্রতি নেওয়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) কথা বলছে। স্বেচ্ছাসেবকদের কর্মকাণ্ড যেন এসডিজির নতুন এজেন্ডার সঙ্গে যায়। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা আসলে কিছুই নয়_ ক্ষুধা, দারিদ্র্য, সমস্যামুক্ত একটা সুন্দর পৃথিবীর লক্ষ্যে পেঁৗছার কতগুলো কর্মসূচি। যেগুলো পরিবর্তিত পৃথিবীর আলোকে নেওয়া হয়েছে। সে কর্মসূচিগুলো যেন স্বেচ্ছাসেবকদেরও হয় সে কথাই বলছে জাতিসংঘ।
সেবার কথা বললে অনেকের চোখে ভাসতে পারে দুস্থ মানুষের ছবি। যাদের সাহায্য প্রয়োজন, তাদের কাছে গিয়ে জামা-কাপড় কিংবা খাদ্যসামগ্রী প্রদান নিশ্চয়ই সেবা। তবে সেবার কাজ ও পরিধি অনেক বিস্তৃত ও ব্যাপক। রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লা পরিষ্কার যেমন একটা সেবা আবার সংঘবদ্ধভাবে নদী-পরিবেশ-মানুষের উপকারে কিছু করাও সেবা। আমাদের দেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ রকম নানা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে। যাদের ব্রতই হলো সেবা করা। যারা হয়তো আরেক সেবামূলক পেশায় জড়িত কিন্তু তার বাইরেও একেবারে নিবেদিত হয়ে কোনো স্বার্থ ছাড়াই সময় পেলে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করেন। volunteering
মানুষ যখন কোনো পেশা বা কাজকে সেবা হিসেবে নেয়, তখনই তা সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়। সেখানে আন্তরিকতা, নিষ্ঠা থাকে। থাকে সেবার মনোভাব। একই কাজ চাকরি হিসেবে নিলে তার ফলও অন্য রকম হতে পারে। সেখানে পারিশ্রমিকসহ পাওয়া না পাওয়ার প্রশ্ন চলে আসে। একই সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবার ক্ষেত্রে জাতিসংঘ বলছে, আপনার কাজ হয়তো বিশ্বের কাছে কিছুই নয়, কিন্তু সেটা স্থানীয় সমাজের জন্য অনেক কিছু। সবক্ষেত্রে তাই প্রয়োজন সেবার মানসিকতা। সামাজিক পরিবর্তনে সেবার বিকল্প নেই। ভলান্টিয়ার কাউন্টস ডট ওআরজি ২০১৫ সালের স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের প্রতিবেদনে বলছে, পৃথিবীতে একশ' কোটিরও বেশি মানুষ স্বেচ্ছাসেবী। আমরা বলি, পৃথিবীর সব মানুষই স্বেচ্ছাসেবী। প্রত্যেকে ব্যক্তিগতভাবেও কোনো না কোনো স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করে। তবে হ্যাঁ, সংঘবদ্ধভাবে কাজ করলে তা যেমন গণনায় আসে, তেমনি পরিবর্তনের জন্য একার চেয়ে সামষ্টিক কাজের ফল দ্রুত আসে।
ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।